[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মিদশার শুরু ও জঙ্গি হামলা ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে। সে রাতেই পুলিশ বেকারির ভেতরে থাকা গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে। আর তাতে গুলিবিদ্ধ হন নিবরাস ইসলাম হামলাকারীদের একজন ।
সন্ত্রাসবিরোধী গতকাল সোমবার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ কথা বলেন ভাটারা থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন । হোলি বেকারিতে কে বা কারা হামলা করেছে—ওয়্যারলেসে এই তথ্য পেয়েই যে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সদস্যরা, তাঁদের একজন ফারুক। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দীন। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে ফারুক নিজেও প্রায় পাঁচ মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাঠানো হয় ব্যাংককেও।
আদালতকে ফারুক বলেন, তিনি
অসুস্থ অবস্থায় হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্য
দিয়েছেন। সে সময় বেশ কিছু তথ্য দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে সে রাতের ঘটনা তাঁর
মনে পড়ে। ফারুক বলেন, তাঁরা হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার খবর পান রাত সাড়ে আটটার
কিছু আগে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনি ও তাঁর সঙ্গে টহলের দায়িত্বে থাকা
পুলিশ লেকভিউ ক্লিনিকের কাছে সদস্যরা চলে যান। সেখানে পৌঁছে রাস্তার
ওপর এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। কাছে এগিয়ে যেতে ওই ব্যক্তি
বলেন, তিনি জাপানিদের বহনকারী গাড়ির চালক। চার–পাঁচটি ছেলে হোলি বেকারিতে ঢোকার সময় তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে।
আহত ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এরপর তাঁরা হোলি
বেকারির দিকে যতই এগোতে থাকেন ততই আর্তচিৎকার ও শুনতে পান গুলির শব্দ । তিনি
কিছু বুঝে ওঠার আগে তিন–চারটি ছেলে গেট
খুলে বেকারির বাইরে বেরিয়ে আসে। তাদের মধ্যে একজন ব্যাগ থেকে গ্রেনেড বের করে ছুড়ে
মারে। পুলিশও গুলি ছুড়তে থাকে। তাদের ছোড়া গুলি নিবরাসের হাতে বিদ্ধ হয়।
ফারুক বলেন, তাঁরা সার্চলাইট দিয়ে বেকারির ভেতরের পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছিলেন। জঙ্গিরা আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে বেকারির ভেতরে থাকা হত্যা করছিল লোকজনকে। তারা উল্লাস করছিল। পুলিশ গুলি ছুড়ছিল, ওরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড ও গুলিতে আহত হন ৩০–৩৫ জন । তাঁর শরীরেও ২৬টি স্প্লিন্টার ঢোকে। জ্ঞান হারান ঘটনাস্থলে তিনিও।
গতকাল আরও সাক্ষ্য দিয়েছেন
পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, জঙ্গিরা গ্রেনেড ছুড়লে তাঁরা দূরে সরে যান।
একপর্যায়ে দেখেন সালাউদ্দীনের ঘাড়ে ও গলায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ, তিনি পড়ে যাচ্ছেন।
গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামও পড়ে যান। কেউ একজন ‘ধর’, ‘ধর’ বলে চিৎকার করেন। তিনি উপপরিদর্শক
মাহবুবকে সঙ্গে করে ওসি সালাউদ্দীনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার
করে হাসপাতালে পাঠান। পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা
করেন চিকিৎসক।
রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান, আসলাম ওরফে র্যাশ ও শরিফুল ইসলাম খালেদের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ দুই সাক্ষীকেই বলেন, তাঁরা পুলিশের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যের চেয়ে কোথাও কোথাও বেশি কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, বেকারির ভেতরে থাকা লোকজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। দুই সাক্ষীই এই বক্তব্য জোরালোভাবে অস্বীকার করেন।
গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। হোলি আর্টিজান হামলার এ ঘটনায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যাঁদের মধ্যে পাঁচজন ওই দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আটজন পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। এই মামলায় জীবিত আসামির সংখ্যা আটজন। গতকাল তাঁদের সবাই আদালতে হাজির ছিলেন ।