[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ঢাকার কাছে সাভারে একটি খামারে ২০ ইঞ্চি উচ্চতা এবং ২৬ কেজি ওজনের একটি সাদা রঙের ছোট্ট গাভী রয়েছে। তার নাম রানী, বয়স দুই বছর। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আকৃতির গরু এখন বাংলাদেশে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে নাম লেখাতে যাচ্ছে মাত্র ২০ ইঞ্চি উচ্চতার এই গরু।
দুই দাঁত উঠলেই প্রাপ্তবয়স্ক বিবেচনা করা হয় গরু প্রজাতির জন্য। সেই হিসেবে রানীর দুটি দাঁত থাকলেও তাকে দেখলে বাছুর বলে মনে হতে পারে। বাছুর যেমন জন্মের পর হাঁটতে গিয়ে এদিক ওদিক দুলতে থাকে, রানীর হাঁটাও দেখতে কিছুটা ওরকমই। আচার-আচরণ দেখে নাম রাখা হয় রানি। ওই খামারে আরও ১১টি ভুটানের বক্সার ভুট্টি জাতের গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুই বছর বয়সী রানি সবচেয়ে ছোট। খাওয়াদাওয়াসহ এর পরিচর্যায় রয়েছে আলাদা যত্ন। ফার্মের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গরুটি যত্নে বেড়ে উঠছে।
ভুটানের একটি প্রজাতি ভুট্টি জাতের গরু। যা বাংলাদেশের অনেক খামারিরা আমদানি করে থাকেন। ভুট্টি প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক গরুর ওজন ৫০ থেকে ৮০ কেজি। কিন্তু রানীর ওজন (২৬ কেজি) একটু বেশি কম।
স্থানীয় পশু চিকিৎসক বলেন, ‘বক্সার ভূট্টি’ জাতের এই গরু ছোট হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত গরুটির কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। এছাড়া যে বয়স হয়েছে তাতে এটির আর ওজন বা উচ্চতাও বাড়বে না। ফলে এটিই হতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু ।’
গলায় বাধা ঘণ্টায় টুংটুং করে শব্দ করে সে যখন হাঁটে তখন পায়ের দিকে একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালে অবশ্য মনে হবে হয়ত কোন জন্মগত ত্রুটি রয়েছে গাভীটির। কিন্তু আসলে এটি ভুট্টি নামের একটি বিশেষ জাতের গাভী। এই প্রজাতি এমনিতেই খর্বাকৃতি হয়ে থাকে। কিন্তু সেই তুলনায়ও রানী অনেক বেশি খর্বাকৃতি। আকারে ছোট হওয়ার কারণে রানী খামারের অন্য গরুদের ভয় পায়।
সাভারের শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড উত্তরবঙ্গের নওগাঁর এক কৃষকের কাছ থেকে এগারো মাস আগে গাভীটি সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী রানীর জন্ম বাংলাদেশে।
এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর রেকর্ড ছিল ভারতের কেরেলা রাজ্যের ৪ বছর বয়সী লাল রঙের মানিকিয়াম নামের একটি গরুর। মানিকিয়ামের উচ্চতা ২৪ ইঞ্চির একটু বেশি।
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে রেকর্ডধারী গরুটির আকৃতি এবং ওজন রানীর চাইতে বেশি তাই তারা দুদিন আগে বিশ্ব রেকর্ডের জন্য গিনেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
গিনেজ কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গেলে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু রেকর্ডধারী ‘মানিকিয়াম’ ও তার মালিকের ছবি দেখা যায়। ২০১৪ সাল থেকে সে এই খেতাবের অধিকারী।
গিনেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে জানিয়েছে, তারা নিজস্ব কিছু প্রক্রিয়ায় তিন মাসের মধ্যে সরাসরি উপস্থিত হয়ে যাচাই করে দেখবে রানী আসলেই ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু ’ খেতাব পাওয়ার দাবিদার কিনা। সবকিছু ঠিক থাকলে এই গরু বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু অফিসিয়াল তকমা পাবে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বিশ্বে ছোট গরুর রেকর্ডে ভারতকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের খেতাব পাবে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত না হলেও রানী ইতিমধ্যেই খামারের আশপাশের লোকজন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মনোযোগ কাড়তে শুরু করেছে। যার দাম উঠেছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. সাজেদুল ইসলাম বলছেন, “আমরা নিজেরা গরুটির মাপ ও ওজন নিয়েছি। এটা নিঃসন্দেহে খুবই ছোট গরু। বিশ্ব রেকর্ড হবে কিনা সেটাতো যাচাই করতে সময় লাগবে। কিন্তু বিশ্ব রেকর্ড পেলে বিষয়টা খুব আনন্দের হবে।”
কুরবানির মৌসুম সামনে। এসময় সাধারণত বড় আকৃতির গরু ও তার দাম নিয়ে হাট এবং সংবাদমাধ্যমে বেশ মাতামাতি হয়। রানীর জন্য বিষয়টি উল্টো। খর্বাকৃতির হওয়ার জন্যই আলোচনায় রয়েছে সে। যদিও খামারের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা রানীকে কুরবানির গরু হিসেবে বিক্রি করতে আগ্রহী নন।