[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। এদের মধ্যে ২০ জন বৃহত্তর সিলেটের। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিউনিশিয়ায় উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি। তাঁরা জানিয়েছেন, ৫১ জন বাংলাদেশি ছিল ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে। এদিকে ওই নৌকার আরোহী বাংলাদেশিদের স্বজনরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য দালালচক্র প্রথমে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছে। এরপর লিবিয়া নিয়ে গিয়ে তাঁদের নির্যাতন করে দেশ থেকে স্থানীয় চক্রের মাধ্যমে আরো আড়াই লাখ করে টাকা আদায় করেছে।
বিডিআরসিএসের পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন বিভাগের পরিচালক জাফর ইমাম শিকদার গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তিউনিশিয়া রেড ক্রিসেন্টের প্রাদেশিক প্রধান ড. মাঙ্গি সিলামের মাধ্যমে নিহত ২৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে , জীবিত চার বাংলাদেশির সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যানুযায়ী। এ ছাড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচজনের। গতকাল সকাল পর্যন্ত মরদেহগুলো দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নেভি ক্যাম্পে ছিল।
বিডিআরসিএস জানায়, নিহতরা হলেন সিলেটের মনির, জিল্লুর রহমান ও কাসিম আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জের আয়াত, লিমন আহমেদ, আব্দুল আজিজ ও আহমেদ, দক্ষিণ সুরমার জিল্লুর, হাউড়তোলার আমাজল, বিশ্বনাথের খোকন, রুবেল ও বেলাল, গোলাপগঞ্জের মারুফ, বিয়ানীবাজারের রফিক ও রিপন, সুনামগঞ্জের মাহবুব নামে দুজন ও নাদিম, মৌলভীবাজার কুলাউড়ার শামিম, বাইল্যাহারের ফাহাদ, নোয়াখালীর চাটখিলের জয়াগ গ্রামের নাসির, ঢাকার টঙ্গীর কামরান, কিশোরগঞ্জের জালাল উদ্দিন ও আল-আমিন, মাদারীপুরের সজীব ও শরীয়তপুরের পারভেজ ও কামরুল আহমেদ মারুফ প্রমুখ।
নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া শিশির বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে ফোনে জানান, বেঁচে যাওয়া ছয়জনের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চারুগা গ্রামে। তাঁরা হলেন, রাজীব, উত্তম, পারভেজ, রনি, সুমন ও জুম্মান।
এদিকে নৌকাডুবিতে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা উৎকণ্ঠায় আকুল। নিখোঁজদের মধ্যে চারজন রয়েছেন শরীয়তপুরের । তাঁরা হলেন নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের পাটদল গ্রামের মৃত হাসেম মোল্যার ছেলে সুমন মোল্যা (২৬), দক্ষিণ চাকধ গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে উত্তম দাস (২৩), হারুন হাওলাদারের ছেলে জুম্মান হাওলাদার (১৯) ও চাকধ গ্রামের মোর্শেদ আলী মৃধার ছেলে পারভেজ মৃধা (২২)।
ডুবে যাওয়া নৌকার আরোহী দক্ষিণ চাকধ গ্রামের আলাউদ্দিন মকদমের ছেলে শিশির মকদম (২২) ও শিশিরের মামা নলতা গ্রামের মিন্টু মিয়া (৩০) তিউনিশিয়ার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পরিবার। গত বছর রমজান মাসের সময়
ওই যুবকরা স্থানীয় ‘মানবপাচারকারী’ কেদারপুর গ্রামের আক্কাছ মাদবরের সঙ্গে লিবিয়া যায়।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, আক্কাছ মাদবরের সঙ্গে ওই যুবকদের চুক্তি হয় লিবিয়া পৌঁছে দেওয়ার জন্য। প্রত্যেকের কাছ থেকে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে লিবিয়া পৌঁছে দিতে । এরপর মাদারীপুরের আলাল হোসেন নামে আরএক দালালের সঙ্গে ওই যুবকদের চুক্তি হয় লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এ জন্য তাদের জনপ্রতি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আলাল হোসেন ওই যুবকদের ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য নৌকায় তুলে দেয়।
নিখোঁজ জুম্মান হাওলাদারের বাবা হারুন হাওলাদার বলেন, জমি বিক্রি করে গত রমজান মাসে দালাল আক্কাছ মাদবরের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দেই। এক মাসের মধ্যে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা। এরপর লিবিয়া থেকে ছেলে মাঝে মাঝে ফোন করে জানাত দালালরা ওদের টাকার জন্য নির্যাতন করছে। এরপর আবার আড়াই লাখ টাকা পাঠাইছি। এখন আমার ছেলেটাই সাগরে ডুবে গেল।
হটলাইন চালু : নৌকাডুবিতে নিহত ও জীবিত বাংলাদেশিদের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বিডিআরসিএস দুটি হটলাইন চালু করেছে। হটলাইন নম্বর দুটি হলো +৮৮-০২-৪৯৩৫৪২৪৬ ও ০১৮১১৪৫৮৫২১। এ ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস চলাকালীন ৪৯৩৫৪২৪৬ নম্বরে এবং ০১৮১১৪৫৮৫২১ নম্বরটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জাতীয় সদর দপ্তর, ৬৮৪-৬৮৬, বড় মগবাজার অথবা ৬৪টি জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটে আহত ও নিহতের স্বজনরা সরাসরি যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ ও রেড ক্রিসেন্টের সেবা নিতে পারবেন।