[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাম প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ। গতকাল ২৩ আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে। মৃত্যুকালে তার ৯৭ বছর বয়স হয়েছিল। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পরিতোষ দেবনাথ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে মোজাফফর আহমদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের ছয়জন উপদেষ্টার মধ্যে একজন ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। তার অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৯৩৭ সালে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে ১৯২২ সালে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তিত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় চাকরি ছেড়েছেন রাজনীতি করার জন্য। তিনি যখন ঢাকা কলেজের শিক্ষক তখন থাকতেন আজমপুরে আট/ আই কলোনির বাসাতে। ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করার মিটিং হয়েছিল সেখানেই।
মোজাফফর আহমেদ দেবীদ্বার থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে। তিনি নজির সৃষ্টি করেছিলেন তদানীন্তন মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রী মফিজুল ইসলামকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে। তিনি অনেক রাঘব বোয়ালের রাজনীতিতে ধাক্কা দিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বায়ত্ত্বশাসিত করার প্রস্তাব করে। যদিও বা সেই প্রস্তাব পাশ হয়েছিল, তথাপি তখন সেটা খুব সহজ কথা ছিলনা। গণপরিষদে তার ওই প্রস্তাবের পক্ষে বক্তৃতা করে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান, পরবর্তীকালে ইতিহাসের মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যারা ছয় দফাকে প্রথমদিকে জোরালোভাবে সমর্থন করে এগিয়ে নিয়েছিলেন তাদের অন্যতম অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
ন্যাপ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ১৯৬৮ সালে। একভাগ মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে থাকে এবং অন্য অংশ আলাদা হয়ে যায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে।মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন ছয় জন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে নিয়ে। যেখানে ছিলেন মাওলানা ভাসানী, মণি সিং, মনোরঞ্জন ধরের মতো রাজনীতিবিদরা। মোজাফফর আহমেদ তাদের অন্যতম কমরেড। তখন একটি বিশাল মুক্তিযোদ্ধাবাহিনীও গঠন করা হয়েছিল বাম সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিদেশে জনমত গঠন করতে। তাকে তখন যোগ দিতে হয়েছিল জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে।
তিনি পুনরায় দেবীদ্বার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭৯ সালে। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ’কুঁড়েঘর’ মার্কায় প্রার্থী হন ১৯৮১ সালে। দোকানে দোকানে তাকে সহজ সরল ভাবে ভোট চাইতে দেখা যায় ‘আমার নাম মোজাফফর, মার্কা আমার কুঁড়েঘর’ এই স্লোগানে। তিনি কখনো নিরিবিলি রাজনীতি করার সুযোগ পাননি। আইয়ুব খান তার নামে হুলিয়া জারি করেন ১৯৫৮ সালে । তিনি বেশীর ভাগ সময় আত্মগোপনে ছিলেন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। তাকে আবার আত্মগোপনে যেতে হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর। এরশাদ ক্ষমতায় এলে তাকে আবার আত্মগোপনে যেতে হয়। স্কুলে চাকরী করে সংসার চালাতেন তার স্ত্রী আমিনা আহমেদ।
তিনি বারিধারার পার্ক রোডে মেয়ের বাড়িতে থাকেন। অধ্যাপক মোজাফফরকে গত ১৪ আগস্ট অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করান হয়। তিনি ছিলেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। অবশেষে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণ এই রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুতে শোক ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।