ধর্ষণবিরোধী স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ, ৯ দফা দাবি

শুক্রবার, অক্টোবর ৯, ২০২০,১১:৫৭ অপরাহ্ণ
0
44

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

সারা দেশ প্রকম্পিত হচ্ছে দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে। সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে। প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হচ্ছে রাজধানীতেও। আজ শুক্রবারও শাহবাগে মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। এতে উদীচীর গণসংগীতে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ দাবি করা হয়।

আজ শুক্রবার বিকেলে পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মহাসমাবেশ শুরু হয়। এতে করে জাদুঘরের সামনের রাস্তা জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে।

মহাসমাবেশে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়েছেন।

মহাসমাবেশের শুরুতেই ধর্ষণবিরোধী মিছিল, বক্তব্য, গান, কবিতা ও স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে শাহবাগ। এতে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে এসে যোগ দিয়েছেন। এ সময় তাদের নানা স্লোগান সংবলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে সমাবেশে আসতে দেখা গেছে।

বিকালে শাহবাগে অনুষ্ঠিত বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন কর হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পাশাপাশি আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত নানা কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়। 

দাবিসমূহ:
১. সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।

২. পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।

৩. হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।

৪. ধর্মীয়সহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রেণে বিটিসিএলের কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ্য ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। 

৫. তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইবুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।

৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারাকে বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে।

৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।

৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। 

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স এই ৯ দফা দাবি উত্থাপন করার পর ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শাহবাগে লাগাতার অবস্থান চলবে। কর্মসূচিগুলোর মাঝে রয়েছে- ১১ অক্টোবর রবিবার আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১২ অক্টোবর সাংস্কৃতিক সমাবেশ, ১৩ অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী চলচিত্র উৎসব, ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ ও ১৫ অক্টোবর সারা ঢাকা শহরে ধর্ষণবিরোধী সাইকেল র‍্যালি।এর মধ্যে যদি দাবি মেনে নেয়া না হয় তাহলে ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টায় এই শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত লংমার্চ এবং পরদিন সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে