শীতের আগমনী বার্তা; কুড়িগ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯,৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ
0
90

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুড়িগ্রাম জেলার গাছিরা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনী বার্তার শুরু থেকেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছেন তারা। বেড়ে উঠেছে অবহেলায়-অযেত্ন পড়ে থাকা গ্রামবাংলার খেজুর গাছের কদর। শীতের আগমনী তীব্রতা আস্তে আস্তে বেড়ে যাওয়ায় খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা হাতে দা, বাটাল ও কোমরে রশি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে ছাছা-ছেলা করেন এবং ছেলা স্থানে নল বসান। গ্রামগঞ্জের প্রতিটি বাড়ীর খেজুর গাছে।

গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি বা মাটির পাত্র বেধেঁ দেন রসের জন্য। পরের দিন সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের মৌসুম জুড়ে গ্রামাঞ্চলে খেজুরের রস দিয়ে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবে নানান রকম পিঠা তৈরি করা হয়। ভাপাপিঠা, পুলিপিঠা, পাঠিসাপটা, রসপিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায় খেজুর গাছের রস আর গুড় দিয়ে। গ্রামাঞ্চলে কোন কোন বাড়ীতে নতুন মেহমানদের ডেকে এনে খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করে। এ রস অত্যন্ত সুস্বাধু ও মানবদেহর উপকারিতার কারনে মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই খেজুর রস। তাই শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসতো গ্রামবাংলার খেজুর রস খেতে। শীতের সকালে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠে। এছাড়াও শীতের সকালে খেজুর রসের গুড় দিয়ে তৈরি ভাপাপিঠা খেতে গ্রামাঞ্চলের বাজারের দোকানগুলোতে বেশ ভিড় জমে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের গাছি গুনজোর আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীতের আগমনী বার্তা মৌসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ শুরু করি। আমি প্রায় ৩৫-৩৬ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত আছি এবং এই কাজ করেই আমি স্বাবলম্বী। আমি খেজুরের রস বিক্রি করিনা। এই সুস্বাদু রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের পাটালি এবং নালীগুড় এর ফলে কাজের চাপে দম নেওয়ার সময় পায় না তারা। তিনি গুড় বিক্রি করেন পাইকারি। নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, বালারহাট, ফুলবাড়ী, খড়িবাড়ী বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এসে তার বানানো গুড় কিনে নেয়। তিনি প্রতি কেজি গুড় ১০০ টায় বিক্রি করেন। তিনি আরও জানান খেজুরের রস ও গুড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

হোসেন আলী (৪৯) গাছি জানান, একটি খেজুর গাছ থেকে ৮-১০ বছর পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। প্রতি বছরে ৩-৪ মাস খেজুর গাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যত বেশী শীত পড়বে তত মিষ্টি রস পাওয়া যাবে। খেজুর রস আর গুড় বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, শীতের পিঠা এবং পায়েসের জন্য খেজুরের রস ও গুড়ের বাড়তি চাহিতা রয়েছে।

ফুলবাড়ী আবেদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান জানান, শীতের সকাল ও খেজুর রস এ দুইটিই আমার খুব প্রিয়। ছোটবেলায় খেজুরের রস খাওয়া আমার অভ্যাসে পরিনত কয়েছিল। প্রায় রোজ সকালে রাস্তায় দাড়িঁয়ে থাকতাম কখন খেজুর রস বিক্রেতা আসে; ২ টাকা দিয়ে এক গ্লাস কি যে একটা অনুভৃতি এটি যারা খেজুর রস খাননি তাদেরকে বুঝাতে পারবোনা। রসের পাশাপাশি খেজুরের গুড়ও আমার কাছে খুব প্রিয়।

মিড়েরবাড়ী (ঝাড়খোলার) শ্রী চন্দন চন্দ্র রায় জানান, খেজুর গুড় দিয়ে বানানো পায়েস আমার প্রিয় খাবার এছাড়াও খেজুর পাতা দিয়ে আকষর্নীয় মজবুত পাটি আর হাতপাখা তৈরি হয়।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে