[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ঝালকাঠি প্রতিনিধি: সরকারি চাকরি না পাওয়ায় স্ত্রীকে নির্যাতনের পরে দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগ পাওয়া গেছে সিদ্বার্থ বড়াল (৪০) নামে এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ১৫ দিন কারাগারে থাকলেও নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। নির্যাতনের শিকার এক সন্তানের মা মাধবী হালদার (৩১) এ অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত সিদ্বার্থ বড়াল পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার গিলাতলা গ্রামের শৈলেন্দ্রনাথ বড়ালের ছেলে। সে স্থানীয় শাখারীকাঠি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি করছেন। মাধবী হালদার ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের কাপড়কাঠি গ্রামের মৃত নির্মল হালদারের মেয়ে।
রবিবার সকালে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে সন্তানকে নিয়ে এসে নির্যাতনের শিকার মাধবি জানান, ২০০৯ সালে সিদ্বার্থ বড়ালের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তঁার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে নাজিরপুরের গিলাতলা গ্রামের শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করেন তারা। ২০১১ সালে তঁার এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। এ অবস্থায় সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হলে স্কুলে ভর্তির জন্য তারা নাজিরপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এর পর থেকে তাকে (মাধবি) সরকারি চাকরি নেওয়ার জন্য চাপ দেয় সিদ্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও তিনি সরকারি চাকরি পাননি। এতে ক্ষুব্দ হয়ে স্বামী নির্যাতন করতো। ভাড়া বাসায় সন্তানসহ তাকে রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে যান স্বামী। সন্তান ও স্ত্রীর খোঁজখবর নেওয়াও বন্ধ করে দেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নড়াইল থেকে একটি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসে তার সিদ্বার্থী। মেয়েটিকে স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে বিয়ে করেন সিদ্বার্থ।
খবর পেয়ে মাধবি স্বামীর বাড়িতে গেলে মারধর করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। এমনকি সিদ্বার্থ মোবাইলফোনে তার নম্বরটি কালো তালিকাভুক্ত করে রাখেন। সন্তানের কথা চিন্তা করে পেটের দায়ে ঝালকাঠিতে বাবার বাড়িতে চলে আসেন মাধবি। গত ১১ মার্চ মাধবি হালদার বাদী হয়ে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। আদালত আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করলে নাজিরপুর থানা পুলিশ ২৫ আগস্ট সিদ্বার্থকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ১৫ দিন সে পিরোজপুরের কারাগারে থাকার পরে জামিনে মুক্ত হয়।
মাধবি বড়াল অভিযোগ করেন, জেলে থাকা অবস্থায় আমি নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পিরোজপুর সিভিল সার্জনের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলেছেন, জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের কাছে কাগজ পাঠাতে। আমি পরে ডাকযোগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের কাছে অভিযোগ পাঠাই। কিন্তু তারা সিদ্বার্থের ব্যাপারে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিধান রয়েছে, কোন ফৌজদারি মামলায় সরকারি চাকরিজীবি জেল হাজতে থাকলে, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। মামলা নিস্তপত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বেতনভাতাও বন্ধ থাকবে। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সিদ্বার্থ বড়াল অফিসকে ম্যানেজ করে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ব্যাপারে সিদ্বার্থ বড়াল মুঠোফোনে বলেন, মাধবি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, আমি জেলেও ছিলাম। বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা হবে। এর বাইরে আমি কিছু ফোনে বলেতে পারবো না।নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলে রাব্বী বলেন, সিদ্বার্থ বড়াল স্ত্রীর মামলায় কারাগারে ছিলেন, এটা আমাদের জানা ছিল না। জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। যদিও মাধবি আমাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন, কিন্তু এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি অবগত করলে, সিদ্বার্থের ব্যাপারে আইনগত যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা করা হবে।