[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
স্বাধীনতার পর পাটশিল্পের মাধ্যমেই “সোনালী আঁশ”-এর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে। উণসত্তরের গণঅভ্যূত্থান থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের পাটশিল্প শ্রমিকদের অবদান সকলেরই জানা আছে। ফলে পাটশিল্প শুধু অর্থনীতিই নয়; এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথে জড়িত। এরকম একটি শিল্প আমাদের চোখের সামনে নি:শেষ হয়ে যাবে- তা হতে দেয়া যায় না। ফলে এই শিল্পকে বাঁচাতে আমাদের কিছু করণীয় আছে।
আজ ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব তাফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) লাউঞ্জে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে শ্রমিকনেতা কামরূল আহসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত “পরামর্শ সভায়” নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অর্থনীতিবিদ, পাটকল সমূহের সিবিএ, ননসিবিএ ও শ্রমিকরা পরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন। পরামর্শ সভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. বিনায়ক সেন, অধ্যাপক এম.এম. আকাশ, শ্রমিকনেতা লুৎফর রহমান, দিদারুল আলম, মোঃ মছিউদ্দোলা,মকবুল হোসেন, আঃ হামিদ এবং কৃষক নেতা মাহামুদুল হাসান মানিক সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
রাশেদ খান মেনন বলেন, পাটশিল্পের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। বন্ধ পাটকলসমূহ পুনঃরায় চালু করা প্রয়োজন এ বিষয়ে স্কপ এবং চীনের প্রস্তাব নিয়ে সরকারকে সংলাপ ডাকার আহবান জানান। বিএনপি জোট সরকার আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দিয়েছে। যা দেশের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছিল। বর্তমানে পাটশিল্প রক্ষার জন্য যে সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে তার সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, পাট চাষ ও পাট শিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্য। পাট দেশের প্রধান অর্থকরি ফসল। আঁশ জাতীয় কৃষি ফসলের মধ্যে বিশে^ তুলার পরই পাটের স্থান। দেশের প্রায় ৫০ লাখ কৃষক পাট চাষের সাথে যুক্ত। পাট চাষ, প্রক্রিয়াকরণ, পাট ও পাট জাতীয় বিভিন্ন উপকরণ তৈরী ও বাণিজ্যের সাথে প্রায় ৪ কোটি মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত। পাটশিল্প ধ্বংস সাধন নয়, আধুনিকায়ন করতে হবে।
ড.মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাটের রফতানি ২০১৯-২০২০ বছরে ৮.১ শতাংশ রফতানি আয় বেড়েছে। পাটশিল্প ধ্বংস হলে বিশ্বে দেশীয় পাটের বাজারে ভাটা পরবে। পাটশিল্পকে বাঁচাতে হলে বিজেএমসির ভর্তুকি মডেল নয় আধুনিকায়ন করে উৎপাদনশীল বাড়াতে হবে। ইজারা দিয়ে ব্যক্তিমালিকানায় যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তাতে লুটপাট হবে।
অধ্যাপক এম.এম.আকাশ বলেন, আমরা বাংলাদেশে পাটশিল্পের একটা নব-জীবন চাই। এই নতুন জীবন গড়ার ভিত্তি হলো-জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের যে বর্ধিত চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগানো ও নতুন যন্ত্রপাতি দিয়ে কারখানাগুলিকে নতুন করে সাজিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক তন্তু‘ পাটের তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। পাটপণ্যের বহুমুখিকরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে এই সুযোগকে আমরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘৭২ এর সংবিধানে মৌলিক অধিকার ৪৭ ধারা ২০ উপ-ধারায় রাষ্ট্রায়ত্ব খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার সব কিছু করতে পারে। সমতামুখি সমাজে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। পাটশিল্প রক্ষার আন্দোলন শুধু শ্রমিকদের নয় এটা জাতীয় ইস্যু। অন্যান্য শ্রেনী পেশার মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে পাটশিল্পকে রক্ষা করতে হবে।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন গত ২৮ জুন এক ঘোষণার মধ্যদিয়ে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলি বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে স্থায়ী, বদলী ও ক্যাজুয়াল- সব মিলিয়ে প্রায় ৫১ হাজার পাটকল শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। করোনা মহামারীকালে যখন সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, চারিদিকে মানুষ চাকরি-কাজ-আয়ের উৎস হারাচ্ছে, অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে-ঠিক সেই সময়ে সরকার এ ধরণের একটি অমানবিক সিন্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। যা মেনে নেয়া সম্ভব নয়।
সভার সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই বর্তমান টেকনোলজি দিয়ে পাটশিল্প চালানো সম্ভব নয়। হিসেবনিকেশ করে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম চাইনিজ ভিক্টর বা অয়ান্দা কম্পানির একটি মেশিন আনি যার একবছরে উৎপাদন ক্ষমতা ৩৬ টন। আর দাম ১০ লাখ টাকা। যদি এই মেশিনটি আনতে পারি তাহলে মাত্র ১০০০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে আমরা লাভবান হতে পারি।
নেতৃবৃন্দ ২৬ শে ডিসেম্বর ২০১৯ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ রাষ্ট্রায়িত পাটশিল্প স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির দ্বারা আধুনিকায়ন করা ও পাট শিল্পের সহিত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে দ্রুত পাটশিল্পকে চালু করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। একই সাথে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সুফল রাষ্ট্রায়ত্ব পাটশিল্পকে রক্ষা করার সংগ্রামে সকল শ্রমিক কর্মচারী দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানানো হয়।