[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ইতিহাস-ঐতিহ্য-দ্রোহ-বিপ্লবের তীর্থভূমি বীর চট্টগ্রামে জ্ঞান ও মননের আকাঙক্ষা পূরণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহনে ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম জিমনেশিয়াম চত্বরে দ্বিতীয় বারে মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলা- ২০২০। এ বছর ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শততম বার্ষিকী। তাই এবারের বইমেলা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতাকে নিবেদন করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এমপি ওই দিন বিকেল ৩ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ২০দিন ব্যাপি এই বই মেলার উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। এ মেলা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।একুশের বই মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা ও ছুটির দিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে নগরীর সিজেকেএস সম্মুখস্থ বই মেলা প্রাঙ্গণ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন মেলার সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরে একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, এ মেলায় সঙ্গীতানুষ্ঠান, রবীন্দ্র ও নজরুল উৎসব, বসন্ত বরণ উৎসব, কবিতা ও ছড়া উৎসব, তারুণ্যের উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, বিতর্ক উৎসব, শিশু উৎসব, আন্তজার্তিক লেখক সম্মেলন ও পাঠক সমাবেশের আয়োজন থাকবে। এ ছাড়া পেশাজীবী ও সাংবাদিক সমাবেশ, সাহিত্য আড্ডা, সাহিত্য-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ ও চিত্রাংকনসহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বইমেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। এছাড়াও এতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, লোক ও মরমী সংগীত, নাটক মঞ্চায়ন, জাদু প্রদর্শন ও নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। মেলাকে আকর্ষনীয় করার লক্ষ্যে আরো থাকবে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতি কর্মী ও সাংস্কৃতিকমনা প্রেমীদে নিয়ে বিভিন্ন উপ পরিষদ গঠন ও তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে বলে মেয়র উল্লেখ করেন। তিনি বলেন অনুষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের প্রথিতযশা কবি, লেখক, সাংবাদিকরা আলোনায় এবং জনপ্রিয় শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সব মিলিয়ে ইতিহাস, ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করে মেয়র বলেন জাতীয় জীবনে যেসব ব্যক্তি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদেরকে একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে। ঢাকার আঙ্গীকে বই মেলা করার জন্য চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ এবং চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, লেখক, সাংবাদিক,শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন এর নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে মেলার প্রাঙ্গণ প্রায় ১,২০,৩০০ বর্গফুট এবং এতে ঢাকার ১১৮টি ও চট্টগ্রামের ৪০টি প্রকাশকের জন্য ২০৫টি স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। অংশ নেয়া উল্লেখযোগ্য স্টলগুলো মধ্যে সন্দেশ, গাজী প্রকাশনী, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক, আদর্শ, চারুলিপি প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, মুক্ত চিন্তা, হাওলাদার প্রকাশনী, একাত্তরের প্রকাশনী, বঙ্গজ, স্পর্শ প্রকাশন, বাংলাদেশ মুক্তির সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ প্রকাশনা কেন্দ্র, কাকলী প্রকাশনী, ভাষাচিত্র, জনতা প্রকাশ, অনিন্দ্য প্রকাশ, বাতিঘর, অ্যাডন পাবলিকেশন, প্রথমা প্রকাশন, বিশ্বসাহিত্য ভবন, আলোঘর প্রকাশনা, মুক্তদেশ প্রকাশন, ত্রয়ী প্রকাশন, কামরুল বুক হাউস, বলাকা প্রকাশন (ঢাকা), বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, এশিয়া পাবলিকেশন ইত্যাদি রয়েছে। সিটি মেয়র বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিরাপত্তা কর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে এবং এব্যাপারে চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার ও র্যাবকে মেলায় সার্বক্ষনিক সহযোগীতার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সমগ্র মেলা সিসি টিভির আওতায় থাকবে। ফ্রি ওয়াই ফাই সহ ই- বুক ও সেলফি কর্ণার এর ব্যবস্থা থাকবে বলে মেয়র সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। এছাড়াও বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও সাধীনতা আন্দোলন নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী ষ্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা পরিষদের কক্ষ, হেলথ বুথ, ফায়ার সাভির্স, অর্ভ্যথনা কক্ষ, মিডিয়া বুথ, বিটিবি বুথ, এটিএম ব্যাংকের বুথ, সার্বক্ষণিক সেবা ব্যবস্থার জন্য সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস বুথ থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণকে ধুলাাবালি মুক্ত পরিবেশে পাঠক-দর্শক মেলা উপভোগ যোগ্য করার লক্ষ্যে ইটের ছাদরে সমগ্র বই মেলা ঢাকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেয়র বলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য মাঠ সংলগ্ন জিমনেশিয়াম হলে আলাদা মঞ্চ করা হয়েছে যাতে বই মেলার বিঘ্ন না ঘটে। মেলায় সর্বস্তরের নাগরিক, সংস্কৃতিমনা ও বই অনুরাগী ব্যক্তিদের স্ববান্ধব উপস্থিতির প্রতাশা করেন মেয়র ।
তিনি বলেন এবার ব্যতিক্রমধর্মী মেলা আয়োজনের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ঢাকার পর চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীই শুধু নয়, বাণিজ্যিক রাজধানীও। কিন্তু চট্টগ্রামে লেখক-প্রকাশক-পাঠক এবং নাগরিক সমাজের দীর্ঘ কালের আকাঙক্ষা ছিলো ভাষার মাসে বইমেলা আয়োজনের। তিনি বলেন এই আকাঙক্ষা অনুযায়ী দু’যুগেরও আগে থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে নানাজন, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা পরিসরে নানা স্থানে বইমেলা হয়ে আসছে। কখনো একই বছরে একাধিক বইমেলা হয়েছে। তবে এতদিনের এই আয়োজনগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ বইমেলা হয়ে উঠেনি। সম্মিলিত উদ্যোগে একটি বইমেলার আয়োজন চট্টগ্রাম বাসীর আকাঙক্ষা সে আকাঙক্ষা থেকেই এবার চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, লেখক এর যৌথ মতবিনিময়ে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মেয়র সভায় জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রাম ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে ৬০ বিধি সন্নিবেশিত গঠনমূলক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এবারের বই মেলার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রাথমিক ভাবে ৩০ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করেছে। মেয়র বলেন আমাদের ছেলেমেয়েরা আজকাল মোবাইলে ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সবই শেষ করছে এর পেছনে। এতে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বই-ই অন্যতম বন্ধু যা তাদেরকে মোবাইল ও মাদকের মরণ আসক্তি থেকে বের করে আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল, সমৃদ্ধ ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা, শিক্ষক ও সমাজের সকলকে সচেতন হতে হবে। তাই বই মেলা আয়োজনের মধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা আমাদের উপর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বর্তেছে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে মেয়র বলেন এ মেলার প্রচার ও প্রসারের সার্থকতায় সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আপনাদের মাধ্যমে পাঠক সমাজ, বই প্রেমী, সুধীজন, সুহৃদ তরুণ সমাজ, যুব সমাজসহ সব বয়সী সর্বস্তরের শ্রেণী পেশার মানুষকে সপরিবারে বন্ধু-বান্ধবসহ মেলায় আসার জন্য আহবান জানান মেয়র। অনুষ্ঠানে একুশে বই মেলা পরিচালনা পরিষদের আহবায়ক চসিক শিক্ষা স্বাস্থ্য ষ্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি, বই মেলা পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব, চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়য়া, যুগ্ম সচিব লেখক-গবেষক জামাল উদ্দীন, মেলা পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক, চসিক উপ সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, সাংবাদিক, লেখক ও প্রকাশকগণ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভাপতি নাছির উদ্দিন তোতা, সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা উপস্থিত ছিলেন।