[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি আমাদের দিয়েছেন এ বাংলাদেশের মানচিত্র । যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। ১৭ মার্চ ২০২০-এ পালিত হবে সেই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী। ‘মুজিববর্ষ’ রূপে উদযাপিত হবে জাতির পিতার জন্মশর্তবার্ষিকী। এজন্য বছরব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তবে শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকছে না এ বিশ্বনেতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। আগামী বছর বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো)। গত ২৭ নভেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা ঘোষণা করেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এক প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্বকালে।
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো এবং বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যৌথভাবে উদযাপন করবে। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তে বছরজুড়ে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের নেতাসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাঁদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, ইউনেসকোর সাবেক মহাসচিব ইরিনা বুকোভা ও আরব লিগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা অংশ নিতে পারেন। আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে আমন্ত্রণের তালিকায় রয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা ও ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এল কে আদভানি, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ২৫ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে সংস্থার ৪০তম সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মনজুর হোসেন জানান, ইউনেস্কোর ১৯৩টি দেশে একইসঙ্গে উদযাপিত হবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এ সিদ্ধান্তের ফলে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন ইউনেস্কোর সঙ্গে বাংলাদেশ মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি বিএনসিইউ অন্য দেশের ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মিশনগুলোও আলাদাভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে নিয়ে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করবে। জানা যায়- ইউনেস্কো শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। ৫০ বছর বা এর গুণিতক যে কোনো বার্ষিকী যদি ইউনেস্কোর কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে ওই দিবস যৌথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বিশ্বস্বীকৃতি পায়সেই হিসাবেই। এর ফলে এ দিবসটি পালন করতে পারবে ইউনেস্কো বা এর ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ বা দ্বিপাক্ষিকভাবে। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর সঙ্গে উদযাপনের প্রস্তাব প্রাথমিক অনুমোদন লাভ করে জুনে। উত্থাপিত প্রস্তাবে একাধিক যুক্তি তুলে ধরা হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বিশ্বব্যাপী পালনের ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়- গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে সংবিধান দেয়ার পাশাপাশি। বঙ্গবন্ধু তার সারা জীবনে কাজ করেছেন শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে। যা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়। একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সহনীয়তার সংস্কৃতিকে লালনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছেন তিনি তার জীবদ্দশায়। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে। যে বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ ইউনেস্কোর মূল প্রতিপাদ্যের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বলেছিলেন, ‘শিক্ষাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ’। যা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৭২ সালে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করেছিলেনমেয়েদের শিক্ষা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করেন। ১৯৭২ সালে ড. কুদরত ই খুদাকে প্রধান করে ১৯ সদস্যের কমিশন গঠন করেন সমন্বিত শিক্ষানীতির জন্য। ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুর করা শিক্ষানীতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ২০১০ সালে যে জাতীয় শিক্ষানীতি হয়েছে তা।
এর পূর্বে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ক্যাটাগরিতে স্থান পায়। এছাড়া ইউনেস্কোর সংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিদর্শন ক্যাটাগরিতে স্থান পায় সুন্দরবন, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। আর অপরিমেয় বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্যাটাগরিতে ইউনেস্কো বাংলাদেশের বাউল গান, জামদানি বুনন, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও শীতল পাটিকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। দুই সদস্য রাষ্ট্রের লিখিত সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে এ প্রস্তাবে। বাংলাদেশের এ প্রস্তাবে লিখিত সমর্থন দেয় ভারত, জাপান, কিউবা, নেপাল ও পোল্যান্ড। ফলে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় ২০৬তম বোর্ড সভায়।
বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বিশ্বস্বীকৃতির জন্য ২০১৮ সালে কাজ শুরু করে। একটি কমিটি গঠন করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে। যারা বিএনসিইউর সহায়তায় ইউনেস্কোতে উপস্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করে। তবে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ডা. দীপু মনি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম এ প্রস্তাবের ফাইল স্বাক্ষর করেন। ২০১৯-এর এপ্রিলে ইউনেস্কোর ২০৬তম বোর্ড সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর।
এই নিবন্ধের লেখক: শাহরিয়ার আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক, মানব সংবাদ