[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
রুমা আন্টির দূর সম্পর্কের বোনের মেয়ে নাম ঠিকঠাক মনে নেই অর্পা না কি যেন বলেছিল! চেহারা মোটামুটি ভালোই। শ্যামবর্ণ গাত্র,কণ্ঠস্বর অসম্ভব সুন্দর, তার থেকে মনটা আরো বেশি কোমল,সুন্দর। মন তো আর পড়া যায় না, কল্পনা দেখেই যা অনুমান করলাম। আমার এ স্বল্প জ্ঞানের পরিসীমায় আমি তাকে অসাধারণ তরুণী হিসেবে আবিষ্কার করলাম। আমি সাধারণত লাজুক স্বভাবের বলে প্রথম সাক্ষাতে কারো সাথে তেমন একটা ভাব জমাতে পারি না। আর একারণে কোনো অপরিচিত মেয়ে মানুষের সাথে হঠাৎ করে কথা বলা হয়ে ওঠে না, এমনকি চোখে চোখ রাখাও! আর যদি সে আত্মীয় সমাজের কেউ হয় তাহলে তো তাকানোর প্রশ্নই ওঠে না।
আজকে রুমা আন্টির বাসায় দাওয়াত ছিল। ভেবেছিলাম আজকে আর কোথায় যাচ্ছি না। রুমা আন্টি খুব করে বলে গেলেন আজকে আর কোথাও যাবে না। অনেক দিন পর এসেছো আজকে থেকে কাল যাবা। আন্টি আমাকে খুব ভালোবাসে। যদিও আমার সকল আন্টি সমাজ আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু রুমা আন্টি বোধ হয় একটু বেশি বেশি। হঠাৎ করে টিউশনি থেকে ফোন আসলো! স্টুডেন্টদের মা বললো, “ছোট্ট ভাইয়া, আজ থেকে পড়াতে এসো( কিছু দিন ছুটির পর ফোন করেছে)। কি আর করা, যেতে তো হবে। ছাত্র জীবনে টিউশনি করানো বড়ই বিড়ম্বনার কাজ। তারপরও ভালো লাগে বেকার জীবনে চাকরি চাকরি একটা ফিল আসে। তড়িঘড়ি করে চলে আসবো এজন্য গেট খোলা লাগবে। আকাশকে ( রুমা আন্টির ছেলে) বললাম গেটটা খুলে দে তো। ও তখন ব্যস্ত গেম খেলায়। কার কথা কে শোনে। আমাকে বললো,” অর্পা আপুকে বলো খুলে দেবে”।আমি পড়লাম মহা বিপদে। অচেনা, অপরিচিতা কোন তরুণীর সাথে কিভাবে কোন কাজের কথা বলি! আকাশ ডাক দিল,” অর্পা আপু, গেটটা খুলে দেন তো! অপু ভাই বাইরে যাবে।”
গেটের কাছে আসার সময় ভুল করে একটা ব্যাগ হাতে করে নিয়ে এসেছি। অর্পাকে বললাম, এটা আন্টির কাছে দিও তো। সে বলল, “মাসিমা আপনাকে যেতে না করেছে।” সামনে আন্টি ছিল না বলে সাহস করে যেতে পারছি। আমি বললাম, “আমার একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে আজকে চলি”। আমি বের হবো ঠিক এই মুহূর্তে সে আস্তে করে বলে উঠলো “সাবধানে যাবেন”! যদিও আমি সামান্য কিছু দূর চলে এসেছি সে হয়তো অনেক আস্তে বলেছে কথাটা কিন্তু কেন জানি একটা কৌতূহল, অতি আর্কষণের কারণে কানের কাছে শব্দটা স্পষ্ট ভেসে এলো। কথাটির ভিতর একটা আবেগ, অধিকার, ভালোবাসা জড়ানো মিশ্রিত অনুভূতি ছিল বলে আমার মনে হলো। বাসায় ফিরে আসার পর অর্পার কথা বারবার মনে হচ্ছে সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আচ্ছা, ওর কি কোন বয় ফ্রেন্ড আছে? সে কি আমার স্বপ্নের নায়িকা হবে? ও কি আমাকে ভালোবাসে ফেলেছে! নাকি আমি ওর প্রেমে পড়েছি!
আমি এখনো জানি না ওর সাথে পরবর্তীতে আর দেখা হবে কি না। কিন্তু ওর অনিন্দ্য সুন্দর কণ্ঠের সেই সুমধুর শব্দ (সাবধানে যাবেন!?) আমি এখনো ভুলতে পারছি না। আসলে আমি এখনো এই গূঢ় রহস্যময় শব্দের ভিতর লুকিয়ে থাকা অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম না। আর এই না পারার ভিতর একটা অসাধারণ অনুভূতি তৈরি করেছে। মাঝে মাঝে কিছু না পারা ভাল লাগা তৈরি করে। এটাও কি কি তেমন কিছু? হটাৎ করে মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে যেন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে নিজের কাছে নিজেই বিরক্ত হচ্ছি কেন তাকে একচক্ষু ভালো করে দেখলাম না? যতটুকু অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছি তার আলোকে মেয়েটিকে দেখে মনে হলো এ মেয়ে কোন পুরুষের সাথে প্রেম তো করেই নাই যদিও এখন তার প্রেমের উৎকৃষ্ট সময়। আমি হয়তো কখনো বলতে পারবো না আমার অব্যক্ত বাসনার কথা কিন্তু ওই দিনের “সাবধানে যাবেন” কথার স্পন্দন আমি ভুলবো না। হ্যাঁ, আমি সাবধানে যাচ্ছি তবে একরাশ অপ্রাপ্তির কষ্ট নিয়ে চলে এসেছি। মনে মনে বললাম ভালো থেকে অর্পা,” টাটা বাই বাই আর যেন দেখা না হয়”।আর চেষ্টা করবো তোমাদের মত অসাধারণ তরুণীদের সাথে যেন দেখা না হয় বারবার। কারণ আমি ভীতু প্রকৃতির মানুষ মনের কথা বলতে পারি না শুধু শুধু কষ্ট পাই,দগ্ধ হই চাপা ভালবাসার অনলে। তার পরে আর আমাদের কখনো দেখা হয়নি। এভাবেই একসময় কুয়াশার বাষ্পের মত হারিয়ে গেল অর্পা। এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, প্রেমের প্রপাগন্ডা রচনা করি। আর বলি তোমাদের উদ্দেশে-
তোমরা কেন এমন হও? দুদিনের পরিচয়ে মায়াডোরে বেঁধে আপনা থেকে চলে যাও
ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে, কুয়াশায় মিলিয়ে যাও?
যদিও আমি প্রত্যাশী কোন একদিন তার কণ্ঠে আবারো শুনবো কোন গানের আবেশী ধুয়া। আমি সেদিনের প্রত্যাশী।
লেখক : তানভীর হোসেন অপু