ক্ষমতার দাপট ও অপরাজনীতি

শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯,১২:৩২ অপরাহ্ণ
0
557

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

ক্ষমতার বশবর্তী হয়ে চলছে সারাবিশ্ব। ক্ষমতা পেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ দুনিয়াতে একজনও নেই। সারা মানবজাতি অন্ধের মতো এই অদৃশ্য শক্তির পেছনে ছুটে চলছে।  হতে চাচ্ছে ক্ষমতাধর। আসলে কি এই ক্ষমতা?  এর কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ বা সংজ্ঞা আছে কি?  উইকিপিডিয়ার মতে, ‘ক্ষমতা শব্দটি ক্ষেত্র বিশেষে শক্তি, সামর্থ্য বা দক্ষতাকে নির্দেশ করে।’
ধনী থেকে গরিব পেশাজীবী থেকে দিন এনে খাওয়া মানুষ এই ক্ষমতা পাওয়ার আশায় ছুটছে। হোক তা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে। আর এই ক্ষমতা পাওয়ার জন্য মানুষকে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা মোক্ষম পথ ধরে এগিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষ রাজনৈতিক অঙ্গনকে পুঁজি করে ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিটি খাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের সামগ্রিক বিষয়বস্তু পরিচালিত হয় রাজনৈতিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করে। রাজনৈতিক পরিবেশ তথা রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলার আগে জানতে হবে এই রাজনীতির সংজ্ঞা সম্পর্কে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ‘রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যা দ্বারা নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে শিক্ষার এমন একটি শাখা যা রাজনৈতিক আচরণ শেখায় এবং ক্ষমতা গ্রহণ ও ব্যবহারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করে।’
কাজেই বলা যায়, রাজনীতি একটি দেশের উন্নয়ন ও গতিশীলতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে সমস্যা হয় তখন, যখন এই রাজনীতিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতার দাপটে অপরাজনীতির প্রয়োগ করা হয়। রাজনীতির ভাবমূর্তি নষ্ট করা বা প্রশ্নবিদ্ধ করাই হচ্ছে অপরাজনীতি। এই অপরাজনীতি করার সুযোগ আসে প্রতিষ্ঠিত কোনো দল বা সংগঠন হতে। যেহেতু ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেহেতু ক্ষমতার প্রয়োগ করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্যই এই অপরাজনীতি করে থাকে গুটিকয়েক নিচু মানসিকতার ব্যক্তিবর্গরা। যার সমস্ত প্রভাব পরে সংগঠনের উপর।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও কম নয়। যে ব্যক্তির নাম বা পরিচয় এক সময় কেউ জানত না, সেই ব্যক্তি হুট করে হয়ে যায় পাতি মাস্তান থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাডার। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমনসব অনৈতিক ও ঘৃণিত কাজ করে যাচ্ছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ করছে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা, প্রতিষ্ঠিত সংগঠন এবং দেশের সরকারের কার্যক্রমকে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কতিপয় ব্যক্তিরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অবৈধ জুয়া ব্যবসায় এবং মাদক সংক্রান্ত অভিযোগের দায়ে প্রমাণসহ অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত আছেন। এমন একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিবর্গের এইসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সংগঠন ও প্রশাসন। শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয় অবাক ও  বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকগণ। এমনকি সরকার প্রধান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সহযোগী দলের এমন কর্মকাণ্ডে। জানা যায়, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতেই এবং সরকার প্রধানের নির্দেশেই দলের কর্মীদের শুদ্ধিকরণের জন্য এমন অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকার  মাদক ও জঙ্গিবাদের মতই নিজদলে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন।

সরকার প্রধানের এমন পদক্ষেপকে দেশের জনসাধারণ সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন একমাত্র এমন কার্যক্রমই পারে দেশ থেকে ক্যাডার ও সন্ত্রাসী বাহিনীকে দমন করতে। উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীগণ যারা নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতি করেন তারা মনে করেন, এমন পদক্ষেপের মাধ্যমেই সম্ভব দলের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখা ও সেইসাথে মুখোশধারী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের চিহ্নিত করে দলকে কুলষিত মুক্ত রাখা।

তবে প্রশ্ন-থেকেই যায় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের উপর। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিবিদগণ প্রশ্ন তুলেছেন তাদের দিকে। এমনকি যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও তাদের দিকে এই প্রশ্নের আঙুল তুলেছেন। ‘কিভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে দেশে এমন সব সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হয়? কিভাবে অবৈধ ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয় দেশের সু-প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলো?’ এই প্রশ্নই এখন সকলের মুখে মুখে। দেশের পত্রপত্রিকা,  সংবাদ মাধ্যম, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের রিপোর্ট অনুযায়ী এর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত প্রভাবশালী নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমনসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যা রীতিমত অবাক করে দেওয়ার মত। জানা গেছে, প্রশাসনসহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক ব্যক্তিবর্গদের এমন সব কার্যক্রমে জড়িত থাকার কথা। অপরাজনীতি তথা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা। এইসব কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গিয়েছে।


দেশের সাধারণ মানুষ মনে করেন এইসব নৈতিকতা লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানই একমাত্র পারে আগামী দিনগুলোতে দেশকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাখতে নিশ্চয়তা প্রদান করতে। তারা যে অপরাধ করেছে তা শুধুমাত্র আইনের বিধান লঙ্ঘনই নয়, দেশের রাষ্ট্রপরিচালনা, আদালত ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সেইসাথে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমকে।ক্ষমতার দাপটে অপরাজনীতি করা ঘৃণিত এইসকল অপরাধীদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করে দেশের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। এসব কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিবর্গ ও মূলহোতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানই পারে দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে।

এই নিবন্ধের লেখক: শাহরিয়ার আহমেদ

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে