[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ প্রায়ই উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। বিশ্বে নানা অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত আর্থিক মন্দার পরও, গত ১০ বছর ধরে সমৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়ার বক্তব্যে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে চার দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্পেকটেটর ইনডেক্স ২০১৯ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ২৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। এ সময়ে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের ব্যাপ্তি ঘটেছে। যা ১৮৮ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে বাংলাদেশের জিডিপি’র আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা বেড়ে চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।”
দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নানান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উন্নয়ন কৌশল হিসেবে তার সরকার নজর দিয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়ের দিকে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাথাপিছু আয় সাড়ে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।”
বরাবরের মতো এবারও বাংলায় দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে এই পরিষদে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, “এই দুঃখ দুর্দশা সংঘাতপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ মানুষের ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নয়ন, শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের নেতৃত্বমূলক ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে আমরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে তা শুরু হতে যাচ্ছে। তার দর্শন ও চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়ে আগামী বছর জাতিসংঘে আমরা এ উৎসব উদযাপন করতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ্য করে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা ফিরে যাচ্ছে না‘ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ সমস্যার অনিশ্চয়তার বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই এ সংকটের সমাধান সম্ভব, যা মিয়ানমারকেই করতে হবে।’ সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম কারণ।’
বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশগুলোর কাছে জাতিসংঘই আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক; প্রতি বছরের মতো এবারো সেপ্টেম্বরে বিশ্বের বহুপাক্ষিক ফোরামের কর্ণধার হিসেবে বিবেচিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন চলছে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এবারের সাধারণ বিতর্ক পর্বে, অন্যান্য সরকার প্রধানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দেন শুক্রবার নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায়। এ নিয়ে ১৬ বারের মতো বিশ্বসভায় বাংলা ভাষায় তিনি তুলে ধরলেন উন্নয়নের বিস্ময় বাংলাদেশের গল্প।
টানা ২২ মিনিটের বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন বার্তাসহ নানা ইস্যু উঠে এলেও ঘুরেফিরেই প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। শেখ হাসিনা এ সমস্যা সমাধানে আবারও উত্থাপন করলেন ৪ দফা প্রস্তাব। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের নেতিবাচক আচরণে রোহিঙ্গারা ফিরছে না রাখাইনে। সমস্যাটি তাদের; সমাধানের দায়ও তাদেরই নিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিবেচনায় আনতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।’রোহিঙ্গারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে, এমন শঙ্কা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বিশ্ববাসীকে বিষয়গুলো অনুধাবন করতে হবে।’
এছাড়াও আনুষ্ঠানিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা স্বাস্থ্য নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতেও বাংলাদেশের সফলতার সূচকগুলো তুলে ধরেন সাধারণ অধিবেশনে।