[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বাল্যবিয়ের কারণে অনেক কিশোরী বধূ এখন বেকায়দায় পড়েছে স্বামী-সংসার হারিয়ে । নিবন্ধনের বিষয়টি তোয়াক্কা না করে শুধু মুনশি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কিংবা হুজুর দিয়ে দোয়া পড়িয়ে বিয়ে হওয়ায় সন্তান জন্মের পর তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না স্বামীরা । তারা এখন বিয়েটাই অস্বীকার করছে আইনি ঝামেলা এড়াতে । সেই সঙ্গে স্বামীরা নিজেদের সন্তানকেও অস্বীকার করছে । সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে আরও দুটি ।
এদের মধ্যে একজন পলি আক্তার (১৩)। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দেওয়া হয় তার। বিয়ের ঘটনাটি প্রশাসন জানার পর আয়োজন বন্ধ করে দিলেও গভীর রাতে মসজিদের মুয়াজ্জিন দিয়ে শুধু দোয়া পড়িয়ে তড়িঘড়ি করে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বরের বাড়িতে । বছর যেতে না যেতেই অন্তঃসত্ত্বা পলিকে অনেক যন্ত্রণার পর ফিরে আসতে হয় বাবার বাড়িতে । এক কন্যা সন্তান সেখানেই জন্ম নেয় । স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন এরপর থেকে আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি । নিজের সন্তানের ভরণ-পোষণসহ শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার দাবি নিয়ে স্বামীর দ্বারস্থ হলেও বিয়ের সে বিষয়টিই অস্বীকার করছে। দিশাহারা পলির পরিবার এখন আইনি পদক্ষেপের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে এ ঘটনায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পলি আক্তার উপজেলার মুশল্লী ইউনিয়নের মোরাগালা গ্রামের মৃত ফখর উদ্দিনের মেয়ে। বছর দুয়েক আগে পাশের শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামের সোহরাব উদ্দিনের ছেলে উজ্জ্বল মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়।
পলির মা মোছাম্মৎ রুবিয়া আক্তার জানান, এক লাখ টাকা নগদসহ বিভিন্ন আসবাব দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয় মেয়েকে । তখন প্রশাসন বাধা দিলেও বিয়ের পর বর বিদেশ যাবে—এই আশায় হাতছাড়া না করে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করা হয় নিবন্ধন ছাড়াই । এখন বিয়ের প্রমাণাদি না থাকায় আইনি পদক্ষেপ নিতে তাদের সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বন্যা আক্তার (১৩) নামের আরেক কিশোরীও শিকার একই অবস্থার । উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে তার বাড়ি । তাকেও বছর দুয়েক আগে কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই প্রতিবেশী মোস্তফার ছেলে রুবেল মিয়ার (২২) সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর রুবেল স্ত্রী বন্যাকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় বাবার বাড়িতে ।
বন্যা জানায়, বিয়ের পরপরই সন্তান আসে তাঁর গর্ভে । এ অবস্থায় স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচারে চলে আসতে বাধ্য হয় বাবার বাড়িতে । এরপর থেকে তারা আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি । স্বামী ও সন্তানের দাবি নিয়ে বারবার তাদের কাছে ধরনা দিলেও বিয়ের কোনো প্রমাণ নেই অজুহাতে তাদের প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। গ্রাম্য সালিসেও এ ঘটনার কোনো বিচার পায়নি। উপরন্তু স্বামী রুবেল সাফ জানিয়ে দেয়, জন্ম নেওয়া এই সন্তান তার না। এ ধরনের অপবাদে এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বন্যা।
নান্দাইল থানার ওসি মনসুর আহাম্মাদ জানান, এ ধরনের ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে শিশু ও নারী নির্যাতন বিষয়ে একটি সেল খোলা হয়েছে। সেখানে দুইজনের ঘটনা লিখিত আকারে জানালে পাওয়া যেতে পারে প্রতিকার।
এ ব্যাপারে নান্দাইল মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান তসলিমা বেগম লাভলী বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে সহায়তা চাইলে নেওয়া হবে সার্বিক ব্যবস্থা।’