শুধু বনের পশু নয়, কোরবানি হোক মনের পশু

মঙ্গলবার, জুলাই ২০, ২০২১,১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
0
182

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

পবিত্র ঈদুল আযহা বছর ঘুরে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। হিজরী বর্ষের দ্বাদশ মাস জিলহজ্বের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ উদযাপন করে সারা বিশ্বে মুসলমানরা। অনন্য এক উৎসব ঈদ। ঈদ অন্য জাতি ও ধর্মের উৎসবের মতো নয়। অকুণ্ঠ আবেদন ধ্বনিত হতে থাকে, আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদন ও মানবতার কল্যাণে নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর।

নিজ পুত্র ইসমাঈল আঃ-কে মহান আল্লাহতা’য়ালার আদেশে কুরবানী করা হয়। হযরত ইব্রাহীম আ: এর ইচ্ছা ও ত্যাগের কারণে আল্লাহর কাছে নিজেদের সোপর্দ করে দেয়ার লক্ষ্যে মুসলমানরা ঈদুল আযহা উদযাপন ও পশু কুরবানী করে পবিত্র হজ্বের পরের দিন। আল্লাহতা’য়ালা ইব্রাহীম আ:এর আনুগত্যে সন্তুষ্ট হন এবং নির্দেশ দেন পুত্রের পরিবর্তে তাকে পশু কুরবানী করার। মুসলমানরা পশু কুরবানী করেন ইব্রাহীম আঃ-এর সে সুন্নাত অনুসরণে ঈদুল আযহার সময়। মুসলমানদের ঈদ দু’টি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। পহেলা সাওয়াল ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয় একমাস রোযা পালনের পর। ঈদুল আযহা এর দু’মাস দশ দিন পর অনুষ্ঠিত হয়।

মুসলমানরা প্রতি বছর ১০ জিলহজ্ব ঈদুল আযহা উদযাপন করে। এদিনের সবচেয়ে উত্তম এবাদত হলো ঈদের নামাযের পর পশু কুরবানী করা। তিন দিন ধরে কুরবানী করা যায় ১২ জিলহজ্ব পর্যন্ত। মুসলমানরা ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায শেষে ঈদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সকাল সকাল গোসল সেরে তারা ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হয় উত্তম পোশাক পরে। পুরুষেরা সুগন্ধি আতর ব্যবহার করে। ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া হয় আর অন্য পথ দিয়ে ফিরে আসা হয় সুন্নত অনুযায়ী। ঈদুল আযহাও শুরু হয় ঈদুল ফিতরের মতো দুই রাকাত ওয়াজিব নামায দিয়ে। ইমাম খুতবা প্রদান করেন নামায শেষে । খুতবা শোনা ওয়াজিব। প্রতিটি পরিবার একটি মেষ বা ছাগল কিংবা উট বা গরু কুরবানী দেয়। গরু, ছাগল, উট বা বকরীর মতো গৃহপালিত পশু সুস্থ সবল ও নিখুত হতে হবে কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য। কুরবানী করা যাবেনা রোগাক্রান্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক পশু। কুরবানী ওয়াজিব সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য। সাধারণত তিন ভাগ করে এর এক ভাগ গরীব-দু:খী, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এবং অপর ভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখা হয় কুরবানীর গোশত। আল্লাহর নামে দেয়া হয় কুরবানী। আল্লাহর কাছে এর গোশত, রক্ত বা অন্য কোন কিছু পৌঁছায় না, তাঁর কাছে যায় কুরবানী দাতার নিয়ত। তাই বিশুদ্ধ নিয়ত প্রয়োজন কুরবানীর জন্য। কুরবানীদাতারা কুরবানী করা পশুর গোশত খেয়ে থাকেন। মূলত বিলিয়ে দেয়া হয়ে থাকে কুরবানীর পশুর অধিকাংশই গরিব, মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে। ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে সবাই উৎসবে মেতে ওঠে ঈদের এই দিনে। পেটপুরে খেতে পারে দুঃখীরা। ছেলে-বুড়ো সবাই নতুন পোশাকে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে আনন্দ-উৎসবে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মেলবন্ধন রচনা করে সাম্য-মৈত্রীর। ঈদুল আযহার সময় পশু কুরবানী করা ধর্মীয় এবং মানবিক দিক থেকেই খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ ।

কোরবানিতে যে মহান ত্যাগের দৃষ্টান্ত রয়েছে, তা থেকে আমরা জ্ঞান লাভ করব ও শিক্ষা নেবো। কোরবানির আলো আমাদের ব্যক্তি ও সমাজজীবনে মানবতার দীপ জ্বালিয়ে সারা বিশ্ব উদ্ভাসিত করুক। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশায় আলোকিত জীবন সবার হৃদয় ছুঁয়ে দিক। শুধু বনের পশু নয়, মনের পশুও কোরবানি হোক। দূরের, কাছের, আপন, পর, সকলের প্রতি মানব সংবাদের পক্ষ থেকে অন্তহীন ভালবাসার ঈদ মোবারক।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে