প্রস্তাবিত কৃষি বাজেট ; সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শন বিরোধী : কৃষক সমিতি

শুক্রবার, জুন ১১, ২০২১,১:১০ অপরাহ্ণ
0
34

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

৮ জুন মঙ্গলবার জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত কৃষি বাজেটকে সংবিধান ও বঙ্গবন্ধু’র দর্শন বিরোধী হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। সভার প্রস্তাবে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ১৩ (ক), (খ)-এ উদ্ধৃত রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও সমবায়ের মালিকানাকে চালকের আসনে বসানোর লিপিবদ্ধ বিধান থাকলেও করোকালেও কৃষি বাজেট প্রস্তাবনায় সেই বিধান সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রস্তাবিত কৃষি বাজেটে পুরানো ছকে কর্পোরেট পুঁজি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কৃষিতে এবছর বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।

গতবছর এ বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ বেড়েছে ২শ’ ২৬ কোটি টাকা। মুদ্রাস্ফীতির হিসেব কষলে গতবছরের চেয়েও চলতি অর্থবছরে কৃষি বাজেট বরাদ্দ কমেছে। করোনাকালে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়াতে দরকার ছিল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ লাখ মে: টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। বাজেটে তা না রেখে ২২.৫৫ লাখ মে:টন চাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহের টার্গেট রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে খাদ্যশস্য সংরক্ষণে ২০০ প্যাডিসাইলো নির্মাণের পূর্বপ্রতিশ্রুত ওয়াদা এবং তা ধান উৎপাদক সমবায়ী কৃষকের কাছ থেকে কেনার প্রশ্নে বাজেট নীরব থেকেছে। ফলে চালের মজুত ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাবে। বাজারে বাড়বে চালের দাম। বাজেটে কৃষিযান্ত্রিকরণে কৃষিযন্ত্রের ক্রয়মূল্যের উপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তার কথা বলা হয়েছে। কৃষিতে বঙ্গবন্ধু’র নির্দেশনামা মোতাবেক “সমবায়ী” ব্যবস্থাপনা গড়া না গেলে যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা ধনী ও ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে। বাজেটে মুরগি ও মাছের খাবারের উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এতে মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর খাবারের দাম কমবে।

এখানে সারে যেভাবে ভর্তুকি দেয়া হয়-সেভাবেই গবাদিপশু, হাঁস- মুরগি ও মাছের খাবারের ক্ষেত্রেও ভর্তুকির ব্যবস্থা করলে খামারিরা সরাসরি সুবিধা পাবেন। তা না হলে রেয়াতি সুবিধা আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে। বাজেট এখানেও বাকরুদ্ধ-নীরব! জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অধিকাংশ উপকূলীয় জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে, খাদ্যের গুডাউন হিসেবে খ্যাত রংপুর বিভাগসহ উত্তোরাঞ্চলে খরা, বন্যা ও নদীভাঙনের প্রকোপ বাড়ছে। জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়া’য় লবণাক্ত, খরা ও বন্যা প্রতিরোধী ফসলের জাত উদ্ভাবন, শস্যবীমা চালু, সার-বীজ-কীটনাশকে ভেজাল ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কৃষি আদালত গঠন, অকৃষি কাজে কৃষিজমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, খাসজমি ভূমিহীনদের প্রদান, গণরেশনিং ব্যবস্থা, ৬০ বছর উর্ধ ক্ষেতমজুর, গরীব-প্রান্তিক চাষিদের সার্বজনিন পেনশন স্কীম চালু এবং করোনাকালে গ্রামীন জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা,স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে এবছরের কৃষি বাজেট কোন কথা বলেনি।

খাদ্য উৎপাদনে চ্যাম্পিয়ান কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে “উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় ( বিপননে) কৃষক সমবায়” গঠন করার কাজটিকে গুরুত্ব দিয়ে ধরা না গেলে বাজারে মধ্যস্বত্ব ভোগিদের দৌড়াত্ব বেড়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ। আমেরিকাসহ উন্নত দেশে করোনাকালে কৃষক সমবায়ী ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করলেও আমরা হাটছি উল্টো পথে। ধান,গম,ভুট্টা, সবজি উৎপাদন খরচ খুবই ব্যয়বহুল। বর্গা, প্রান্তিক ও গরিব চাষিরা এসব উৎপাদনে চড়াসুদে এনজিও, মহাজন, দাদন ব্যবসায়ী ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উৎপাদনে হাত লাগান। ওই ঋণগ্রস্থ কৃষকদের বাঁচাতে কৃষি প্রণোদনা এবং কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমান বৃদ্ধি ও ২% সরল সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা কিভাবে বাড়ানো বা নিশ্চিত করা যাবে সে বিষয়ে এবারের কৃষি বাজেট কোন কথা বলেনি। আলাদা বরাদ্দের প্রস্তাবনা রাখা হয়নি চরাঞ্চল, হাওর-বাওর এবং উপকূলীয় কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষার জন্য।

জাতীয় কৃষক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে বাজেট পর্যালোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, কেন্দ্রীয় নেতা হাজী বশির, নজরুল ইসলাম হক্কানী, নজরুল ইসলাম, মজিবর রহমান, মহিবুল্লাহ মোড়ল, মিজানুর রহমান, আবুল কালাম, হবিবর রহমান,  মোজাম্মেল হক, এ্যাড.ফিরোজ আলম, আব্দুল হক প্রমুখ।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে