একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি’র বক্তব্য

বুধবার, জুন ১৯, ২০১৯,১:০৪ অপরাহ্ণ
0
217

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

মাননীয় স্পীকার,
আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে যিনি অসুস্থতা সত্বেও বাজেট উপস্থাপনের গুরু দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন নি। তার অসুবিধাটি পুষিয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাব সুলভ সাবলীল উপস্থাপনা দিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আর এটা আরও করছি এই কারণে যে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রা’য় যে বাধাগুলো রয়েছে যার কথা তিনি বাজেটেই উল্লেখ করেছেন তা তার দৃঢ় নেতৃত্বে উত্তরণের জন্য।

মাননীয় স্পীকার,
মাননীয় অর্থমন্ত্রী জিডিপি’র আকারে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ‘আট বছরের ব্যবধানে ৯২৮ ডলার থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৯০৯ ডলারে পৌঁছে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিএনপি-জামাত আমলের ৩.৫ বিলিয়ন থেকে ৩৩ বিলিয়নে উন্নীত হওয়া ও প্রবাস আয় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ বিলিয়ন হওয়া, বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৪৩৮৫ থেকে ২১,৬২৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হওয়ার যে চিত্র তুলেছেন তাতে সমৃদ্ধির পথে আমাদের এই অগ্রযাত্রা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু মাননীয় স্পীকার, আমাদের আর্থিক খাতের দুর্গতি এই পথে কাটা হয়ে রয়েছে। ব্যাংক খাতে লুটপাট, নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা কারও অবিদিত নয়। ঋণখেলাপীর দায়ে ব্যাংকগুলো নুব্জ। চলছে তারল্য সংকট। করের টাকা দিয়ে ব্যাংকের ঘাটতি মূলধন পূরণ করার জন্য বরাদ্দ এবারেও রাখা হয়েছে বাজেটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ভূমিকা দূরে থাক, ব্যাংকগুলোকে কার্যকর নজরদারি করতেও অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। নিজের অর্থই তারা সামাল দিতে পারেনি এবং তার কোন জবাবদিহিতা দেশবাসী পায়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক প্রদান, ব্যাংক মালিকদের আবদারে ব্যাংক আইন সংশোধন করে ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক মালিকানার হাতে তুলে দেয়া, একই ব্যক্তি একাধিক ব্যাংকের মালিক বনে ব্যাংক খাতকে নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যাংক মালিক এসোসিয়েশন কর্তৃক সিআরআর নির্ধারণ করাÑ এসবই ব্যাংক খাতে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তারা ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার এক অংকের উপর না রাখার বিষয়ে কথা দিয়ে আসলেও তারা সে কথা রাখেনি কেবল, ঔদ্ধত্যভাবে বলেছে ‘হুকুম দিয়ে সুদের হার ঠিক করা যায় না।’ মাননীয় স্পীকার, মাননীয় অর্থমন্ত্রী ব্যাংক খাতে সংস্কারের জন্য কিছু কথা বলেছেনÑ তাও ভবিষ্যত বাচক। ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাবকেও তিনি আলোচনা সাপেক্ষ রেখে দিয়েছেন। অপরদিকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী’দের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেও, মাত্র কয়েকদিন আগেই খেলাপী ঋণ আদায়ে তার মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ঐ ঋণ খেলাপীদের বরং পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হাইকোর্ট এর উপর স্থগিতাদেশ না দিলে মে মাস থেকে সেটা কার্যকর হত। মাননীয় স্পীকার, এ বিষয়ে গত অধিবেশনে আমি ৬৮ বিধিতে আলোচনার জন্য নোটিশ দিয়েছিলাম। আপনার অনুমতি পাইনি। সংসদে আলোচনা হলে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হত না। সে সময় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আর এক টাকাও ঋণখেলাপী হবে না। আর ঐ প্রজ্ঞাপনের এক মাসের মধ্যে ঋণখেলাপীর পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকার উপর ছাড়িয়ে গেছে যা এই বাজেটের পরিমাণের এক পঞ্চমাংশ। আর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী কিভাবে নির্দিষ্ট হবে তা জানি না। আমি বিনীতভাবে বলতে চাই সাবেক অর্থমন্ত্রী যেমন ব্যাংক সংস্কার করতে পারেন নাই, এবারেও এ নিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। কারণ ওরাই অর্থনীতির বর্তমান নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। সে কথায় পরে আসছি।
মাননীয় স্পীকার, বাজেটের ঘাটতি অর্থ পূরণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ টাকা সংগ্রহের যে কথা বলা হয়েছে তাতে ব্যাংকের তারল্য সংকট আরও বাড়বে। বেসরকারি বিনিয়োগ আরও কমে যাবে। কর্মসংস্থান হবে না। এসবই একই সূত্রে গাথা। মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন পুজিবাজারের কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। সাবেক অর্থমন্ত্রীও বলেছিলেন তার হাত এত লম্বা নয় যে পুজিবাজারের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এ কারণেই খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় নাই। এবারও ঐ অপরাধীদের চিহ্নিত না করে পুঁজিবাজারের জন্য যে ব্যবস্থাদির কথা তিনি বলেছেন তা কতখানি কার্যকর হবে সেটা দেখার বিষয়।
মাননীয় স্পীকার, অর্থমন্ত্রী বলেছেন আমাদের রাজস্ব আহরণের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তিনি এর থেকে বেরিয়ে এসে রাজস্ব জিডিপি অনুপাত বর্তমানের ১০ শতাংশ থেকে দুই বছরে ১৪ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন। করের ক্ষেত্র বিস্তৃত করার কথা বলেছেন। এর জন্য তাকে ধন্যবাদ। কিন্তু মাননীয় স্পীকার বাজেটে এই রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে ধনীদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি খালি চোখে দেখা যায়। এর জন্য অর্থনীতিতে অভিজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই। সম্পদ করের সার চার্জ, অপ্রদর্শিত আয় দিয়ে অর্থাৎ কালো টাকা দিয়ে জমি ফ্ল্যাট কেনার বিশেষ সুবিধা দান, বিপুল পরিমাণ পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার কোন প্রক্রিয়া না থাকা এসবই যাদের জন্য তারা হচ্ছে এ দেশের ধনীরা। আর দেশের বিকাশমান মধ্যবিত্ত এক্ষেত্রে বিশেষ চাপের মধ্যে থাকবে। অপ্রত্যক্ষ কর এখনও প্রধান যা সাধারণ মানুষ বহন করে। তিনি বলেছেন, সাধারণ পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু চিনি, ভোজ্য তেল, এলপিজি, প্লাস্টিক সামগ্রী, এলুমুনিয়ামের হাড়ি-পাতিল এসবই তো মধ্যবিত্তের গৃহস্থালীর জিনিস। অবশ্য তিনি গরিব মানুষের রুটি আর কেককে অব্যাহতি দিয়েছেন। তার জন্য তাকে সাধুবাদ।
মাননীয় স্পীকার, পার্লামেন্টের ধরাবাহিক বাজেট বক্তৃতায় এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবে আমি বারবার বলে এসেছি দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, তাকে অস্বীকার যে করে সে হচ্ছে হয় অন্ধ, নয় জেগে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু যে সত্যটি একই সময় উচ্চারণ করেছি তা’হল উন্নয়নের ফল মাত্র কিছু লোক পাচ্ছে। জনগণ পাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার বিএনপি-জামাত আমলের ৪০.৩ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। হত দরিদ্রের হার নেমেছে ১১ শতাংশে। কিন্তু এখনও ৪ কোটির উপরে লোক দরিদ্র॥ দু’ কোটি পুষ্টি পায় না। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৯১-৯২ অর্থ বছরে বাংলাদেশের সব চেয়ে ধনীর হাতে ৫% শতাংশের হাতে ছিল মোট সম্পদের ১৮.৮৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.৮৯ শতাংশ। আর এই সময়ে সবচেয়ে গরিব ৫% শতাংশের হাতে ছিল ১% শতাংশের কিছু বেশি সম্পদ। সেটা নেমে দাঁড়িয়েছে ০.২৩% শতাংশ। অর্থাৎ একই সময় শীর্ষ ৫% শতাংশের সম্পদ বেড়েছে ১২১ গুণ। আর যেটা গুরুত্বপূর্ণ যে এসজিডিতে আমরা বলছি কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না,’ তখন গত পাঁচ বছরে এই বৈষম্যের পরিমাণ আরও বেড়েছে। সম্পদ পুঞ্জিভূত হয়েছে কিছু হাতে। একটি সংখ্যাল্পদল সৃষ্টি হয়েছে যারা ‘সুপার ধনী’, এমনকি চীনের ধনীর সংখ্যা তুলনায়। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ ধনী মোট সম্পদের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এরা মূলতঃ ‘রেন্ট সিকার’। ক্ষমতার চারপাশে বলয় গড়ে তুলে তারা বিভিন্ন ধরনের লুণ্ঠন, দখল-বেদখল, জোর-জবরদস্তির মারপ্যাচের মাধ্যমে। দেশের সব ব্যাংক, বীমা, আবাসন, এমনকি প্রবাসে লোক পাঠানো এসবই এদের হাতে। কেবল ধনী দরিদ্রই নয়, গ্রাম-শহর, অঞ্চল ভিত্তিক বৈষম্য রয়েছে দেশে। আমি আনন্দিত বাংলাদেশের যে জেলাগুলো দারিদ্রসীমার এখনও অনেক উপরে। যেমন বরিশাল, তার তথ্যভা-ার করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মাননীয় স্পীকার, সাবেক অর্থমন্ত্রী এ কথা ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসলেও তার সর্বশেষ বাজেট বক্তৃতায় শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছিলেন যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ন্যায্যতা ও সমতার দিকে দৃষ্টি দেয়া যায় নাই। এ কাজের জন্য ভবিষ্যতের জন্য রেখেছিলেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী অসমতা দূর করার লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কৌশলের কথা বলেছেন। বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচি বৃদ্ধির জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। কিন্তু মাননীয় স্পীকার সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচির বরাদ্দ এখনও সমুদ্রে শিশির বিন্দু মাত্র। আর অর্থমন্ত্রী অন্য যে সব কৌশলের কথা বলছেন যেমন কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধির সাথে তা সংগতিপূর্ণ নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি কর্মসংস্থান হবে বলে বলা হলেও তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা অনুপস্থিত।
মাননীয় স্পীকার,
দেশের অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কেবল বাংলাদেশেরই নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। ’৭৫ পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান যে লুটপাটের অর্থনীতির যাত্রা শুরু করেছিল আশির দশকে এরশাদ আমলে তা ক্রম পরিপুষ্টি লাভ করে। আর একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বায়ন ও নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতি বিশ্ব জুড়ে লুটেরা ধনিকদের একাধিপত্য কায়েম করেছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদ্বয় জোসেফ স্টিগলীজ ও পল ক্রুগম্যান এবং সেই সাথে বুদ্ধি বৃত্তিক জগতের গুরু নোয়াম চমস্কি সবাই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বলছেন of the 1%, for the 1%, by the 1%|’ মাননীয় স্পীকার বাংলাদেশও সেই নীতি অনুসরণ করে এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে তাতে এদেশের অর্থনীতি সম্পর্কেও যদি বলি Ôof the 5%, for the 5%, by the 5%’ সেটা বড় ভুল হবে না। এই মারাত্মক ‘উন্নয়ন প্রবণতা’ থেকে অর্থনীতিকে বের করে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এই বৈষম্য, দারিদ্র্য, বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এবং জীবনের শেষ ভাগে এসে এই লুটপাটের অর্থনীতি সম্পর্কে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেনÑ সেটা হলে হবে তার দ্বিতীয় মৃত্যু।
মাননীয় স্পীকার,
জিয়া-এরশাদ প্রবর্তিত কালোটাকা সাদা করার বিধান ’৯০ পরবর্তীতে কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকলেও, পরে আবার তা চালু হয় শাসকশ্রেণীর প্রয়োজনেই। বেগম খালেদা জিয়া, সাইফুর রহমানের কালোটাকা সাদা করার কথা তো আমরা সবাই জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন টাকা যাতে পাচার না হয় তার জন্য বিনিয়োগে স্ট্রীমিং করতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ যাবত এ ধরনের ব্যবস্থা থেকে বিশেষ সাফল্য পাওয়া যায়নি। এতে ফ্ল্যাট-জমির দাম মধ্যবিত্তের আওতার বাইরে চলে যাবে। আর অনৈতিকতাই উৎসাহিত হবে।
মাননীয় স্পীকার,
আমি বরাবই বলে এসেছি এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মূল শক্তি এদেশের কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক, নারী ও মধ্য উদ্যোক্তারা। সরকারের কিছু নীতি সহায়তা এক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। তার প্রধান হচ্ছে কৃষি। আমি এজন্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেই কৃষক কৃষি কার্ডের মাধ্যমে কৃষক উপকরণে ও ব্যাংক একাউন্ট খোলার মধ্য দিয়ে সরকারের প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের সহায়তা পেলেও তার ফসলের দাম নিয়ে সব সময় বিপদে থেকেছে। এবার তা এমন প্রকট হয়েছে যে কৃষক মনের ক্ষোভে ক্ষেতে আগুন দিয়েছে। কর্তাব্যক্তিরা এর দায় নিজেরা না নিয়ে খেতমজুরদের উপর চাপিয়েছে। বলছে কামলার দাম বেশি বলেই কৃষক ধান বেচে লাভ করতে পারে নাই। অথচ সব দেশেই কৃষকের পণ্য মূল্যের উপর প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হয়। পাশের দেশ পশ্চিম বাংলায় যেখানে কুইন্টাল প্রতি ধানের বাজার মূল্য যখন কুইন্টাল প্রতি ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকা তখন সরকার কুইন্টাল প্রতি ১৭৫০ দামে ৫ লাখ টন ধান কিনেছে। আর বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে যা তার উৎপাদন খরচের সমান মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টন ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাও মাঠে নামে বহু পরে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আরও ২.৫০ লাখ টন ধান কেনা হবে এবং সংরক্ষণের জন্য ২০০টি প্যাডি সাইলো স্থাপন করা হবে। কিন্তু কৃষিমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এই লাভের গুড় পিঁপড়া অর্থাৎ মধ্যসত্ত্বভোগী আর দলীয় লোকেরা খেয়ে যাবে। এজন্য ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় কৃষক সমিতি ধান ক্রয়ে মূল্য সহায়তা প্রদান, প্রতি উপজেলায় প্যাডি সাইলো স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। তারা কৃষকদের উৎপাদক সমবায়ে সংগঠিত করে উপকরণ, ধান ক্রয় ও সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছে। এটা নতুন বিষয় নয়। সংবিধান বলছে। আর বঙ্গবন্ধু বাধ্যতামূলক সমবায়ের কথা বলেছিলেন যা আওয়ামী লীগ একেবারেই ভুলে বসে আছে। ভুলে বসে আছে ভূমি সংস্কারের কথা যা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা ছিল। সিলিং নির্ধারণ, বর্গাচাষীদের বর্গাসত্ব ও ফসলের ভাগ নির্ধারণ করে ভূমি সংস্কার করতে হবে।
খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধিতে অখুশী হবার কোন কারণ নাই। তবে ভুলে গেলে চলবে না এটা একেবারেই মৌসুমী ব্যাপার। বছরের সাত-আট মাস তাদের কাজ থাকে না। এজন্য ভারতে যেমন ১২০ থেকে ১৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, এদেশেও তেমনি ৪০ দিনের কাজকে সে পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে। অর্থমন্ত্রী সার্বজনীন পেনশন স্কীমের কথা বলেছেন। এই স্কীম প্রথমে চালু করতে হবে খেতমজুর ও শহরের শ্রমজীবীদের জন্য। আর এসব করতে খেতমজুরদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য রেশনিং, বিশেষ করে গ্রামীণ শ্রমজীবী ও শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
মাননীয় স্পীকার,
গার্মেন্টস আমাদের বৈদেশিক আয়ের প্রধান সূত্র। সেই রপ্তানি বাড়াতে মালিকদের ২২৮৫ কোটি টাকা প্রণোদনার জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হলো। কিন্তু শ্রমিকরা মজুরি চাইলেই ঘটে কর্মচ্যুতি আর মামলা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মালিকরা সেখানেও প্রতারণা করে বেসিক বেতন কমিয়ে দিয়েছিল। শ্রমিকরা যখন বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামলো তখন তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ দিয়ে ১২ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। ৬ হাজারের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে মামলা। ইতিমধ্যে বহুজনই জেল খেটে এসেছে। পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া হপ্তা পাওয়া জন্য দিনের পর দিন ধর্মঘট-অবরোধ করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঈদের আগে ১৩২ কোটি টাকা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে কি হবে কেউ বলতে পারে না। ঐ শ্রমিকদের গ্রাচ্যুইটি-প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বছরের পর বছর বাকী পড়ে আছে। সংসদে মন্ত্রী বলেছেন সুদানে গন্ডগোল হচ্ছে বলে ৬০০ কোটি টাকার রপ্তানি আটকে গেছে। মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার তাপস ঠিকই বলেছেন ৫ লাখ টাকার উপরে বাজেট থেকে এ টাকা দেয়া যেত নিশ্চয়ই। প্রধানমন্ত্রী পাট শিল্প তুলতে চান, আর অর্থ মন্ত্রণালয় বাদ সাধে। নির্মাণ শ্রমিকদের ১২ দফা দাবি আজও পূরণ হয়নি। গার্হস্থ্য নারী শ্রমিকদের নীতিমালা প্রণীত হলেও কার্যকারীতা নাই। আর প্রতিশ্রুত আইন তো দূরের কথা।
নারীদের জন্য বাজেটে বেশ কিছু ভাল উদ্যোগ রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন বিশ্ব স্বীকৃত নেতা। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা, হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, কাজের জায়গায় নিরাপত্তা, নারী শ্রমিকদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য হ্রাস এসব ঐ ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নেবে।
মধ্য উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে ব্যাংক ঋণের ২৫ শতাংশ ১ কোটি টাকার কম পুঁজি সম্পন্ন ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে দেয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, গ্রুপব্যাংকিং সিস্টেমে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে ঋণ সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং যুবক উদ্যোক্তাদের যে ‘ষ্টার্ট আপ’ পুঁজির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা আরও বৃদ্ধি করতে অর্থমন্ত্রীকে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
মাননীয় স্পীকার, আমি তরুণ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই প্রায় শতভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য। এখন প্রয়োজন সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন। তবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবকে আমি সমর্থন করতে পারছি না। কেবল গ্যাস খাতে দুর্নীতি বন্ধ করেই তিনি আমদানীকৃত এলএনজি’র মূল্য সমন্বয় করতে পারেন। বাজেট অধিবেশনের পর সংসদে এসব বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব রাখছি।
মাননীয় স্পীকার, বাজেট বক্তৃতার শুরুতে পার্বত্য অঞ্চলকেও বাদ রাখা হয়নি বলে তিনি যেকথা বলেছেন বাজেট বক্তৃতায় সে সম্পর্কে কিছু খুজে পেলাম না। দেশের এক দশমাংশ ভূ-খ- এই পার্বত্য জেলা সমূহের ভূমি কমিশন কার্যকর করতে হবে এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন করতে হবে।
মাননীয় স্পীকার,
অর্থমন্ত্রী এমপিও প্রদানের সুসংবাদ দিয়ে বাজেট বরাদ্দের বিষয় শুরু করেছেন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের মেইজী যুগে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। মেইজী রাজত্বের সময়ের মতো বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে বলেছেন। এ বিষয়ে আমাদের শিক্ষককুলের প্রতিক্রিয়া আমি জানি না। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারত। হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ধর্মবাদী দল এর বিরোধীতা করেছে মাত্র। জানি না এখানেও আপোষ হয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষায় যেমন পরিবর্তন আনতে হবে মাদ্রাসার শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্বীকৃতি দিলেও, তারা নিচের দিকে কোন পরিবর্তন আনতে রাজী নয়। এমনকি জাতীয় সঙ্গীতকে রবীন্দ্র সঙ্গীত বলে আখ্যা দিয়ে সে নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবে বলেছে। দাবি করেছে বেফাক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের হুজুরের কথা ছাড়া সরকারের কোন নির্দেশ মানবে না।
গত অধিবেশনে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমি যে মন্তব্য করেছিলাম তা নিয়ে এক মাননীয় সংসদ সদস্য আমাকে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার কথা বলেছিলেন। আর বলেছিলেন ঐ সব শিক্ষায়তনের শিক্ষার্থীদের রক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তের চেয়ে পরিশুদ্ধ। মাননীয় স্পীকার আমি নুসরাত হত্যা, ঐ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন, বালকদের উপর বলৎকারের যে সব খবর প্রকাশ হয় প্রতিদিন সে কথা বলব না। কারণ এটা কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয় এখন এক চরম সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই সব ব্যক্তিরা যারা আমার কথার জন্য ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ করেছে, আমাকে মুরতাদ ঘোষণা করেছে তারা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কি ধরনের উক্তি করেন ইউটিউট খুলে তা শোনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। শবেবরাতের রোজা হারাম, শাড়ী পরে নামাজ হয় না, ওয়াজ মাহফিলে এরকম ফতোয়া হরহামেশা দিচ্ছে। পঞ্চগড়ে খতমে নবুয়তের সম্মেলনে আহমদিয়াদের তো বটেই, আহলে হাদিস, পীরতন্ত্রী, তবলিগের সাদপন্থীদের সকলকেই কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ইউটিউবে প্রতি মুহূর্তে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করছে। মাননীয় স্পীকার আমি এ নিয়ে বেশি কথা বলব না। আমার কথার প্রমাণ হিসেবে দেশবিরোধী, সরকারবিরোধী, সংস্কৃতিবিরোধী, সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক ইউটিউবে প্রচারিত কয়েকটি বক্তব্যের ২টি পেন ড্রাইভ আপনার ও আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রদান করছি। সাইবার সিকিউরিটি আইনে সাংবাদিকসহ যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু এদের করা হয় না। জামাত রাজনৈতিকভাবে পরাজিত, বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত। কিন্তু এদের মাধ্যমেই সমাজ জুড়ে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বিস্তার ও একটি উত্তেজনাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অশান্তি সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধু এ কারণেই ধর্মকে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করে সংবিধানের বিধান করেছিলেন। আমরা সেই জায়গায় থাকতে পারি নি।
মাননীয় স্পীকার, এই সংসদে আমি বলেছিলাম বিএনপি-জামাত নির্বাচনে আসলেও, নির্বাচন ভ-ুল করতে সব কৌশলই প্রয়োগ করেছিল। তাতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন ও সংসদের অবৈধতার কথা বলছে। নির্বাচনে অতি উৎসাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি নির্বাচনকে অশুদ্ধ ও অবৈধ করে না। আর করে না বলেই বিএনপি-গণফোরামের বন্ধুরা আজ জল ঘোলা করে হলেও সংসদে এসেছে।
কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নাই। বরং নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটি আমাদের করতে হবে। কারণ রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পাচদফা উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলের অভিজ্ঞতা, এমনকি আওয়ামী লীগ নিজ দলের প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা করুণ। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেও কোন লাভ হচ্ছে না। বরং তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এর ফলে নির্বাচন ও সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে ভোট দেয়ার ব্যাপারে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এটা নির্বাচনের জন্য কেবল নয়, গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক। মাননীয় স্পীকার, সেই ’৬৩ সাল থেকে ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। সর্বশেষ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাতের ভুয়া ভোটার তালিকা আর নীল-নক্সার নির্বাচনের বিরুদ্ধে ১৪ দল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও জনগণের ভোট প্রয়োগের আন্দোলনে সফলতা অর্জন করেছিলাম। আবার যেন এই বৃদ্ধ বয়সে সবটাই পুনঃমুষিকভব করতে না হয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ যদি দেশের উপর নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, তা’হলে রাজনৈতিক দল নির্বাচন কেবল নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। এটা সবার জন্য যেমন, আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য।
মাননীয় স্পীকার,
২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত দুঃশাসন, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদসহ ২৩ দফা দাবি দিয়ে ১৪ দলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। ১৪ দলের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার কারণে আজও আমরা চৌদ্দ দলে ঐক্যবদ্ধ আছি। প্রধানমন্ত্রী চৌদ্দ দলের শরীকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকে তা’হলে কেউ সংগঠন নিয়ে, আন্দোলন নিয়ে, ভোট নিয়ে এগুতে পারে না। জোটে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ এই সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকার বলছে। এর জন্য দুঃখবোধ নাই। কোন প্রত্যাশাও নাই, যে ইঙ্গিত মাঝে মাঝেই করা হয়। একটিই প্রত্যাশা, যাতে স্বাধীনতা ঘোষণার সাম্য, মানবিক মর্যাদাবোধ ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাই। দেখতে পাই একটি সত্যিকার অর্থেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ।
আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। তার প্রতি জানাই শ্রদ্ধা। বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহসী নেতৃত্ব ও সত্যানুসন্ধান বঙ্গবন্ধুকে আরও শক্তিশালী রূপে হাজির করেছে। মাননীয় স্পীকার, আমরা যেন মুষ্টিমেয় পাঁচজনের অর্থনীতি, আমলা-বড়লোকদের উপর নির্ভরতা, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা এবং অসহিষ্ণু আচরণ দিয়ে তার স্বপ্নের সমাধি না ঘটাই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন, কেবল শতবর্ষেই নয়, হাজার বছরের পরও তিনি থাকবেন বাঙ্গালির হৃদয়ে, আমাদের কর্মধারার মধ্য দিয়ে। তাকে হাজার সালাম। মাননীয় স্পীকার আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে