[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
গতকাল ১২ অক্টোবর ২০২০ (সোমবার) বিকাল ৩:০০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীর উপর সহিংসতার ঘটনায় সংগঠনের প্রতিনিধিদল কর্তৃক ঘটনাস্থল সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা, ধর্ষণসহ সকল প্রকার যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মডারেট করেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, ৮০ দশক থেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে সংগঠন। বর্তমানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে তবে দেখা যাচ্ছে কালো শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশে। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তবে নারীকে দূর্বল ভেবে তার প্রতি শক্তির প্রদর্শন, মাদকের ব্যবহার, তরুণদের বেকারত্ব বৃদ্ধি, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতি কারণে কারণে দেশে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করছে। তবে এর মধ্যে সরকার কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডের শাস্তির বিধান করে খসড়া আইন প্রণয়ন কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করে আমাদের জন্য। ধর্ষণের প্রতিরোধে আজ দেশে যে গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেই আন্দোলনের পাশে সকলকে থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনেরএ্যডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী। তিনি বলেন সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা সহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ভয়াবহ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্যাতনের শিকার নারীর বাবা,চাচা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলা হয়েছে। তাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এর পক্ষ থেকে সবসময় পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।এ সময় নির্যাতনের শিকার নারীর বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী জানিয়েছেন।
পাশপাশি প্রতিনিধি দল নোয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন এবং বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো: হারুন অর রশিদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করে স্মারক লিপি প্রদান করেন এবং সাম্প্রতিক ভয়াবহ নারী ও কন্যা নির্যাতনের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। প্রেসক্লাবে ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। নির্যাতনের এই সকল ঘটনা বৃদ্ধির জন্য এবং সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার জন্য তিনি কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। ধর্ষকরা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে, যার ফলে নির্যাতনের শিকার নারীর পরিবার সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এর ফলে হত্যা, আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। মাদকের সহজলভ্যতা, সমাজের অস্থিরতা,তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার এবং এই বিষয়ে যথাযথ মনিটরিং-এর অভাব, নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অসততা, দুর্বলতা, অদক্ষতা,জবাবদিহীতার অভাব নারীর ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিচার কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়না, একই সাথে অপরাধ দমনেও কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। এ ছাড়া প্রশাসন এবং বিচার কার্যের সাথে জড়িত সকলের জেন্ডার সংবেদনশীলতারও অভাব রয়েছে। তিনি ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করতে সংগঠনের পক্ষে বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন।
অন্যদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বর্ণনায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাাতিক সম্পাদক রেখা সাহা বলেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে নির্যাতনের শিকার নারীর সাথে দেখা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও সম্ভব হয়নি। তবে নির্যাতিতার বাবার সাথে কথা বলে জানা গেছে অপরাধীদের চাপের মুখে থাকায় ঘটনা দেরিতে প্রকাশ পায়। কেবল তাই নয় গুলি করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। ৬টার পর নির্যাতনের শিকার নারীর সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিবেন বলে পুলিশ সুপার সময় নির্ধারন করে দিলেও রহস্যজনক কারনে থানার অফিসার ইন-চার্জ বিভিন্ন তালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। রাত ৮.৩০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও প্রতিনিধিদলকে নির্যাতনের শিকার নারীর সাথে দেখা করতে দেয়নি। জানা যায় নির্যাতনের শিকার নারী পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
সংগঠনের লিগ্যালএ্যডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আক্তার লাইলী বলেন দেশজুড়ে ঘটে চলা সহিংসতার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। প্রত্যন্ত এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এলাকা যত দূর্গম হয় তত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই সকল এলাকার মানুষের চিন্তাধারাও পশ্চাৎপদ হয়। ঘটনার শিকার নারীকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়, পরিবারও ঠিকমত যোগাযোগ করতে পারেনা, হয়রানির শিকার হতে হয়। তিনি ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করতে অপরাধীদের প্রতি এলাকাভিত্তিক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান, কেননা ধর্ষণকারীরা কোনো দলের হতে পারে না, কারো প্রতিবেশী হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা সহ ঢাকা মহানগরের নেত্রীবৃন্দ, সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তাসহ ৪০ জন উপস্থিত ছিলেন।