৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরঅম্লান : তথ্যমন্ত্রী

সোমবার, মার্চ ৮, ২০২১,৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ
0
32

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আবেদন পঞ্চাশ বছর পরও মানুষের মনের মণিকোঠায় অম্লান, উদ্দীপনাময়। ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টায় কোনো লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বমহিমায় নতুন প্রজন্মের মনের গভীরে প্রোথিত হয়েছেন। বরং ইতিহাস বিকৃতিকারীরাই মুছে গেছে।’

গতকাল রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বাঙালির মুক্তির সড়ক’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী এসময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ৫০তম বার্ষিকীতে সেমিনারটি আয়োজনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণে অংশ নেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

ড. হাছান বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে বহু কালজয়ী ভাষণ আছে। মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিংকন, জন এফ কেনেডি, জর্জ ওয়াশিংটন, আলেকজান্ডার দি গ্রেট, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং তাঁদের মতো অনেকের কিছু ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে অন্যতম সেরা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এই সমস্ত ভাষণ থেকে অনন্য। কারণ এটি লিখিত ভাষণ ছিল না। অতীতে অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন, তিনি এই কথা লিখে দিয়েছিলেন বা বলতে বলেছিলেন, এভাবে কৃতিত্ব জাহিরের অপচেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনোটা দেখে বলেননি।’

বঙ্গবন্ধু একনাগাড়ে ১৯ মিনিটে ১০১টি বাক্যে যে ভাষণ দিয়েছেন তার ভাষা ছিল সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষা, বই বা সভা সেমিনারের ভাষা নয় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য শরীরের যে অঙ্গভঙ্গি এবং যে ভাষা, যে বাক্য, যে শব্দ চয়নের প্রয়োজন, সেগুলো ছিল বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের অনন্য মাধ্যম। তিনি তাঁর ভাষণে সবাইকে সবচেয়ে আপন ‘তুমি’ সম্বোধন করেছেন অর্থাৎ জাতির সাথে তাঁর সেই সম্পর্কটি তখন দাঁড়িয়ে গেছে।’

ড. হাছান তাঁর বিশ্লেষণী বক্তৃতায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কার্যত সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন এবং শুধু স্বাধীনতা ঘোষণাই নয়, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ তাহলে কি করতে হবে, কিভাবে লড়াই করতে হবে- সেটিও বলে দিয়েছেন। কিন্তু এমনভাবে বলেছেন যে, স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তাকে অভিযুক্তও করা যাচ্ছে না। এখানেই ৭ মার্চের ভাষণের মাধুর্য, অন্যতম সবচেয়ে বড় দিক।’

‘পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক অর্থবহ ভাষণ আছে, কিন্তু হাজার হাজার বছরের ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরকারী ১০ লক্ষ মানুষের সামনে দেয়া ৭ মার্চের এই ভাষণ যেভাবে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে, এমন আর কোনো ভাষণ আছে কি-না সেটি আমার জানা নেই’, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

আজকে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু এ ভাষণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ২১ বছর এই ভাষণ বাজেনি, রাষ্ট্রীয় সমস্ত অনুষ্ঠানে এই ভাষণ এমনকি বঙ্গবন্ধুর নামটিও নিষিদ্ধ ছিল, বলেন তথ্যমন্ত্রী। তরুণ বয়সের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘৭৫ সালের পরপর আমার ছাত্র জীবনে যখন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, চট্টগ্রাম শহরে মাইকিংয়ের সময় আমরা ট্যাক্সিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাতাম, মানুষ তা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে যেতো।’

ড. হাছান বলেন, ‘আজকে দেখতে পেলাম, যারা এই ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছিল, ইতিহাসকে বিকৃত করেছিল, বঙ্গবন্ধুর নামটাও নিষিদ্ধ করেছিল, তারা ৭ মার্চ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সম্ভবত আজকে তারা পালন করছে। এটি কোন দূরভিসন্ধি নিয়ে পালন করছে আমি জানি না, তবে তাদেরকে বলবো, ইতিহাস বিকৃত করে কোনো লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মনের মণিকোঠা থেকে মুছে ফেলা যায়নি। বিকৃতি ইতিহাসও ইতোমধ্যেই মুছে গেছে। শুধু পুস্তক বা অন্য জায়গা থেকেই নয়, মানুষের মনের মণিকোঠা থেকেও বিকৃত ইতিহাস মুছে গেছে।’

‘৭ মার্চের এই দিনে আসুন আমরা জিঘাংসা, হিংসা, ইতিহাস বিকৃতি, খলনায়ককে নায়ক বানানো চেষ্টা পরিহার করে সত্য ইতিহাস ধারণ ও লালন করে যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করি, তাহলেই নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে; নইলে, ইতিহাস বিকৃতিকারীরা যে কাঠগড়ায় আজকে দাঁড়িয়ে আছেন, সেই ইতিহাসের কাঠগড়া থেকে তাদেরও মুক্তি মিলবে না’ আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।

প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও গবেষণা সম্পাদক আইয়ূব ভুইঁয়ার সঞ্চালনায় গণমাধ্যম গবেষক অজিত কুমার সরকারের মূল প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বাঙালির মুক্তির সড়ক’ এর ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, স্বপন সাহা, শাহেদ চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে