[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
প্রতি বছরের মত এবারও বাংলাদেশে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘Putting the Breaks on COVID-19: How to Safeguard the Health and Rights of Women and Girls Now’ অর্থাৎ মহামারি কোভিড-১৯ কে প্রতিরোধ করি, নারী ও কিশোরীর সুস্থাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি’- অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এবছর বিশ্বব্যাপী করোনা যুদ্ধের সম্মুখসারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী নারীদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই সঙ্গে সমগ্র পৃথিবীতে সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার কারণে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এবং লক-ডাউনের কারণে নারীদের অপারিশ্রমিক কর্মপরিধি বৃদ্ধি, মাতৃস্বাস্থ্যসেবার ব্যত্যয়সহ লিঙ্গ-ভিত্তিক নির্যাতনের প্রকোপ বৃদ্ধির আশংকা প্রকাশ করেছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্তে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদে চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা এবং ১৮ (১) অনুচ্ছেদে জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক ও প্রাথমিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা স্বাস্থ্যখাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছি- স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য ১০,৭২৩ টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি, স্বাস্থ্যনীতি-২০০০ প্রণয়ন করেছি। পুনরায় দিন বদলের সনদ ঘোষণার মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একটানা সাড়ে এগারো বছর সরকারে থাকায় আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে গৃহীত নানামূখী পদক্ষেপের সুফল আজ দেশের জনগণ পাচ্ছেন। ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে উপলক্ষ্য করে পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের যে সকল লক্ষ্য নিয়ে আমাদের সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছিল, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সেগুলো অর্জিত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন ৩,৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৩০,০০০ স্যাটেলাইট ক্লিনিক এবং ১৩,৮১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক যথাযথ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এসব কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ঔষধ, হাসপাতাল রেফারেন্সসহ মোবাইল হট-লাইনের মাধ্যমে নারী প্রজননস্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা ও গর্ভধারণ বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ফলে দিন দিন এখানে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সরকারের স্থাপিত এ সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেশের দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোসহ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিক রেখে চলেছে। নারী ও শিশুর প্রতি যেকোন সহিংসতা ও অন্যায় প্রতিরোধে আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এবং যৌতৃক আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছি এবং এগুলোর কঠোর বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই এখন নারীর অংশগ্রহণ বহুগুণ বেড়েছে। আমরা কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা বিধান করে যাচ্ছি।
আমাদের সরকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং করোনা মহামারি মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যথাসময়ের মধ্যেই এসডিজি-২০৩০ এর লক্ষ্যসমূহ অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সৃষ্টিই আমাদের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্য সফল করতে সুস্থ-সবল জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা-শিশুর প্রজনন-বয়সন্ধি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের সেবা অবকাঠামো সমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সহযোগী সংগঠন, গণমাধ্যম, সচেতন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আরও নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানাই।
আমি বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২০ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।