[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
আজহারুল ইসলাম জনি (গাজীপুর): (কোভিড-১৯) করোনা-ভাইরাসের কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে অনলাইন মোবাইল গেমসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
প্রযুক্তির হাত ধরে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মোবাইলে ইন্টারনেট চলে গেছে।
আর সেই সুবাদে স্থানীয় কিশোর, তরুণ ও যুবকরা পাবজি, তিনপাত্তি, ফ্রি-ফায়ারের মতো বিভিন্ন অনলাইন গেমসে ঝুঁকে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থী ও পুরো যুব সমাজ পাপজি, তিনপাত্তি, ফ্রি ফায়ার নামক গেইমের নেশায় দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা বইয়ের সাথে আর অবসর সময়ে খেলার মাঠে। সে সময়ে তারা তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরকুনো হয়ে গেইমের নেশায় ডুবে রয়েছে। ১০-২৫ বছরে এসব শিশু, কিশোর ও তরুণরা প্রতিনিয়ত স্মার্টফোনে গেইমে আসক্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাপজি গেইমে আসক্ত এক যুবক জানান, প্রথমে পাবজি গেইম ভালো লাগত না। কিছু দিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন আসক্ত হয়েছি। এখন পাবজি না খেললে ভালো লাগে না।
দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জনান, আগে এসব গেমস সম্পর্কে জানতাম না। এখন নিয়মিত খেলি। মাঝেমধ্যে খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙে ফেলার উপক্রম হয়। এসব গেমস একবার খেললে আর ছাড়া সম্ভব নয় বলে দাবি এই শিক্ষার্থীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষাক্ষীর মা বলেন, করোনায় মোবাইল গেইমসে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ।
তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্রি ফায়ার নামক গেইম নিয়ে ব্যস্ত। যা তাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মোবাইল গেইম মাদকের চেয়েও ভয়ঙ্কর। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর, তরুণ ও যুবকরা হতাশা থেকেই এসব গেইমে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। তাই সন্তানদের বাঁচাতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষক এবং প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাস বলেন, আগে শিক্ষার্থীদের অবসর সময় খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পার হতো। এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে মোবাইলে গেইম মহামারী আকার ধারণ করেছে। এতে একদিকে তরুণদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফুল আলম আইয়ুব জানান, পাপজি, তিনপাত্তি, বা ফ্রি ফায়ার খেলায় আসক্ত যারা, তারা যদি একদিন না খেলে তাহলে কোনো কিছু ভালো লাগেনা। এ খেলা খেলতে বিভিন্ন লেভেল পার করতে হয় যার বিনিময় অনেক অর্থ ব্যয় হয়। ফ্রি ফায়ার খেলায় যারা একবার আসক্ত হয়েছে তারা আর এ খেলা ছাড়তে পারবেনা বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, মোবাইল গেইমে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। অনেকেই এ খেলার পেছনে অর্থ ব্যয় করছেন।
অভিভাবকসহ সমাজের সবাই মিলে এ বিষয়ে তদারকি না করলে ভবিষৎ ভয়ংকর হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তাই সবাইকে সচেতন হতে আহ্বান জানান তিনি।
কালীগঞ্জ থানার ওসি একেএম মিজানুল হক বলেন, কিশোর-কিশোরীদের মা-বাবাসহ সমাজের সবারই খেয়াল রাখতে হবে, শিক্ষার্থীরা যেন মাত্রাতিরিক্ত মোবাইলে আসক্ত না হয়।
অভিভাবক, সচেতন মহল প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে সচেতন হলে তরুণ ও যুব সমাজকে এ আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
মোবাইল গেইম আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি প্রথমবারের মত এটাকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
যেটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোগব্যাধির শ্রেণি বিন্যাসের তালিকায় ‘গেইমিং রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।