রূপগঞ্জে বিরাজ করছে ছেলে ধরা আতঙ্ক

রবিবার, জুলাই ২১, ২০১৯,৪:৩১ পূর্বাহ্ণ
0
28

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

রাজধানী ঢাকার পাশের রূপগঞ্জে হঠ্যাৎ করেই বিরাজ করছে‘ ছেলে ধরা’ আতঙ্ক । ছেলে ধরা চক্র এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শিশু-কিশোরদের তুলে নিয়ে হত্যা করে মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন গুজবে ছড়িয়ে পড়েছে  সর্বত্রউপজেলায়। অভিভাবক মহল এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে । প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের সতর্কতা করা হচ্ছে । স্কুলগুলোতে  উপস্থিতি কমে গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের। 

ছেলে ধরা আতঙ্কে গ্রামের শিশু-কিশোররা ভয় পাচ্ছে ঘর থেকে বের হতে । গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছেলে ধরার খবর পাওয়া গেলেও মেলেনি এর সত্যতা । ওইসব এলাকাবাসী দাবি করেছেন, ছেলে ধরার ঘটনা ঘটেছে। তবে কাউকে নিতে পারেনি। আটকও করা যায়নি কাউকে । তবে প্রশাসন বলছে, এটা নিছক গুজব। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি চক্র প্রচার করছে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান । সেখানে অন্তত এক লাখ শিশু-কিশোরের কল্লা (মাথামুন্ড) দিতে হবে। সে মতে ৪২টি দল সারাদেশে শিশু-কিশোরদের কল্লা সংগ্রহে কাজ করছে। এমনই গুজব ছড়িয়ে পড়ছে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং উপজেলার প্রতিটি ঘরে ।

গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোরদের অভিভাবকরা । স্কুলে-স্কুলে জারি করা হয়েছে সতর্কাবস্থা। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  আগের চেয়ে কমে গেছে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার। অনেক অভিভাবক ভয়ে সন্তানদের স্কুলেও পাঠাচ্ছেন না। অথচ রূপগঞ্জের কোথাও কল্লা কাটার ঘটনা ঘটেছে- পাওয়া যায়নি এমন খবর বা তথ্য। 

এদিকে, গত কয়েকদিনে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালি, মাঝিনা, বড়ালু, কামশাইর, ছনেরটেক, দাউদপুর ইউনিয়নের পুটিনা, কুলিয়াদি, জিন্দা রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মধুখালিসহ বেশ কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ছেলে ধরার খবর । তবে কোনো শিশু-কিশোরকে ছেলে ধরা সদস্যরা নিতে পারেনি বলে জানা গেছে এলাকাবাসী সূত্রে । 

আড়িয়াব এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, শুনেছি তেতলাবো এলাকা থেকে এক শিশুকে ছেলে ধরা সদস্য সিএনজিযোগে তুলে নিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া গেছে। পরে শিশুটির চিৎকারের শব্দ শুনে ছেলেটি ফেলে রেখে সিএনজিটি দ্রুত বেগে চলে যায়। 

ছনেরটেক এলাকার মোবারক মিয়া বলেন, গত রবিবার দুপুরে ছনেরটেক এলাকায় এক মহিলা ঢুকে। তার ব্যাগে লবণসহ নানা কিছু ছিল। তাকে ছেলে ধরা সদস্য সন্দেহ করে গ্রামবাসী আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মহিলাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত মনে হওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, অপরিচিত লোক দেখলেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বিপাকে পড়ছে ভিক্ষুক-ফেরিওয়ালা। অপরিচিত কেউ ভিক্ষা চাইতে গেলে গৃহস্থরা ভিক্ষা না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। উপজেলার কোথাও না কোথাও শিশু ধরে নিয়ে গলা কাটছে এমন গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মাঝে। আবার কোথাও কোথাও ছেলে ধরা চক্র ধরতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। প্রায় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ছেলে ধরা’র খবর আসছে। তবে ঘটনা অনুসন্ধান করতে গেলে তার সুনির্দিষ্ট কোনো সত্যতা মিলছে না। 

উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, এটা গুজব। একটি মহল রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশে এমন গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি এলাকাবাসীকে এমন মিথ্যা গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি বা শুনিনি। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ধরনের ঘটনার কোনো সত্যতা পাইনি এটা নিছক গুজব। 

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে