শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উপহার

রবিবার, নভেম্বর ২৯, ২০২০,১:০২ অপরাহ্ণ
0
77

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক এমপি বলেছেন, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার চট্টগ্রামবাসীর জন্য প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনন্য উপহার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের মস্তিষ্ক প্রসূত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে বেকারত্ব দূর হবে, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী হবে, একই সাথে তথ্য প্রযুক্তিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যাবে। এই সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান অর্জন করে বেরিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে যেনো ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে একই জায়গায় একটি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের জন্য শুরু হবে।

তিনি গতকাল সকালে নগরীর কালুরঘাটে বিএফআইডিসি রোড সংলগ্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেনের এক দশমিক ৭১ একর জায়গায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার এন্ড ইনকিবিউশেন সেন্টারের ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়য়ে আইওটি, রোপোটিক্স, সাইবার সিকিউবিটিসহ উচ্চতর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউরেটর স্থাপন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে চুয়েটে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।একই সাথে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করে একটি সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবার পর বন্দর নগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম আইটি বিজনস হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।

তিনি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা সমূহ উপস্থাপন করে বলেন, তিনি মানুষের ৫টি মৌলিক অধিকার সংবিধানে সংরক্ষণ করে গেছেন। তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিকে গুরুত্ব দিতেন। তাঁর জীবদ্দশায় ৩৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। গণস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনা ছিলো। সর্বোপরি কৃষক শ্রেণিকে সমবায়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চোখে বাংলার প্রধান দুটি সম্পদ হলো সোনার মাটি ও সোনার মানুষ। এই দু’টি সম্পদ দিয়েই তিনি তাঁর আরাধ্য সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ বছর ধরে বাংলাকে দারিদ্র ও ক্ষুধা থেকে মুক্তির লড়াই করে সোনার বাংলা বাস্তবায়নে নিবেদিত। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশর স্বপ্নদ্রষ্টা। আজ তথ্য প্রযুক্তিই আমাদের জেগে ওঠার শক্তি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেছেন, প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সরকার এজন্যই একটি জ্ঞান ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গড়ে তুলতে কাজ করে চলছে। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আমরা অনেক দৈনন্দিন কাজ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করতে পারছি। আমাদের রপ্তানী খাতেও ডিজিটাল ডিভাইস অবদান রাখতে পারে। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণ-তরুনীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সযোগ সৃষ্টি হবে। আজ প্রশিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তাদের চাকরী খুঁজতে হবে না। এবং নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকরী দিতে পারবে। তিনি আরো বলেন, হাজার কোটি টাকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ পাশ করে অনেক শিক্ষিত বেকার তৈরী হচ্ছে। অথচ অনেক কম টাকায় প্রতিষ্ঠিত বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের বেকার থাকতে হয় না। তারা কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ জুটিয়ে নিতে পারেন। হাতে-কলমে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা থাকায় নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পথ সুগম হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রামে এতোদিন যে গতানুগতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে এসছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরদে আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্ত তৈরী করে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন চট্টগ্রামবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। এই আটি ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে আইটি/আইটিইএস খাতে চট্টগ্রামের যুব সমাজের আত্ম-কর্মসংস্থাপনের ব্যঅপক সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে আইসিটি বিভাগ থেকে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম দেশের সেরা ডিজিটাল সিটি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, চান্দগাঁ অবহেলিত ছিলো। এখানে বিএনপি’র একজন শীর্ষ নেতা মন্ত্রী. এমপি থাকলেও নিজে একটি মোবাইল কোম্পনী করে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে। এটা তাঁর মনোপলি ব্যবসা। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইলকে সবার জন্য সহজ লভ্য করেছেন।

অনুষ্ঠানে শেষে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয় এবং চট্টগ্রাম সফটওয়্যার কেনোলজি পার্কে চারটি প্রতিষ্ঠানেক স্পেস বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করা হয়। আইসিটি বিভাগের অপর একটি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে প্রায় ২০০০ বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ৫৭০জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে যাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে ১২ জনকে ল্যাপটপ প্রদান করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক। এসময় বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী একটি ই-লার্নিং প্লাটফর্ম, জব পোর্টাল ও ডাটা বেইস উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলেন জানান তিনি। উল্লেখ্য আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে দেশের আইটি স্থানে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, নাটোর, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, বরিশাল ও মাগুরায় স্থাপন করা হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৫৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়।

ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জামসেদ খন্দকার এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে