বর্বরতার যুগ ফিরে আসছে…

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০১৯,৯:২০ পূর্বাহ্ণ
0
176

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

মর্যাদাপূর্ণ বিশেষণকে বিসর্জন দিয়ে আমরা দিনকে দিন হয়ে উঠছে হিংস্র, বর্বর ও নিষ্ঠুর

বীরের জাতি হিসেবে আমরা বেশ পরিচিত সমগ্র বিশ্বে। আমাদের বীরত্ব, মহানুভবতা ও মানসিকতার জন্য আর পাঁচটা জাতি থেকে আমরা আলাদা। সুনাম ও সম্মান দুটোই আমাদের খুব বেশি। তবে এই সুনাম বা সম্মান এখন হারাতে বসেছি আমরা। এমনসব ঘৃণিত, বিতর্কিত কাজ করছি, যার ফলে নিজেদের এই সকল মর্যাদাপূর্ণ বিশেষণকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে আমাদের। দিনকে দিন হয়ে উঠছি হিংস্র, বর্বর, নিষ্ঠুর। যা আমাদের সম্প্রীতি, মানবিকতা, ঐক্যবদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সম্প্রতি বুয়েটের আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেই প্রতিষ্ঠানেরই অন্যান্য শিক্ষার্থীর দ্বারা। গত (৭ অক্টোবর) সোমবার খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশের কারণে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এমন একটি তুচ্ছ ঘটনায় মেধাবি শিক্ষার্থীর নির্মম মৃত্যু একদিকে যেমন মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার, ঠিক তেমনি অন্যদিকে মেনে নিতে পারছে না দেশের সাধারন জনগণ।

একজন মেধাবি শিক্ষার্থীকে অন্য মেধাবি শিক্ষার্থীদের নৃশংসভাবে হত্যায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশের প্রচলিত আইনের শাসন, শিক্ষাব্যবস্থা, ছাত্ররাজনীতি ও  শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের বিষয়টি।
*ভিন্নমত প্রকাশ করলেই কি আবরারের মত জীবন হারাতে হবে?
*স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলার উপস্থিত থাকার পরও কি কেউ অন্যের জীবনকে হুমকিতে ফেলতে পারবে, আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে বা কাউকে মেরে ফেলতে পারবে?
*কিংবা ছাত্ররাজনীতির বেশে ক্ষমতাবলে এক শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থীকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারবে?
এমন অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম হয়েছে আবরারের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে।

প্রশ্নের তীর কম যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও।
*বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিভাবে টর্চার সেল গড়ে ওঠে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন এসবের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করছে?
*বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হলে বসে মদ্যপান, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের হেয় করা, নির্যাতন করাসহ এমন অনেক অন্যায়-অনিয়ম কেন শিক্ষক বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখে পড়েনি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা জুনিয়র শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংয়ের নামে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন দিনের-পর-দিন চলে আসছে। এতে করে একদিকে ছাত্ররাজনীতির আড়ালে যেমন অন্যায় অনিয়ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে আসছে, অপরদিকে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকা অনিরাপদ ও অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিসর্জন দিচ্ছে, অপরদিকে ঠিক তেমনভাবেই নিজের অজান্তেই নিজেকে সন্ত্রাসবাদীতে প্রতিষ্ঠা করছে।
তাহলে কি শিক্ষা পাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। যেখানে ছোটবেলা থেকে একজন শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বুলি শিখিয়ে মুখে ফেনা তুলে দেওয়া হয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে এমন উশৃংখল ও বর্বরতা কি মেনে নেওয়ার দাবি রাখে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন গৌরবের সাথে শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে অধিষ্ঠিত থাকে, তখন এরকম ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গৌরবের মান অক্ষুন্ন রাখতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে। কোনো অভিভাবকই তাদের সন্তানদের জেনে শুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চায় না। কেউ চায় না কারো নাড়ী ছেঁড়া ধন, নয়নের মনির অপঘাতে মৃত্যু। স্বপ্নপূরণের জন্য এসে যদি সন্তান- সন্তাদি আজীবনের জন্য না থাকার স্মৃতি হয়ে যায়, তাহলে কেইবা চায় সে স্বপ্ন পূরণ করতে। আবরারের মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার কিংবা তার বন্ধু-বান্ধবী ব্যথিত হয়নি, সারাদেশের মানুষ ব্যথিত হয়েছে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। তার মৃত্যুর ঘটনা আমাদের বর্বরতার যুগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহপাঠীদের দ্বারা এমন অমানবিক ঘটনা নিসন্দেহে যে কারো হৃদয়ে দাগ কেটে রাখবে। শুধু আবরার নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা এমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

তবে সাধারন জনগনের প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত জীবননাশের পর এই বর্বরতার অবসান ঘটবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আদৌও কি ছাত্ররাজনীতির বেশে চলতে থাকা অপরাজনীতি ও অপবাদ পেছনে ফেলে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান করতে পারবে। কবে  নিজের হাতে মানুষ মারা বন্ধ করে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।

মুখে মুখে যে মানবিকতা, সম্প্রীতি, ঐক্যবদ্ধতার কথা বলি তা কি সত্যিই আমাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হবে, নাকি অনুপস্থিতই থেকে যাবে আমাদের মাঝে সব সময়।আবরার চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। কোনো মূল্যেই এই ক্ষতি এড়ানো সম্ভব নয় আমাদের কারো পক্ষেই। দেশের জনসাধারন আবরার হত্যার সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করে, সেই সাথে আরো প্রত্যাশা করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার আর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর কোনো অভিভাবককেই যেন সন্তান হারানোর কষ্ট না পেতে হয়। এই দেশও যেন কোনো মেধাবি ছাত্র পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়।

একটি যৌক্তিক দাবি উত্থাপনের পর সেই দাবির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাই বলেই স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও আমাদের দেশের জন্য কিছু করতে পারিনি। তথা বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। দল মত নির্বিশেষে আমাদের উচিৎ যেকোনো যৌক্তিক দাবির সাথে একমত পোষণ করা। মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে ভালোবাসা-সম্প্রীতি ও মতবাদ নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, একদিন সেই মতবাদ সত্যিকার অর্থেই প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। সকল অন্যায়,অপবাদ ও অনিয়ম ধ্বংস হয়ে নতুন সূর্যের শুভসূচনা হবে।

এই নিবন্ধের লেখক: শাহরিয়ার আহমেদ

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে