চীনে আলাদা করা হচ্ছে মুসলিম শিশুদের

শনিবার, জুলাই ৬, ২০১৯,৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
0
18

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

চীন সরকার সুকৌশলে পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াংয়ে আদিবাসী মুসলমান শিশুদের তাদের পরিবার, বিশ্বাস ও ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন করছে বলে দাবি গবেষকদের। বিবিসি জানায় একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্কদের বিশাল বিশাল বন্দীশিবিরে আটকে রাখা হচ্ছে । দেশটির সরকার প্রকাশিত কিছু তথ্য এবং বিদেশে বসবাস করা ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিবিসির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে তথ্যগুলো ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে হাজারো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বিশাল ক্যাম্পে  রাখা হয়েছে আটকে। বোর্ডিং স্কুল তৈরির বিশাল কার্যক্রম চলছে সেখানে দ্রুতগতিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু একটি শহরেই চারশতাধিক শিশুর পিতা-মাতা উভয়কেই বন্দীশিবিরে বা কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বিবিসি অনুমোদিত গবেষকরা মনে করেন, ওই শিশুদের ‘কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া শিশু সুরক্ষার’ প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে দরকার আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা হওয়ার । পাশাপাশি ওই অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ঠিক কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তাও দেখা দরকার। ‘আমরা যেসব প্রমাণ পেয়েছি তা শিশুদের পর্যায়ক্রমে তাদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে প্রচারণা চালানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।’

কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি এবং জিনজিয়াংয়ের ওপর এখন চীন সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কারণে ওই অঞ্চল থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য বের করা সম্ভব নয় বলে জানান গবেষকরা। কারণ, সেখানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয় বিদেশি সাংবাদিকদের । তবে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া উইঘুর মুসলমানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গেছে কিছু প্রমাণ । ইস্তাম্বুলে বড় একটি হলে লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষ তাদের অপেক্ষায় আছেন জীবনের গল্প বলার । তাদের হাতে ধরা সন্তানদের ছবি, যারা সবাই  নিখোঁজ হয়ে গেছে জিনজিয়াংয়ের বাড়ি থেকে । এরকম এক মা ছবিতে তার তিন মেয়েকে দেখিয়ে বলেন, ‘আমি জানি না এখন কে করছে তাদের দেখাশোনা । তাদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করতে পারছি না কোনোভাবেই ।’

তিন মেয়ে ও এক ছেলের ছবি হাতে আরেক মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমি শুনেছি তাদের এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ আলাদা আলাদাভাবে এরকম গবেষকরা ৬০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যারা জিনজিয়াংয়ে শতাধিক শিশু নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। নিখোঁজ শিশুরা তাদের সন্তান বা খুব কাছের আত্মীয়। শিশুরা সবাই চীনের উইঘুর মুসলমান সম্প্রদায়ের। জিনজিয়াংয়ের বৃহৎ আদিবাসী মুসলমান সম্প্রদায় উইঘুরদের সঙ্গে তুরস্কের ভাষা ও বিশ্বাসের মেলবন্ধন দীর্ঘদিনের। চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ লেখাপড়া, ব্যবসা, পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বা চীনের কঠোর এক সন্তান নীতি এবং ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে  যাতায়াত করত তুরস্কে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে তারা আটকা পড়ে আছে। তিন বছর আগে চীন সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধরে ধরে বন্দীশিবিরগুলোতে নিয়ে যাওয়া শুরু করে। চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে’ ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য উইঘুর মুসলমানদের দেওয়া হয় নানা শিক্ষা । কিন্তু নানা প্রমাণ বলছে, সেখানে শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস বা ধর্ম পালন এবং মুখঢাকা হিজাব পরার কারণে অনেককে ধরে আনা হয়েছে। জার্মানির গবেষক আদ্রিয়ান জেনজ বিশ্বের সামনে জিনজিয়াংয়ের মুসলমানদের গণহারে বন্দী করার পূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছেন। বিবিসি অনুমোদিত নতুন এই গবেষণায় সেখানকার হাজার হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে আসলে কি আচরণ হচ্ছে তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। গবেষক আদ্রিয়ান দেখেছেন, জিনজিয়াংয়ে স্কুল সম্প্রসারণের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। নতুন ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে বাড়ানো হচ্ছে ধারণক্ষমতা । এখন রাষ্ট্র অনেক শিশুর ২৪ ঘণ্টা অর্জন করেছে তদারকির সক্ষমতা । একই সঙ্গে তারা  ক্যাম্প তৈরি করছে জিজ্ঞাসাবাদের। এসবই মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু শিশুদের কিন্ডার গার্টেনে ভর্তির হার বেড়েছে৯০ শতাংশ ।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে