পাটশিল্পের সংকট দূর করতে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে: মেনন

বুধবার, জানুয়ারি ৮, ২০২০,৭:০৫ পূর্বাহ্ণ
0
36

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

‘পাটশিল্প ও পাটখাতে এখনও সামরিক শাসক ও বিএনপি-জামাতের ধারাই অনুসৃত হচ্ছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে বিশ^ব্যাংকের নির্দেশনাই। উপেক্ষিত হচ্ছে সরকার এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার রাজনৈতিক উদ্যোগও। আর পাট দিয়েই বাংলাদেশের কেবল রাজনৈতিকভাবেই নয় পরিবেশগতভাবেও দেশকে আরও এগিয়ে নেয়া যায়। পাটশিল্পের সংকট দূর করে পাট তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে পাট নিয়ে জাতীয় সম্মেলন আহবান করা প্রয়োজন।’

গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত ‘পাট ও পাট শিল্প: সঙ্কট, সম্ভাবনা ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন একথা বলেন। ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরূল আহসান পাটখাতের সংকট, সম্ভাবনা ও উত্তরণের পথ বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল আমিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা পাটকল আন্দোলনের অন্যতম নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় পাটকল শ্রমিক ফেডারেশনের আহবায়ক জে,জে আই জুট মিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন রশিদ মল্লিক, হাফিজ জুট মিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, প্লাটিনামের সিবিএ নেতা খলিলুর রহমান, কৃষিবিজ্ঞানী নিতাই চন্দ্র রায়, আলিম জুট মিলের এসএম বাবুল রেজা প্রমুখ।

আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পাটশিল্পের এই দুর্দিনে প্রশ্ন হচ্ছে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প রাখবে কিনা? রাষ্ট্রায়ত্ত জাতীয় শিল্পরক্ষার বিষয়টি সংবিধান দ্বারা বিধিবদ্ধ। রাষ্ট্রীয় শিল্প পরিচালনার জন্য একটা নীতিমালা তৈরি করা দরকার। ‘বিজেএমসি’কেও যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রবীণ শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পাটকল শ্রমিকদের এই আন্দোলন নতুন নয়। যুগে যুগে নানা সংগ্রামে এই শ্রমিকরাই ন্যায্য অধিকারের দাবিতে রক্ত দিয়ে এসেছে। সরকার যদি বিদ্যমান রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে বেসরকারীকরণের অপচেষ্টা করে তাহলে আমরা তা রক্ত দিয়ে প্রতিহত করব।
জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য পাট ও পাটশিল্প বাঁচানোর জন্য আমরা সরকারকে নানাভাবে বার্তা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ৬টি সেকটরে মজুরি কমিশন বাস্তবায়িত হয়েছে। আশা করছি এই খাতেও হবে। সরকারের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই।
শ্রমিকনেতা মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের সবার সামনে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে চলেছে পাট ও পাটশিল্প। এজন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
শ্রমিকনেতা চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, পাট ও পাটশিল্প রক্ষায় যদি ন্যূনতম জাতীয় জনমত তৈরি করা যেতো তাহলে আজ পাটশিল্পের এই দুর্গতি হতো না।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সারাবিশ্বে পরিবেশবান্ধব পাটপন্যের ব্যাপক চাহিদা সত্বেও কেবল লুটপাটের কারণে এই জাতীয় শিল্পটি আজ ধ্বংসের মুখে। কৃষি, কৃষক, জমি, পরিবেশ বাঁচিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার্জনে পাটের বিকল্প নেই।
চলমান পাতা-২
পাতা-২

শ্রমিক নেতা হারুনুর রশিদ মল্লিক বলেন, এরশাদ সরকার বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের লোভে ৩৭টি পাটকল ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়। সেগুলো আজও চালু হয়নি। খুলনার পাটকল শ্রমিকনেতা খলিলুর রহমান বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরিকৃত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিজিএমসি’র পণ্য কেন বিক্রি হচ্ছে না?
আলোচকগণ গোলটেবিল আলোচনার ধারণাপত্র প্রদত্ত সুপারিশ ও প্রস্তাবগুলো সাথে সহমত ব্যক্ত করেন নিম্নে তা দেয়া হল।
* পাট উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পাট চাষিদের উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করা। ভালো জাতের পাট উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া। পাট চাষের বিশেষায়িত অঞ্চল (জাত অঞ্চলের) চাষিদের সকল প্রকার সহায়তা ও আনুকুল্য প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ভর্তুকী দিয়ে পাটের আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে।
* পাটখাতে ভর্তুকি দেয়া হলো প্রার্থমিক বিনিয়োগ। বাংলাদেশের ব্রান্ডকে টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই সরকারকে পাটখাতে বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগে বহুমুখি প্রভাব তৈরী হবে। এই বিনিয়োগ দ্বারা পাটকলগুলোয় সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন হলে উন্নত কারখানায় পরিনত ও সচল হবে। পাট চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবে। ব্যাকোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পও রক্ষা পাবে।
* বিজেএমসিকে সংস্কার করতে হবে। আমলাতন্ত্র মুক্ত, পাটের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী একদল বুদ্ধি বৃত্তিক মানুষকে ব্যবস্থাপনায় নিয়োগ দিতে হবে। কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় যাদের পাট ও পাটজাত বিষয়ের উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান আছে সেসকল বিজ্ঞানীদের যুক্ত করতে হবে।
সরকারীখাতে পাটকলের খোলনালচে পালটে ফেলতে হবে। দ্রুত শতবর্ষ পূরনো যন্ত্রপাতি সরিয়ে আধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তি সম্বলিত মেশিন প্রতিস্থাপন করতে হবে। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
* পাটকলগুলোর প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার নিয়োজিত অতিরিক্ত জনবল কমিয়ে দিতে হবে। আধুনিক ব্যবস্থাপনা উপযোগী জনবল তৈরীতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিতদের প্রতিযোগীতা মুলক পরিক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে।
* পাটকলগুলোর জন্য পাট ক্রয়ে অর্থসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ। পাট মৌসুম শুরুর পূবেই প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান পাটকলগুলোকে দিতে হবে। এ জন্য বাজেটে থোকে বরাদ্দ রাখতে হবে।
* পাটপণ্যকে কৃষি পণ্য হিসেবে ঘোষণানুযায়ী পাটশিল্পকে কৃষি শিল্পের ন্যায় সকল সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
* উৎপাদিত পাটপণ্য বাজারজাত করার লক্ষে বহিঃবিশে^ বাংলাদেশের দূতাবাস সমূহে একটি বিশেষ পাটবিষয়ক ডেক্স স্থাপন করতে হবে।
* সরকারের কেন্দ্র থেকে তৃনমুল পর্যায় পর্যন্ত সকল সরকারী কার্যালয় ও সংস্থায় সরকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতা মুলক করতে হবে। সরকার নিজে এক কাজ করে বেসরকারীখাতের প্রতিষ্ঠান গুলোকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করবে।
* পাটপন্য ব্যবহার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে-সচেতনতা বাড়তে হবে, জানতে হবে। পাটজাত পণ্যের ব্যবহার সম্পর্কে সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচার মুলক বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
* দুর্নীতিমুক্ত পাট প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সরকারকে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি উপরোক্ত সুপারিশ ও প্রস্তাবনাসহ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পাট ও পাটশিল্প তার হৃত গৌরব ফিরে পাবে। পাটের অর্থনীতি চাঙ্গা হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশের ব্রান্ড পাট তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে