[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-সহ সকল সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, জন্ম হয়েছিল লাল সূর্যখচিত সবুজ একটি পতাকার।’ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে চিরতরে বিদায় করার লক্ষ্যেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম, তাই এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যারা ছড়ায়, তারা প্রকৃতপক্ষে মানবতা ও বাংলাদেশের শত্রু।
গতকাল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকল ধর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসকল কথা বলেন। ‘আজ সভায় আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যেভাবে সুন্দর করে বসেছি, আমাদের রাঙ্গুনিয়া, আমাদের বাংলাদেশও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য এমনই সুন্দর’ বলেন মন্ত্রী।
ড. হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। কীভাবে অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করতে হয়, কীভাবে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ভাই-ভাইয়ের মতো মিলিত হয়ে চলতে হয়, তাঁর নেতৃত্বে সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি।’
নিজ উপজেলাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি গ্রামের চিত্র হচ্ছে সকল ধর্মাবলম্বীদের একত্রিত সুন্দর বসবাস। আমার গ্রাম সুখবিলাসে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের পাশাপাশি চাকমা-মারমারাও আছেন। আমরা যেভাবে শতশত বছর ধরে একসাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করছি, সেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ। তাই কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা কোনো গোষ্ঠীর কারণে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে তাঁকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে দেশ-বিদেশ থেকে ফেসবুক-ইউটিউবের আশ্রয় নিয়ে গন্ডগোল পাকানোর অপচেষ্টা করে, এগুলোতে কান দেয়ার বা এনিয়ে মাতামাতি করার প্রয়োজন নেই, বলেন তথ্যমন্ত্রী। আমরা সবাই শতশত বছর ধরে ভাই-ভাইয়ের মতো ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও হাজার বছর ধরে থাকবো এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে সকল ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শান্তির জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আরো প্রীতিময় করার অনুরোধ জানান ড. হাছান মাহ্মুদ।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ফেসবুকে কে কী একটা লিখলো, সেটা নিয়ে অন্যরা লেগে থাকবো এটা হতে পারে না, কারণ আমাদের কাছে মানুষ বড়, কে কোন ধর্মাবলম্বী, সেটা বিবেচ্য নয়। তাই কোনো ব্যক্তির কারণে যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে না পারে সেজন্য যে কোনো অশুভ শক্তির বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
মন্ত্রী জানান, ‘সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নে আমাকে দেওয়া সরকারি বরাদ্দের এককোটি টাকা থেকে চল্লিশ লাখ টাকা সকল ধর্মের উপাসনালয়ের জন্য দিয়েছি। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারগুলোর উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ আনা হয়েছে, পাশাপাশি প্রতি ইউনিয়নে মসজিদভিত্তিক মক্তব ও মাদ্রাসাগুলোতে ভবন নির্মাণও করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান স্বজন কুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন আল-কাদেরী, রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির ও সাধারণ সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথেরো, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথেরো, সৈয়দবাড়ি ধর্মপ্রবর্তন বিহারের অধ্যক্ষ পরমানন্দ থেরো, হিন্দুধর্মীয় পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অসীম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য আঞ্চলিক চার্চ সংঘের প্রধান পালক রেভা. সহখরীয় বৈরাগী, রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী আস্তানা শরীফের পীরজাদা মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, সরফভাটা মোয়াবিনুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবুল বয়ান প্রমুখ বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় যোগ দেন। যুগ যুগ ধরে রাঙ্গুনিয়ায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে একসাথে বসবাস করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে, বলেন তাঁরা।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাওলানা আইয়ুব নূরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার-সহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর পরপরই রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে ইউজিডিপি প্রকল্পের আওতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ ও ২৫ হাজার গাছের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে আওয়ামী লীগ যে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেগুলো বন্ধ করে বিএনপি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। মানুষের কল্যাণে জননেত্রী শেখ হাসিনা তা আবার চালু করেছেন।’