[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
সাব্বির আহমেদ, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : ছোট বড় বিভিন্ন জাতের ইঁদুরের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধান চাষিরা। গাছের আগা থেকে শীষ বের হবে এমন সময় কাঁচা ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুর। গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পেয়ে অনেক কৃষক লোকসান গুণছেন। সেই লোকসান মাথায় নিয়ে আমন চাষাবাদে নেমেছেন তারা। কিন্তু আমন ধান ক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। আমনের মাঝা-মাঝি সময়ে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,আমনের আবাদ গতবারের তুলনায় এবার বেশি হয়েছে। গত বছরে ২১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। গতবারের আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার উপজেলায় ২১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ইদুরের উৎপাত দেখলে মনে হচ্ছে কে যেন ধারালো কাচি দিয়ে ধানক্ষেত কেটে দিয়েছে। অনেক কৃষক ইদুর মারার জন্য ওষুধ ব্যবহার করেও ফল মিলছে না। এবছর মাঠের ধান ভালো হলেও ইদুরের উৎপাতের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার পকম্বা গ্রামের এমাজউদ্দীন, রাতোর গ্রামের আব্দুল কাদের, লেহেম্বা গ্রামের নজরুল ইসলাম, বাজেবকসা গ্রামের রাজন মিয়া, মতিন মিয়াসহ বেশ কিছু কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে ধান রোপণের কিছুটা সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষের দিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় ও কৃষকদের চেষ্টায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন তারা। এ দিকে সবুজে সবুজে ভরে উঠছে পুরো মাঠ। সেইসাথে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। এমন সময় ক্ষেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে যেন কৃষকের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ বরাবর ঈঁদুর কেটে দেয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা ক্ষেতে বিষমাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
তবে কোন কীটনাশক প্রয়োগ করে ইঁদুরের উপদ্রব্য কমাতে না পেরে ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে সনাতন পদ্ধতিতে বাড়ীতে বসে বাঁশের তৈরী ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরী করে ফসল রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা।
ভন্ডগাঁও গ্রামের কৃষক কবীর বলেন, এই বছর ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তার ৩.৫ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর। তাই নিরুপায় হয়ে বাড়ীতে নিজে বাঁশ দিয়ে ফাঁদ তৈরী করে ক্ষেতে বসে রেখেছি। কিছুটা হলেও কাজ হচ্ছে ১বিঘা জমিতে ফাঁদে এ পর্যন্ত আটকা পড়েছে ১৮টি ইঁদুর। বাঁশের ফাঁদ বসিয়ে প্রতিরাতে ২/৩ টা করে ইঁদুর মারছি। তবুও ইঁদুরের অত্যাচার কোন ভাবেই কমছে না।
দেখা গেছে আমনধান ক্ষেতে কয়েক ভাগে ৫/৬ ফিট করে জায়গায় ধান গাছের গুড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে। শুকনো ফসলের মাঠের চেয়ে পানি জমানো ফসলের ক্ষেতে বেশি কাটছে। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষার্থে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো হয়েছে বাঁশের তৈরী ইঁদুর মারার ফাঁদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে ইঁদুর নিধন প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশীয় পদ্ধতিতে ইঁদুর মারার ফাঁদ,গর্তে পানি ভরিয়ে ইঁদুর তাড়ানো চেষ্টা করছি। ইদুর মারার জন্য ল্যানিরাট, ক্রর্যাটই জাতীয় কীটনাশক ইদুর খেলে পাগল হয়ে অন্য জায়গাই মরে। আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছি এবং এর ফলও তারা পাচ্ছে।