[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ ও ঢাকা মহানগর কমিটির যৌথ উদ্যোগে আজ রোববার (৮ জুন ) বিকাল ৩:৩০ মিনিটে রাজধানীর ঢাকার ওয়ারী অঞ্চলের টিপু সুলতান রোডে, ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-আসুন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি – এই স্লোগানকে সামনে রেখে অব্যাহত নারী ও কন্যা নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দাবিতে সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ কর্মসূচির অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস বলেন, সংগঠনের ৫২ বছর ধরে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তার জীবনের মৌলিক চাহিদা যেমন ,সমঅধিকার, সম্পত্তিতে সমঅধিকার, পরিবারে,সমাজে রাষ্ট্রে সমঅবস্থান প্রতিষ্ঠিত হোক । প্রতিটি এলাকায় সামাজিক আন্দোলন,সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করার আহ্বান জানাই। নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তা বিধানে সকল ধর্ম বর্ণ ,গোত্র নির্বিশেষে অভিন্ন আইন পারিবারিক আইন বাস্তবায়ন করা হোক।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির ওয়ারী পাড়া শাখা পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, সদস্য বৃষ্টি রানী দাস বলেন, অব্যাহত ভাবে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এ পরিস্থিতি নারী ও শিশুর অধিকার তো দূরের কথা তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। নারী ও কন্যার শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং নারী ও কন্যার অধিকারের পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির ওয়ারী পাড়া শাখা পক্ষ থেকে বক্তব্যে, সদস্য নূপুর রানী দাস বলেন,মেয়েদের লেখা পড়ার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকতে হবে । তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির ওয়ারী পাড়া শাখা পক্ষ থেকে বক্তব্যে, সদস্য প্রতিভা বলেন, সমাজে নারীদের প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্ত হতে হচ্ছে। নারীর ও কন্যার অধিকার যেন ব্যাহত না হয় সেক্ষেত্রে নারীর প্রতি অহেতুক হয়রানি বন্ধ করা উচিত। আমাদের একতাব্দ্ধ হয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। সংগঠনের কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনকে আরও বিস্তৃত ও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের
অ্যাড. ফাতেমা খাতুন বলেন, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে বাল্যবিবাহও। ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর খুন করা, এসময়ে যৌতুক নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। বাল্যবিবাহ নিরসনে প্রশাসনের ভূমিকা আরো কার্যকর ও জোরদার করতে হবে। নারী নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধের সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতার পাশাপাশি, দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কাঠোর শাস্তি দেয়া অত্যন্ত জরুরি।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বেশিরভাগ নারীরাই যথাযোগ্য সম্মান বা মর্যাদা পান না৷ আমাদের প্রত্যাশা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র নারী এবং শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরো মনোযোগী এবং শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে। বাল্যবিবাহও নারীশিক্ষার পথে একটি প্রধান বাধা। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নারীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিচু মন-মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। নারী ও পুরুষ মানব সমাজের ভারসাম্য ও স্থিতির সমরূপ। নারী ও কন্যা প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে পরিবারকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় সমাজ-সভ্যথার ক্রমবিকাশ ঘটে। নারীর জন্য শান্তিপূর্ণ বিশ্ব তৈরি করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। কন্যাদের সাবলম্বী করে তোলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমতাবস্থায় তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতার ঘটনা প্রতিহত করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির ওয়ারী পাড়া শাখা পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, বিনা রানী দাস বলেন, সংগঠনের কার্যক্রমে আন্তরিকতার সঙ্গে পাড়া কমিটির অংশগ্রহণের বিষয়ে আহ্বান জানান।
ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-আসুন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি – এই স্লোগানকে সামনে রেখে অব্যাহত নারী ও কন্যা নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দাবিতে সমাবেশ কর্মসূচিতে সাধারণ প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য নুসরাত এশা।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী ও পুরুষের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে পুরুষসমাজকে যুক্ত করে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নারীদেরকে এ সমস্ত সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নারীরা আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। সুতরাং নারী তথা মেয়েদের সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সমাজের প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নারী সহিংসতা বন্ধে শুধু প্রয়োজন সবার আন্তরিক সহযোগিতা। নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয় ঘরোয়া সহিংসতার মাধ্যমে। প্রত্যেক জায়গায় নারীদের নিজের ওপর নিজের সাহস রাখতে হবে। নারীসহ সবাইকে সচেতন করতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাংগঠনিক ভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সবাইকে একত্রিত করে চিন্তা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধে নারীর অধিকার মানবাধিকার এ শ্লোগান নিয়ে রাষ্ট্র, সমাজ পরিচালনায় নারীর সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, নারীর ব্যক্তি অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে নারী সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে আসছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলছে। এখনই সময় নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি নারী-পুরুষ উভয়ের রুখে দাঁড়াতে হবে। নারীর প্রতি সমাজের সকলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সামাজিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে, মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। নারীর ও কন্যার প্রতি সমঅধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ।
সমাবেশ থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার দাবি জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
আজকের সমাবেশ কর্মসূচিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের সম্পাদক রেখা সাহা, কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের অ্যাড. ফাতেমা খাতুন। ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস, সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর, লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন ও শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য্য,ঢাকা মহানগরের সদস্য নুসরাত এশা, মাহফুজ ডলি , পাড়া কমিটির সম্মানিত সংগঠক সদস্যবৃন্দসহ মোট ১১০ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ কর্মসূচির অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন।