[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০(বৃহস্পতিবার) বিকাল ৩:৩০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটির যৌথ উদ্যোগে অনলাইনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম এনালিস্ট সোহেল রানা, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন এবং প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতিনিধি নাজমা আরা বেগম পপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন সিডও দিবস পালন সংগঠনের একটি নিয়মিত কর্মসূচি। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের পরিপূরক এই দলিলটিকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নানাভাবে ব্যবহার করে আসছে। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার সিডও সনদ অনুমোদনের পর ৪ টি ধারার সংরক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য নিয়মিতভাবে এডভোকেসি ও লবি করে আসছে। এর ফল শ্রুতিতে আইন বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নারীবান্ধব আইন গৃহীত হয়েছে। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি পর্যায়ে গৃহীত কিছু কর্মসূচি নারীর অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড মহামারীতে নারীও কন্যা প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এর জন্য নারীর প্রতি বৈষম্য কে দায়ী করেন। তিনি এবারের স্লোগান তুলে ধরে বলেন সরকার যেসকল নারীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তার সাথে সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন না দিলে সেগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে না।
রেকর্ডকৃত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বলেন একটি দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সিডও সনদ গৃহীত হয়। তিনি এই সনদ বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন সামাজিক বৈষম্য দূর করে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ । এটি সকল ক্ষেত্রে নারীর সমতার কথা বলে। সমতা তখন আসবে যখন সমান সুযোগের সাথে ফলাফল ও সমান আসবে। এটি নিশ্চিত করতে হলে অনুমোদনের সাথে সাথে পূর্ণ বাস্তবায়ন ও দরকার। তারজন্য রাষ্ট্রের ও দায়বদ্ধতা আছে।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস বলেন সিডও হলো নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দলিল। তিনি েএই সনদের ধারাবাহিক পর্যালোচনা করে বলেন নারীর প্রতি সহিংসতার বড় কারণ সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন সিডও সনদ অনুমোদনের ৩৬ বছর পরও ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন করতে হয়। ধারা-২ হলো সিডও সনদের মূল প্রাণ।এটির উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার না হলে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় শুভঙ্করের ফাকি থেকেই যাবে। নারীর সকল অগ্রগতির পথে মূল চ্যালেঞ্জ হলো নারীর প্রতি সহিংসত। নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতিনিধি নাজমা আরা বেগম পপি বলেন সিডও সনদে প্রতিবন্ধী নারীদের বিষয়টি ৯০ এর দশকে অন্তর্ভৃক্ত করা হলেও বাস্তবতা অনুসারে দেখা যায় নারী প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি এখনো ক্রস কাটিং ইস্যূ হিসেবে দেখা হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিবেদনে প্রতিবন্ধী নারীদের বিষয়টি সামান্যই উপস্থাপিত হয়। ৩৬ বছরেও সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন হয়নি, নারীর প্রতি সহিংসতাও যেখানে বেড়েছে সেখানে প্রতিবন্ধী নারীদের অবস্থা আরো প্রান্তিক। তিনি সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণের সময় প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংসতার চিত্র আলাদাভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন বর্তমান সরকার নারী বান্ধব, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি হয়েছে। তবে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সিডও সনদের ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার না হওয়ার জন্য মনস্তাত্তিক দিক কে তুলে ধরেন। এরজন্য সাংবাদিকতাসহ প্রতিটি সেক্টরকে আরো গভীরে কাজ করার করা বলেন। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমতার কথা বলা হলেও সিডও সনদের ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার না করা সাংঘর্ষিক। এই সাংঘর্ষিক বিষয়ে তিনি আইনের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য সংগঠনকে আহবান জানান।
ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম এনালিস্ট সোহেল রানা বলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশ সিডো সনদকে কাজের মূল ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে এটি নারীর উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। ২০১৬ সালে সরকারি ও বেসরকারী প্রতিবেদনে ৪০ টি সুপারিশের কথা বলা হয়। এটি ততটা বাস্তবায়িত হয়নি। অভিন্ন পারিবারিক আইন, নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি সিডও সনদ বাস্তবায়নের জন্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে এর পেছনে থাকা বাধাসমূহ চিহ্নিত করতে আরো গভীরে কাজ করার জন্য বলেন। একইসাথে সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সংস্থাগুলোকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।
সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা। তিনি বলেন প্রায় তিন দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সিডও সনদকে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
প্রস্তাবনা পাঠ করেন আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য লূনা নূর।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবারের প্রতিপাদ্য তুলে ধরে বলেন সিডও সনদ নারীর প্রতি বৈষম্যদূরীকরণের হাতিয়ার। এই বৈষম্য দূর করতে হলে নারীকে নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে হবে। এর জন্য সামাজিক সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে রাস্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সিড্ও ধারার সংরক্ষণ প্রত্যাহারে সরকারের দায় সরাসরি জড়িত। এই সনদের সুফল পেতে হলে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে, অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিতে হবে ।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান
অনলাইন অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনসমূহ: ব্র্যাক, একশন এইড, টানিং পয়েন্ট, এডাব, আদিবাসী ফোরাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বিএনডব্লিউএলএ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র,গণসাক্ষরতা অভিযান,জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম,ঢাকা ওয়াইডাব্লিউসিএ, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এবং সাংবাদিক সহ প্রায় ৭২ জন অংশগ্রহণ করেন।