মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম,মাদারীপুরে শাস্তি ও নাটোরে ৭ আটক

শনিবার, জুন ২৯, ২০১৯,৪:১০ পূর্বাহ্ণ
0
71

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সোহেল রানাকে অবগত করা হলে তিনি বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপারের দেহরক্ষীসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাটোরে কনস্টেবল নিয়োগে একটি জালিয়াতচক্রের হোতাসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

মাদারীপুরের ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশের মধ্যে দেহরক্ষীসহ দুজনকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। বাকি দুজনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান মাদারীপুরের পুলিশ সুপার।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অপরাধীদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের দেহরক্ষী পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান সুমনকে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের টাকাসহ আটক করা হয়। একই অপরাধে পুলিশ লাইনসের মেস ম্যানেজার জাহিদ হোসেনকে আটক করা হয়। পরে দুজনকেই ঢাকা সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর গোলাম রহমান ও পুলিশ লাইনস হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালার কাছ থেকেও ঘুষের টাকা উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাটি গত সোমবার রাতে হলেও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কয়েক দফায় মাদারীপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া ও পিআর) সোহেল রানাকে মাদারীপুরের সাংবাদিকরা অবগত করলে তিনি আটকের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে বৃহস্পতিবার রাতেই মাদারীপুর পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিষয়টি অবগত করেন।

এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সোহেল রানা মোবাইল ফোনে মাদারীপুরের সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ হিসেবে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। আমরা সুস্থ এবং নির্ভেজাল নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য যা যা করা দরকার পুলিশ হেডকোয়ার্টার তা করেছে।’

পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৪ জুন মেস ম্যানেজার জাহিদকে ঘুষের টাকাসহ আটক করে পুলিশ পাহারায় ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন একই অভিযোগে এসপির বডিগার্ড নুরুজ্জামান সুমনকে তিন লাখ টাকাসহ আটক করে ঢাকা পাঠানো হয়। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় প্রতারণার অভিযোগে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর গোলাম রহমান ও পুলিশ লাইনস হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত চলছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, মাদারীপুরে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় গত ২২ জুন শারীরিক ও ২৩ জুন ছিল লিখিত পরীক্ষা। পরের দিন ফল প্রকাশ নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। অভিযোগ ওঠে, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল মোটা অঙ্কের উেচাকের বিনিময়ে অনেক প্রার্থীকে চাকরি দিয়েছে।

নাটোর : নাটোরে পুলিশে নিয়োগের কথা বলে জালিয়াতির দায়ে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে জালিয়াতচক্রের মূল হোতা বড়াইগ্রাম উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের সাইদুল মণ্ডলের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে রনিও রয়েছে। নিয়োগ জালিয়াতি করেই রনি বিশাল অট্টালিকা গড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নিয়োগপ্রার্থী এবং চারজন জালিয়াতচক্রের সদস্য।

গতকাল শুক্রবার নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ২২ জুন নাটোর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় নাইম ইসলাম, রাব্বী আলী ও আব্দুল হাদি নামের তিনজনের বায়োমেট্রিক নমুনায় মিল পাওয়া যায়নি। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, ফজলুর রহমান ওরফে রনির নেতৃত্বাধীন একটি জালিয়াতচক্রের সহায়তায় তারা নিয়োগ লাভের চেষ্টা করছিল। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতা রনিসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চারজনকে আটক করে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৩৬টি সাদা স্ট্যাম্প, ১৬টি ফাঁকা চেক এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলো নিয়োগপ্রার্থী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে নাইম ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর গ্রামের জামাল প্রামাণিকের ছেলে রাব্বী আলী ও একই উপজেলার সাহাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল হাদি। আটক জালিয়াতচক্রের সদস্য রনি (চক্রের নেতা) ছাড়াও বাকিরা হচ্ছে গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামের সামছুল মণ্ডলের ছেলে রেজাউল ইসলাম, রফিকুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী ও সিংড়া উপজেলার বিলদহর গ্রামের হারান মণ্ডলের ছেলে রওশন মণ্ডল।

পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ এবং মেধাবীরা যাতে চাকরি পায় সে জন্য এবার নিয়োগ পরীক্ষায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান, আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে