করোনা রোধে নগরবাসীর প্রতি চসিক মেয়রের সচেতনতামূলক বার্তা

সোমবার, এপ্রিল ১৩, ২০২০,১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
0
32

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বিস্তার রোধে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে এক জনসচেতনতা মূলক বার্তায় বলেছেন, ধৈর্য্য,সংযম,শৃংখলা,পরিচ্ছন্নতা ও আত্মসচেতনতা দ্বারা শুদ্ধাচারী জীবনযাপনেরর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সময় ঘরে থাকুন এবং নিজেকে, পরিবার,প্রতিবেশীসহ সকলের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

গতকাল গণমাধ্যমে প্রদত্ত এই বার্তায় তিনি করোনা ভাইরাসকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ ও বর্তমান অবধি অপ্রতিরোধ্য মরণ ব্যাধি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, করোনা অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবানু কনিকা। একে দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, এবং এর গতি বাতাসের চেয়ে দ্রুততর। গত ডিসেম্বর মাসের শেষে দিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও অতিদ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা অবিশ্বাস্য এবং অপ্রতিরোধ্য। উন্নত, অনুন্নত ও দরিদ্র নির্বিশেষে বিশ্বের ২৩০টি রাষ্ট্রের মধ্যে ২০৭ টিতে করোনা ভাইরাসের আগ্রাসী থাবা বিস্তৃত হয়েছে।

গতকাল অবধি বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭শত ৮২ জন। করোনা ভাইরাসের বিস্তারের প্রভাব মাসাধিকাল আগে থেকেই বাংলাদেশে পড়েছে। প্রথমে খুবই ধীরে হলেও ক্রমশ লাফিয়ে লাফিয়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষঙ্গের আশংকা মধ্য এপ্রিলেই করোনা ভাইরাসের উর্ধ উল্লস্ফলন ঘটবে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের ক্রম বিস্তারে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশংকা একেবারেই অমুলক নয়। এতে আমাদের ভয় ও আতঙ্কে মনোবল হারিয়ে কিংবর্তব্যবিমূড় হওয়ার কোন অবকাশ নেই। তাই যে যার অবস্থান থেকে আপদকালীন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি তাঁর সর্বাধিনায়ক। তাই তাঁর সকল নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এই যুদ্ধে অবশ্যই বিজয়ী হতে হবে। এই যুদ্ধের ভ্যানগার্ড বা অগ্রবর্তি বাহিনী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্তদের সেবা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ঝুঁকি ভাতা ও জীবন বীমার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আপনারা নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। তিনি আরো বলেন, বিগত কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এই বাংলায় নানাবিধ প্রাকৃতিক দূর্যোগ-বন্যা,ঘুর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস,দূর্ভিক্ষ,মঙ্গা এবং নানান যুদ্ধ বিগ্রহে লক্ষ লক্ষ প্রাণ বলিদান করে রুখে দাঁড়িয়ে আবারও এই জনপদের ভূমিপুত্রগণ কোমর সোজা করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে এক সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের আত্মবলিদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাঙালি জাতি সত্তার স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই যুদ্ধের পরও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদের লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত ছিল এবং এখনও চলমান আছে। আজ বৈশ্বিক করোনা মহামারি বিশ্ব মানব সভ্যতাকে গ্রাস করতে চায়। ইতোমধ্যে লক্ষ প্রাণ হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশেও এই থাবা বিস্তারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। সেই যুদ্ধে আমাদের কোন প্রতিপক্ষ নেই। দল-মত-বর্ণ-ধর্ম এবং ভাষা নির্বিশেষে আমরা সকলেই এক পক্ষ। আমাদের হাতিয়ার সুদৃঢ় মনোবল, জনসচেতনতা এবং সরকারি দিক-নির্দেশনা ও নিয়ম কানুন পালন। আমি লক্ষ্য করছি যে, এই আপদকালীন সময়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনও অনেকের মাথায় ঢোকেনি। আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা ও জীবনাচরণ অনুসরণ করা। করোনা নামক ভাইরাসমুক্ত হতে এখনও পর্যন্ত কোন কার্যকর প্রতিষেধক, ঔষধপত্র ও ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি। তবে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিস্কারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

তাঁরাই বলেছেন এই প্রতিষেধক আবিস্কার করতে গেলে কম করে হলেও দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাই বলতেই হয় বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং যতবেশি সময় ঘরে থাকা- এই প্রক্রিয়াটি আমাদের আপদকালীন ক্রান্তিকাল অতিক্রমের প্রধান অবলম্বন। তিনি এই প্রসঙ্গে আরো বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশই সামাজিক সংক্রমণ থেকে। তাই প্রত্যেককেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেকে অন্যের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এই দূর্যোগকালীন সময়েও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একটি অসাধু চক্র ত্রাণের জিনিসপত্র লুটপাট করার অপচেষ্টা চলাচ্ছে। এমনকি সরকারি বরাদ্দের চাল কৌশলে আয়ত্ব করে খোলা বাজারে বিক্রী করে মুনাফা লুটছে। এরা পাষন্ড। করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এদের দমন করা সময়ে দাবী। এই অশুভ শক্তিটিকে সরকারের খাদ্য বিভাগের কিছু অসত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদারদের কেউ কেউ ইন্ধন যোগাচ্ছে। এরাই ভয়ঙ্কর অপশক্তি। তাদের আইনের আওতায় এনে অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন,আপনারা যতক্ষণ সময় ঘরে থাকবেন এবং জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কখনই বের না হয়ে নিজেকে সুরক্ষা করুন – এটাই আমার প্রত্যাশা। শুধু রাষ্ট্র ও সরকার নয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং জনকল্যাণমুখী প্রচেষ্টার ফলে আমরা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব ইনশা আল্লাহ। জনসমাগম হয় এমন কোন সামাজিক,ধর্মীয়,সাংস্কৃতিক এমনকি বিয়ে-শাদি সহ যে কোন উৎসব ও অনুষ্ঠানাদী পরিহার করুন। তিনি তাঁর সচেতনতা মূলক বার্তায় আরো বলেন যে, এই সময়টা হলো মশা উপদ্রুত হওয়ার। মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। আমি একটা কথা বলতে চাই, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধন সম্ভব নয়। মশক উৎপত্তি ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ব্যক্তি ও সামাজিক উদ্যোগে চিহ্নিত করে ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে এই নগরীকে মশা মুক্ত করা সম্ভব। আরো একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মেগা প্রকল্প চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন। এর পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনী। দেখা যাচ্ছে চাক্তাই খালে এই কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে দেয়া হয়েছে। এই জমাট পানি মশা প্রজননের অন্যতম ক্ষেত্র। এই জমাট পানি পাইপ লাইন বসিয়ে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন এবং সেনাবাহিনীও তা করতে চান। তবে সময় ক্ষেপণ করলে মশক নিধন কার্যক্রম সফল হবে না।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গুরোগ এডিস মশা থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। এবং এডিস প্রজনন হয় পরিস্কার জমাট পানিতে। বাড়ীর যেখানেই এই জমাট পানি থাকে সেখান থেকে তা দুই-একদিন পরপরই সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও ঝোপ ঝাড় এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ তৈরী হবে তা সরিয়ে ফেলতে প্রত্যেক নাগরিককেই সচেতন হতে হবে।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে