[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
মনির হোসেন ,পরিচালক, এডু এইড কোচিং সেন্টার
জনাব মনির হোসেন ১৯৮৮ সালের ১৫ই আগস্ট নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন ধলেশ্বরী, মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর বুকে জেগে উঠা চর ধলেশ্বরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোঃ জিতু খান ঢাকার কারওয়ান বাজার কাঁচামালের ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী মজিদা খাতুনের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ জনাব মনির হোসেন। ছোট বেলা থেকে মেধাবী থাকায় প্রায় সকল শ্রেণীতেই পেয়েছেন মেধা পুরস্কার। ২০০৪ সালে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে ।নারায়নগঞ্জ কলেজ থেকে ২০০৬সালে এইচ এস সি পাস করে পাড়ি জমায় ঢাকায়। ২০১১ সালর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিষয়ে বিবিএ সম্পন্ন করার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেন এমবিএ। তিনি ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং( ঢাকা কোচিং, ইউনিএইড, ইউসিসি, ফোকাস ও অনলাইন) গুলোতে দেশব্যপি ক্লাস পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষানুরাগী এই ব্যক্তিটি বর্তমানে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় “এডু এইড” নামে একটি কোচিং পরিচালনা করছেন যেখানে বিবিএ (অনার্স) ও এমবিএ (মাস্টার্স) এর গাণিতিক বিষয়গুলোর পাঠদান করানো হয়। এছাড়া তিনি সিসিইআর মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পরিচালক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ইনচার্জ ও হিসাবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োজিত আছেন ।পাশাপাশি তিনি বহুদিন যাবৎ গরুর খামারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও কিছু অনলাইন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত আছেন। এই কর্মোদ্যমী ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি মানব সংবাদ পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন মানব সংবাদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার আহমেদ। মানব সংবাদ অনলাইনে পোর্টালে এই গুণী ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো।

মানব সংবাদ: এডু এইড কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠানটি শুরুর প্রেক্ষাপট সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছি?
মনির হোসেন: ২০০৬ সালে যখন ঢাকায় আসি তখন থেকেই আত্মকর্মসংস্থানমূলক কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ছাত্র জীবনে কি করা যায়, কি করে স্বনির্ভর হওয়া যায় সে চিন্তাই করতাম সব সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে কোচিং করানোকে বেশি প্রাধান্য দেই। কেননা পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যর অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কিছু করা ভালো। সে চিন্তা অনুযায়ী পড়ানো বা কোচিং করানোটাই সবচেয়ে সুবিধাজনক মনে হয়েছে। এই সূত্র ধরে একটি কোচিং সেন্টারের যাত্রা শুরু করা এবং এডু এইড কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা।

মানব সংবাদ: প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছি?
মনির হোসেন: সবগুলো কোচিং সেন্টারের শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় একই থাকে। আমাদের এডু এইড কোচিং সেন্টারে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে। তখন আমরা ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের পড়াতাম। তাদেরকে হিসাব বিজ্ঞান এবং ইংরেজি বিষয় পড়ানো হত। পরবর্তীতে ২০১২ সাল থেকে আমরা অনার্সের শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করি। এখন অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। পাশাপাশি চাকরি ও নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিষয়গুলো নিয়ে পড়ানো হয়।

মানব সংবাদ: শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানটিকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কেনো বেছে নিবে?
মনির হোসেন: খুবই ভালো এবং যথার্থ একটি প্রশ্ন করেছেন। বর্তমান সময়ে সবকিছুতেই বেশ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বা মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এমন কোন না কোন কৌশল বা পন্থা অবলম্বন করে যাতে করে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ পছন্দের শীর্ষে তথা কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে। সেই হিসেবে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই চায় যেখান থেকে তারা যথাযথ শিক্ষা সেবা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে আমি সহ অন্যান্য যে সকল শিক্ষকরা রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো স্বনামধন্য ও উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে এসেছি। শিক্ষার্থীদের এই মুহূর্তে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি দরকার। আর আমরা প্রত্যেকেই এই বিষয়টার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীলতা শিখানোই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের পড়ানোর গঠন বা পদ্ধতি সৃজনশীলভিত্তিক। আমাদের কোচিং সেন্টারে হ্যান্ড নোট প্রদান করা হয়। আমাদের কোচিং সেন্টার বইনির্ভর বা শুধুমাত্র বইকেন্দ্রিক নয়। বর্তমানে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা বইয়ের বোঝাকে বড় মনে করে। আর আমরাও শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র বইয়ের আদলে পড়াতে চাই না। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব শিটের মাধ্যমে পাঠদান প্রদান করি। আর এজন্যই হয়তো শিক্ষার্থীদের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে আমরা এগিয়ে থাকি ও আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেয় তারা।

মানব সংবাদ: অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আপনাদের প্রতিষ্ঠানে তহবিল বা শিক্ষা ব্যবস্থা আছে কী?
মনির হোসেন: জি অবশ্যই আছে। আর ‘অস্বচ্ছল মেধাবী’ শব্দটাকে আমি এভাবে সংজ্ঞায়িত করি না। কেননা আমার মতে যে শিক্ষার্থী মেধাবী সে তার ব্যবস্থা নিজেই করে নিতে পারে কোন না কোনভাবে। আর অস্বচ্ছল যারা তাদের জন্য আমাদের এইখানে কিছু সুবিধা আছে। যেহেতু আমাদের এডু এইড একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেহেতু আমাদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বেতন সুবিধা ব্যতীত অন্য কোন সুবিধা প্রদান করার তেমন কোনো সুযোগ নেই। অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের পারিবারিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা চালানো একটু কষ্টকর হয়ে যায়। তাদের জন্য আমাদের কোচিং এর পক্ষ থেকে কোনো বেতন নেওয়া হয় না। বিনা বেতনে পড়ার এই সামান্য সুযোগটা আছে তাদের জন্য। আরেকটি বিষয় হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী মেধাবী কিনা তা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। কেননা আমরা বিশ্বাস করি সবাই মেধাবী হয়ে জন্মায় না। আমরা চাই একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে নিজেকে আবিষ্কার করুক। কেবলমাত্র মেধাবীরাই যে অস্বচ্ছল হবে এমন কোন কথা নেই। অস্বচ্ছলরা মেধাবী নাও হতে পারে। আর আমাদের এডু এইড’র পক্ষ থেকে আমরা অস্বচ্ছল সবাইকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

মানব সংবাদ: অনেকেই কোচিং সেন্টারের শিক্ষা কার্যক্রমকে কোচিং বাণিজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
মনির হোসেন:ধন্যবাদ আপনাকে। দেখুন আমি একজন শিক্ষক। আর শিক্ষকতা আমার পেশা। আর আমরা সবাই জানি জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যে পথ বেছে নেয় বা যে পথে কাজ করে তাকেই পেশা বলে। যেহেতু শিক্ষকতা একটি পেশা সেহেতু আমার প্রতিষ্ঠানটি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমানে কোচিং বাণিজ্য বলতে যা বোঝানো হয় তা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা। যা আমাদের এই কোচিং সেন্টারে নেই। কেননা আমরা কোন প্রতিষ্ঠান অধীনে না থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে শিক্ষার্থীদের পড়াই। আমার এই প্রতিষ্ঠানে ঢাকা শহরের প্রায় ২৫ টি কলেজের অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে। কাজেই এখানে কাউকে প্রভাব খাটিয়ে জিম্মি করে পড়ানোর কোন সুযোগ নেই। সবাইকে যার যার সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো হচ্ছে। এখানে বাণিজ্য বলতে আমরা তাদের সেবা দিচ্ছি বিনিময় শিক্ষার্থীরা আমাদের সম্মানী দিচ্ছে। এর বাইরে আর তেমন কিছুই নয়। কিন্তু কোচিং বাণিজ্য বলতে আমরা যে বিষয়টি বুঝি অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব খাটানোর যে বিষয়টি তা করার কোন সুযোগ নেই এখানে। নেই বল প্রয়োগের সুযোগ। আর বাণিজ্যের অন্তর্গত একটি বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞাপন। আপনি জেনে খুশি হবেন কিনা আমি জানিনা তবে একথা সত্য যে, আমার কোচিংয়ের কোথাও কোনো বিজ্ঞাপন নেই। আমার বিজ্ঞাপন হচ্ছে আমার শিক্ষার্থীরা। সেই ২০০৬ সাল থেকে যারা পড়ে গিয়েছে তারাই তাদের ছোট ভাই-বোন, পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, আশপাশের সবাইকে পাঠাচ্ছে এই কোচিংয়ে। এখন পর্যন্ত আমরা রেফারেন্সের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি। কোন ধরনের বিজ্ঞাপন বা প্রচারমূলক কার্যক্রম নেই। এমনকি শিক্ষার্থীদের ঠিকানা বলে না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোচিং সেন্টারের নিচে এসেও বলতে পারে না আমার কোচিং সেন্টারটি কোথায়? কাজেই আমি বলব বিজ্ঞাপন ছাড়া এটি বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়।

মানব সংবাদ: এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বলে আপনি অনুধাবন করেন?
মনির হোসেন: বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী আমি সবচেয়ে ভালো মনে করি ফ্রিল্যান্সার যে কোচিং সেন্টারগুলো আছে সেগুলোকেই। কেননা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক যে শিক্ষকরা আছেন, তারা যদি কোচিং করায় তাহলে সেখানে কিছুটা হলেও পক্ষপাতিত্বমূলক একটা মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। নিজের কলেজের বা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং কার্যক্রম চালালে এমন একটা বিষয় চলে আসে। কাজেই যারা কোন স্কুল, কলেজ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত না অথবা যে প্রতিষ্ঠান সাথে জড়িত সেই প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারে তাহলে সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টার দুইয়ের পক্ষেই মঙ্গলজনক। কাজেই আমি আশা করব শিক্ষকতা মত মহান পেশাকে যথাযথ সম্মান করা ও কোন প্রকার পক্ষপাতিত্বমূলক কর্মকান্ডের সাথে এই পেশাকে না জড়ানো। তাহলেই আমাদের দেশের সবার জন্যই মঙ্গলকর হবে। ফলে আমরা যারা কোচিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারাও শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা প্রদান করতে পারব।

মানব সংবাদ: শিক্ষকতা পেশা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এমন একটি পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার পেছনের গল্প কী?
মনির হোসেন: চ্যালেঞ্জিং কি না আসলে বলতে পারব না। কেননা আমাকে খুব একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়নি। যেটুকু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা পরিবারের সাথে ছিল। খুব মেধাবী ছাত্র ছিলাম তা বলা যাবে না। তবে ক্লাস নাইন থেকে ভালোমতো পড়াশোনা করার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করি। অনেকেই জানতে চায় বা প্রশ্ন করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করে শিক্ষকতায় আসা কেন?
আসলে সরকারি ও ব্যাংক সেক্টরের সাথে ঘুষ ও সুদের একরকম সম্পর্ক থাকার কারণে কখনই আমার পছন্দের তালিকায় ছিল না এই সেক্টরের চাকরিগুলো। আর এই দুই সেক্টর বাদ দেওয়ার পর শিক্ষকতা পেশাকেই সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে আমার কাছে। কেননা শিক্ষকতা পেশা থেকে সম্মান ও সম্মানী দুটোই পাওয়া যায়। আর একারণেই আমি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছি।

মানব সংবাদ: শিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আপনাদের কোন প্রত্যাশা আছে কী?
মনির হোসেন: অবশ্যই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়ার আছে এবং তা সবসময় থাকবে। সরকার একটি দেশের অভিভাবক। আর অভিভাবকের কাছে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু চাওয়ার আছে এবং সবসময় থাকে। বর্তমানে একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় যে, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার দেড়-দুই মাস সকল কোচিং সেন্টারের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। আমি নিজেও এ বিষয়ের সাথে একমত পোষণ করি। তবে সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ না করে এসএসসি বা এইচএসসি সাথে সম্পর্কযুক্ত কোচিংগুলো বন্ধ রাখলে ভালো হবে বলে আমি মনে করি। কেননা যে সকল কোচিং সেন্টারগুলো অনার্স, মাস্টার্স, নিবন্ধন, চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি সংক্রান্ত কোচিং করায় সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার জন্য বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত বলে আমার কাছে মনে হয় না। কেননা এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার কোন সম্পর্ক নেই। এক পরিস্থিতিতে সরকারের উন্নয়নের জন্য এবং আমাদের দেশের ভালোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। প্রয়োজনে দেশের ফ্রিল্যান্সিং কোচিং সেন্টারগুলোকে কর্তৃপক্ষরা নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারে, ভ্যাট- ট্যাক্স আদায় করতে পারে এবং কিছু নীতিমালা গঠন করতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে শিক্ষাখাতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন ও উন্নতি করা সম্ভব বলে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।

মানব সংবাদ: জনকল্যাণমূলক কোনো কাজের সাথে সম্পৃক্ততা আছে কী?
মনির হোসেন: শিক্ষকতা পেশাকে আমার কাছে সবচেয়ে বড় জনকল্যাণমূলক কাজ বলে মনে হয়। কারণ শিক্ষকতা পেশা একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষক একটি দেশ গড়ার কারিগর। এরচেয়ে বড় জনকল্যাণমূলক কাজ আর কি হতে পারে? তবে এর বাইরে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। সে দায়বদ্ধতা থেকে আমরা বিভিন্ন রকম উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। আমি আমার শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করছি ২০১৭ সাল থেকে। এই জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে টিচার র্স্টুডেন্ট এইড (টিএসএ)। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা বিভিন্ন রকম সহায়তামূলক ক্যাম্পেইন করে থাকি। যেমনঃ- অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা, বেতন প্রদান করা, পথশিশুদের বই, পোষাক, খাবার কিনে দেওয়া ইত্যাদি। এই টিএসএ’র মাধ্যমে আমর কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে পাশের এলাকায় একটি বয়স্কস্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও শীতের সময় শীতবস্ত্র, ত্রাণ দেওয়া, ঈদে অসহায়দের খাবার প্রদান করা, নতুন পোশাক দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করা হয়ে থাকে। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের সকল কাজই জনকল্যাণমূলক। আপনি হয়তো নাম শুনেই বুঝতে পারছেন টিএসএ তথা টিচার স্টুডেন্ট এইড জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানটিকে আমর এডু এইড কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিচালনা করা হচ্ছে। আমি এবং আমার শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে কিছু টাকা সঞ্চয় করে সেই টাকাগুলো দিয়ে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি। আমরা মনে প্রানে বিশ্বাস করি একদিন বাংলাদেশ থেকে এই ‘অসহায়’ বা ‘সুবিধাবঞ্চিত’ শব্দটি অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে এবং তা খুব শীঘ্রই হবে।

মানব সংবাদ: প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে কী?
মনির হোসেন: কোচিং সেন্টার এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খুব একটা সুদুরপ্রসারী না। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম ইন্টারমিডিয়েট থেকে। বর্তমানে আমরা অনার্স, মাস্টার্স, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, নিবন্ধন ও চাকরি পরীক্ষার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কাজেই বলা যায়, বাংলাদেশের উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে সকল কার্যক্রম প্রয়োজন সেগুলোর সবকয়টি সুবিধাই আমরা শিক্ষার্থীদের প্রদান করছি এবং সামনের দিনগুলোতেও প্রদান করে যাব। এইদিক থেকে আর তেমন কোনো উচ্চ পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ নেই কোচিংয়ের জন্য। তবে পরবর্তীতে কোচিংয়ের পক্ষ থেকে অন্যকোন প্রতিষ্ঠান দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেটা হতে পারে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, কলেজ কিংবা ইংলিশ ভার্সন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন কিছুই পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এখন বাকিটা সময়ের বিষয়। দেখাযাক, সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যে কি রাখে।
