ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের সেবা প্রদানের জন্য কাজ করছে জাফলং গ্রীন রিসোর্ট

সোমবার, আগস্ট ৫, ২০১৯,৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ
0
834

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

মোঃবাবলু বখত, প্রতিষ্ঠাতা ,জাফলং গ্রীন রিসোর্ট

জনাব মোঃ বাবলু বখত ১৯৭৩ সালের ১০ মে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলংয়ের পাথরটিলা গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোঃ গনি বখত এবং মাতা মোসাম্মৎ সখিনা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে সর্বজ্যেেষ্ঠ তিনি। জনাব মোঃ বাবলু বখত জাফলংয়ের স্বনামধন্য পাথর ব্যবসায়ী। তিনি জাফলং স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সভাপতি। এছাড়াও তিনি যুক্ত আছেন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে। বর্তমানে তিনি জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ করছেন এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে পর্যটন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তিনি জাফলং এর পর্যটন কেন্দ্রকে উন্নত করার লক্ষ্যে এবং পর্যটকদের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে মেঘমালা রেস্টুরেন্ট এবং জাফলং গ্রীন রিসোর্ট স্থাপন করেছেন। জনাব মোঃ বাবলু বখত সম্প্রতি মানব সংবাদ পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন মানব সংবাদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ। মানব সংবাদ অনলাইনে পোর্টালে এই গুণী ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো।

মানব সংবাদ : জাফলং গ্রীন রিসোর্ট প্রতিষ্ঠানটি শুরুর প্রেক্ষাপট সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছি।

মোঃবাবলু বখত: ধন্যবাদ আপনাকে। আমি অনেক দিন যাবত জাফলংয়ে আছি।ছোট থেকে বড় হয়েছি এখানে। ভালো কোন রিসোর্ট বা হোটেল নেই আমাদের এই এলাকায়। সরকারি হোটেল থাকলেও সেটি খুব বেশি উন্নত মানের নয়। অনেক পর্যটক এসে এখানে থাকার মত জায়গা পায়না। জাফলং-জিরো পয়েন্ট এই স্পটের আশেপাশে ভালো কোন রিসোর্ট নেই। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে আমি এই জায়গাটি ক্রয় করি এবং একটি বাগান বাড়ি তৈরি করি। এখানে অনেক পর্যটক ও অফিসারগণ ঘুরতে আসে। কিন্তু তাদের থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই, পোশাক পরিবর্তন করার মত কোন ভাল স্থান নেই, এমনকি বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোনো সুযোগ সুবিধা নেই।  এমন পরিস্থিতিতে আমি চিন্তা করলাম এই পর্যটকদের জন্য কিছু করার। তাদের সেবা প্রদান করা ও জাফলংয়ের পর্যটন শিল্পকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য আমি এই রিসোর্টটি তৈরি করেছি। কেননা আপনারা জানেন বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে সিলেটের জাফলং। কিন্তু থাকার মত জায়গার অভাবে পর্যটকগণ সকালে এসে বিকালে চলে যাচ্ছে। জাফলং এসে দুই তিন দিন ঘুরে দেখতে পারছে না এই পর্যটন কেন্দ্রটি।  ফলে এই পর্যটন কেন্দ্রটির বিশেষত্ব তারা তেমন ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে না। এই জাফলং এর অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে বিছানাকান্দি, মায়াবী ঝর্ণা, রাতারগুল, লালাখাল, খাসিয়া পল্লী, জাফলং সমতল চা বাগান ও তামাবিল স্থলবন্দর ইত্যাদি। এই জায়গাগুলো ভালভাবে ঘুরে দেখতে  ২-৩ দিন সময় প্রয়োজন। আর তা সম্ভব হচ্ছে না যথাযথ থাকার জায়গার অভাবে। তাই আমি পর্যটকদের জন্য এই রিসোর্টটি স্থাপন করেছি এবং খুবই সাড়া পাচ্ছি। 

জাফলং গ্রীন রিসোর্ট এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃবাবলু বখত: মানব সংবাদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ এর সাথে সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় একটি বিশেষ মুহূর্ত।

মানব সংবাদ :  বর্তমান সময়ে দেশের পর্যটন খাতে সবচেয়ে প্রধানতম চ্যালেঞ্জ কী ?

মোঃবাবলু বখত: বর্তমান সরকার দেশের পর্যটন খাতকে আরো অধিকতর উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পারি দেশের পর্যটন খাতের জন্য আলাদা বিশেষ বাহিনী তথা টুরিস্ট পুলিশ টিম গঠন করা। যারা প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটন শিল্পের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য নিরলস কাজ করছে। তারপরও এই পর্যটন খাতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলো পর্যটন খাতের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। বিশেষ করে আমাদের জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।যেমনঃ-  পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থার অভাব, পানির সমস্যা, রাস্তাঘাট তথা যোগাযোগব্যবস্থার সমস্যা ইত্যাদি। আমরা যারা সাধারণ ব্যবসায়ী বা মালিক আছি তারা কেবল হোটেল বা একটি রিসোর্ট তৈরি করতে পারবো শুধুমাত্র।  কিন্তু অবকাঠামোগত যে সকল পরিবর্তন প্রয়োজন, তা শুধুমাত্র সরকার বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারাই সম্ভব। যদি এই সকল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা যায় তাহলে পর্যটক সংখ্যা পূর্বের তুলনায় আরো বাড়বে। আগে দেখা যেত শুধু শীত মৌসুমে পর্যটকরা ঘুরতে আসতো। তবে এখন প্রায় ১২ মাসই পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব হলে পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়বে বলে আমি যথেষ্ঠ আশাবাদী।

মানব সংবাদ :  জাফলং গ্রীন রিসোর্ট কী ধরনের সেবা নিয়ে কাজ করছে ?

মোঃবাবলু বখত: জাফলং গ্রীন রিসোর্ট একটি আধুনিক মানসম্পন্ন রিসোর্ট হিসেবে সকল পর্যটকদের সেবা প্রদান করতে চায়। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জাফলং গ্রীন রিসোর্ট। আমরা আপাতত পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা, খাওয়া-দাওয়া ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ উপভোগের সুবিধা ও সেবা প্রদান করছি। গ্রাহক সেবার চাহিদা পূরণের নিমিত্তে আমরা আরও একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ, কিডস জোন ও রাইডস এবং সুইমিং পুলের ব্যবস্থা করছি।

মানব সংবাদ :  প্রতিযোগীতামূলক বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য   আপনারা কী কী  কৌশল ব্যবহার করছেন ?

মোঃবাবলু বখত: ব্যবসায়িক সেক্টরে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কোন কোন ব্যবসায়ী এই প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচক রূপে গ্রহণ করে আবার কোন কোন ব্যবসায়ী একে নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে। তবে আমি ব্যবসায়িক সেক্টরের এই প্রতিযোগিতাকে সাধুবাদ জানাই। কেননা প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই কেবলমাত্র ব্যবসায়ীক সেক্টরের জন্য নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এতে করে একদিকে যেমন কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব, অপরদিকে ব্যক্তির ব্যবসাকে আরো বেশি গতিশীল করা সম্ভব।প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য আমি সব সময় আমার সর্বোচ্চ দক্ষতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের অনেক নামকরা পাঁচ তারকা, তিন তারকা হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সেগুলোর মতো হয়তো হতে পারব না, তবে নিজের বুদ্ধি ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বাজারে নিজের অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।

জাফলং গ্রীন রিসোর্ট এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃবাবলু বখত: মানব সংবাদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ এর সাথে সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় একটি বিশেষ মুহূর্ত।

মানব সংবাদ :  সমজাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাদের বিশেষত্ব কি ?

মোঃবাবলু বখত: প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য বা বিশেষত্ব থাকে। যার কারণে সমজাতীয় অন্য প্রতিষ্ঠানের থেকে নিজের প্রতিষ্ঠানকে ব্যাতিক্রমভাবে উপস্থাপন করা যায়। সমজাতীয় অন্য প্রতিষ্ঠানে হতে আমার প্রতিষ্ঠান পার্থক্য হলঃ- প্রথমত, এখানে নিরিবিল পরিবেশ। পর্যটকগণ তাদের পরিবার নিয়ে অনায়েসে এখানে অবস্থান করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ একটি রিসোর্ট। অনেক সময় দেখা যায়, পর্যটকগণ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসলে একটু আনন্দময় সময় কাটাতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের এখানে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ জোন রয়েছে। যেখানে বাচ্চারা তাদের মনের মত করে সময় কাটাতে পারবে ও খেলাধুলা করতে পারবে। আর অন্য যে বিশেষত্বটি আমাদের রয়েছে তা হচ্ছে রিসোর্টের অসম্ভব সুন্দর ভিউ। রিসোর্টের ছাদে উঠলে পর্যটকগণ অপরুপ মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঝর্ণা দেখতে পাবে এবং এর লোকেশনটা খুবই চমৎকার।

মানব সংবাদ :  কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কেমন বলে মনে করেন ?

মোঃবাবলু বখত: কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য এই সকল প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ব্যাপক বলে আমি মনে করি। যে কোন প্রতিষ্ঠান কার্যসম্পাদন করলে বিভিন্নভাবে লোকবল নিয়োগ করে থাকে। একটি রিসোর্টে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন লোকের প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য প্রচুর লোকবল প্রয়োজন। আমি মনে করি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মানব সংবাদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ,জাফলং গ্রীন রিসোর্ট এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃবাবলু বখত, সিলেট টুরিস্ট জোনের ওসি রতন শেখ এবং মানব সংবাদ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার শাখাওয়াত হোসেনএকটি বিশেষ মুহূর্ত।

মানব সংবাদ :  পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের নিকট আপনাদের বিশেষ কিছু প্রত্যাশা  আছে কী ?

মোঃবাবলু বখত: অবশ্যই আছে। পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের নিকট আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমি আগেই বলেছি, আমরা যারা ব্যবসায়ী আছি তারা একটি হোটেল বা রিসোর্ট করতে পারবো কেবলমাত্র। কিন্তু অবকাঠামোগত পরিবর্তন করতে পারে একমাত্র কর্তৃপক্ষ। কাজেই আমরা  কর্তৃপক্ষ তথা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যেন খুব দ্রুত আমাদের এই সমস্যাগুলো সমাধান করে জাফলংয়ের পর্যটন শিল্পকে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের নিকট আকর্ষণীয় ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়, এবং তা যেন খুব শীঘ্রই করা হয়।

মানব সংবাদ : জাফলং গ্রীন রিসোর্ট নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মোঃবাবলু বখত: জাফলং গ্রীন রিসোর্টকে নিয়ে আমার পরিকল্পনা অনেক। ইচ্ছা আছে এই রিসোর্টকে আধুনিক ও উন্নতমানের রিসোর্টে পরিণত করা। এই রিসোর্টের মাধ্যমে জাফলংয়ের পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলা। অন্যান্য নামকরা রিসোর্টের মতো জাফলং গ্রীন রিসোর্ট যেন ব্যতিক্রমভাবে ভ্রমণপিপাসু মানুষের নিকট পরিচিত হয় ও পর্যটকদের সেবা প্রদান করে এবং দেশ বিদেশে পরিচিতি অর্জন করতে পারে সেই প্রয়াস চালানই আমার লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে