শরীয়তপুরের চিশতীনগরে আন্তর্জাতিক সেমিনার :ব্যতিক্রমী সফলতার প্রেক্ষাপট ও অনুষঙ্গ

মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০১৯,৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ
0
773

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

পর্যবেক্ষক (শাহরিয়ার আহমদ): শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলাধীন চিশতীনগর মূলত: ইসলামী সুফী চেতনা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার ভাষায় “লক্ষ মানুষের আত্মিক ও জাগতিক কল্যান কেন্দ্র” হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। ব্যপক জনকল্যাণমুখিতা, অসাম্প্রদায়িকতা, অরাজনৈতিকতা, ধর্মীয় চেতনা ও অনুশীলনে আত্মিক প্রসারতা এবং সর্বোপরি ব্যতিক্রমী শৃঙ্খলা এ সব অসাধারণ গুনাবলী মানুষের অন্তরের কাছাকাছি অবস্থান তৈরী করে এ প্রতিষ্ঠানকে এক ব্যতিক্রমী মাত্রায় বৃস্তিতি দান করেছে।


মাননীয় প্রধান অতিথি জনাব এ,কে,এম এনামুল হক শামীম , (উপমন্ত্রী ,পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়)        


গত ১২ ফেব্রুয়ারী তারিখে এই নিভৃত পল্লীর কোলে প্রায় সাড়ে চার হাজার দর্শক শ্রোতার নিবিষ্ট উপস্থিতিতে চূড়ান্ত সফলতা নিয়ে সম্পন্ন হল একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার। দেশ বিদেশের প্রফেসর, ডকটরেট, গবেষকদের নিয়ে গর্বিত বক্তা প্যানেলের ভাষ্যকারগণ বিভিন্ন দর্শন, দীক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রায় সাড়ে চার হাজার দর্শক শ্রোতাকে মন্তমুগ্ধ করে রেখেছিলেন একটানা প্রায় ১২ ঘন্টা ব্যাপী। সকলের জন্য ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ইভনিং টি ইত্যাদির শুধু সুব্যবস্থা নয়, রেকর্ড মাত্রায় সুশৃঙ্খল পরিবেশন উপস্থিত সকলের জন্য অভিজ্ঞতার মাইল ফলক হয়ে রয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব এ কে এম এনামুল হক শামীম এম পি এবং সভাপতিত্ব করেছেন চিশতীনগরের সাজ্জাদানশীন হযরত শাহজাদা সুফি সৈয়দ গোলাম মোনয়েম হোসাইনী চিশতী। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্রে যিনি অতুলনীয় মেধা ও পরিশ্রমকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঢেলে দিয়ে এ অনুষ্ঠান আয়োজন ও সম্পন্ন করেছেন তিনি চিশতীনগরের মোন্তাজিম (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) পীরজাদা প্রকৌশলী সৈয়দ গোলাম মুরসালিন।


সাজ্জাদানশীন হযরত শাহজাদা সুফি সৈয়দ গোলাম মোনয়েম হোসাইনী চিশতী (সভাপতি)


সকাল ৯ টার মধ্যে ক্যামেরা ইত্যাদি নিয়ে সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করার আগেই মনে হল লেখার বিষয় হাতে পেয়ে গেছি। অনেকটা চমকেই গেলাম আয়োজনের বিশালত্ব, পারিপাট্য, সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা দেখে। জেনে ছিলাম যে, জনাব মুরসালিন এক জীবনে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। আয়োজনের শৈল্পিক মান দেখে সে কথাই বার বার মনে হল এবং অভিভূত হলাম।
সেমিনারের বিষয় বস্তু নিয়ে বলতে গেলে একটি পৃথক নিবন্ধ রচনা করা প্রয়োজন। বিষয় বস্তুর মূল উপাদান ছিল, এ উপমহাদেশের সফলতম ইসলাম প্রচারক হযরত খাজা গরীব নাওয়াজ মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ভালবাসা দিয়ে মানুষের অন্তর জয় করে সেখানে ইসলামের প্রতি গভীর বিশ্বাসের চিরস্থায়ী ইমারত তৈরী করে দিয়েছেন যা কখনো আর নষ্ট হয়নি।


(বিশেষ অতিথি) তাসমিমা হোসেন, সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক


অনুষ্ঠানের অন্যতম বাণী সমূহ ডিসপ্লে করা ছিল: “সবার জন্য ভালবাসা, বিদ্বেষ নয় কারূর জন্য”, “ রোযা ভাঙ্গার কাফ্ফারা আছে কিন্তু হৃদয় ভাঙ্গার কাফ্ফারা নেই”, “জীবের সেবা ব্যতীত জায়নামাযে বসে নামাজ পড়লে ও তসবিহ গুনলে এবাদত হবেনা” ইত্যাদি। এ সবই হযরত খাজা গরীব নাওয়াযের পবিত্র মানবতার বানী। হযরত খাজা গরীব নাওয়ায মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) সুদূর ইরান থেকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পৌত্তলিকভূমি এই ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য চল্লিশজন সম্পূর্ণ নিরস্ত্র দরবেশ নিয়ে এসে একবারে পৃথ্বিরাজের সামরিক রাজধানী আজমীরে এসে পবিত্র আস্তানা স্থাপন করেছিলেন। প্রেম দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে, মানবতার মূর্তপ্রতীক হয়ে তিনি কোটি মানুষের অন্তর জয় করে ছিলেন। আজো তার ইন্তেকালের প্রায় আটশত বছর পরেও তার পবিত্র দরবারে সকল ধর্মের সকল বিশ্বাসের লক্ষ লক্ষ মানুষের ¯ স্রোত বয়েই চলেছে অবিরত। তাঁর এই অদ্বিতীয় মানবতার আদর্শকে শরীয়তপুর অঞ্চলের বিদগ্ধ শিক্ষিত জনগোষ্ঠির কাছে পৌঁছে দিবার উদ্দেশ্য নিয়েই এই সেমিনারের আয়োজন।


প্রকৌশলী সৈয়দ গোলাম মুরসালিন, প্রধান আয়োজক

সেমিনারের প্রধান উদ্যোক্তা প্রকৌশলী সৈয়দ গোলাম মুরসালিন ইংরেজীতে প্রদত্ত তার সংক্ষিপ্ত ও সাবলিল স্বাগত ভাষণে বলেছেন, “It is a reality not a dream, it’s history not a fiction that in this subcontinent Islam has kept uphold the flag of humanity over everything – even the rituals of religion’’.(এটা বাস্তাবতা – স্বপ্ন নয়, এটা ইতিহাস – গল্প নয় যে, এ উপমহাদেশে ইসলাম মানবতার পতাকাকে ধর্মীয় আচারের উপরেও উড্ডীয়মান রেখেছেন)। বস্তুত: ইসলামের এই মূল আদর্শকে হাজার হাজার দর্শক শ্রোতার অনুভূতিতে গেঁথে দিয়ে জঙ্গীবাদের অপবাদে জর্জরিত ইসলামের সঠিক রূপকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন পূর্ণ সফলতার সাথে। এই মূল লক্ষ্য অর্জনেও এই সেমিনার শতকরা একশ ভাগেরও বেশী সফলতা অর্জন করেছে।


ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা ও সৈয়দ গোলাম মুঈনুদ্দীন চিশতী, মডারেটরস


অনুষ্ঠানের এক অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে দুই জন মডারেটর বা সঞ্চালকের অবর্ণনীয় দক্ষতার কারনে। ডা: সৈয়দ গোলাম মোগনী মাওলা এবং সৈয়দ গোলাম মুঈনুদ্দীন চিশতী দুজনেই চিশতীনগরের মহান প্রতিষ্ঠাতা হযরত কোতবুল আলম শামপুরী রহ: এর পৌত্র এবং তারা দক্ষতা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ উদাহরণ প্রদর্শন করেছেন।
মূল অনুষ্ঠান শেষ হবার পর চিশতীয়া তরিকার অনুসৃত সুফি সংগীতের অনুষ্ঠান চলা কালেও জনাকীর্ণ উপস্থিতি এ অসাধারণ অনুষ্ঠানের সাফল্যের স্মৃতিকে অম্লান করে রেখেছে।
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটিকে ব্যতিক্রমী সফলতার গৌরব প্রদান না করার কোন সুযোগ কারোর কাছেই নেই।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে