[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দ্বন্দ্বের কারণে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ইউনিয়নবাসী। সঠিক সময়ে সেবাপাচ্ছেন না তারা।
এদিকে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্নসাত ও অশালীন আচরণের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন ১১ জন ইউপি সদস্য। রবিবার দুপুরে তারা নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অনাস্থা প্রস্তাব প্রদান করেন।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অনিয়ম ও দুর্ণীতির তথ্য তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেন, সুবিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান সিকদার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যাবহার করে নানা অনিয়নম ও দুর্নীতি করে আসছেন। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ইউপি সদস্যদের ভয় দেখিয়ে প্রকল্প বানিয়ে রেজুলেশনে সই নিতেন। অথচ প্রকল্পের কোন কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো ভবন ভাড়া দিয়ে তিন লাখ টাকা নিজের পকেটে নিয়েছেন তিনি। তঁার বিরুদ্ধে কথা বললে সদস্য পদ থেকে বরখাস্তের ষড়যন্ত্র, হামলা, মামলা ও মেরে ফেলার হুমকি দিতো চেয়ারম্যান। অবশেষে পরিষদের সকল সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অনিয়ম ও দুর্ণীতি রুখে দিতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিতে আসেন প্যানেল চেয়ারম্যান মানছুর খান, ফিরোজ আলম সোহাগ, ইউপি সদস্য আমানুর রহমান সুমন, শাহ আলম হাওলাদার, রেজাউর রহমান রেজা, আবদুল জলিল মৃধা, রেজাউল করিম সোহাগ খান, মিজানুর রহমান, শরিমিন বেগম, লাভলী বেগম ও রাফিকা বেগম।লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় ইছাপাশাম মুসল্লিবাড়ির দরজায় আয়রণ সেতু নির্মাণের জন্য ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কোন কাজ না করেই পুরো টাকা আত্মসাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদার।
সুবিদপুরের নাপিত বাড়ির সেতু থেকে হাবিব হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তার জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা, পশ্চিম গোপালপুর খলিফা বাড়ি থেকে কদম আলীর বাড়ি পর্যন্ত ইট সোলিং রাস্তার বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা, এলজিএসপির বিবিজি প্রকল্পের আওতায় ৬টি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা পুরোটাই কাজ না করে আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের এলজিএসপির স্যানিটেশন প্রকল্পের এক লাখ টাকা, সেলাই মেশিন ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল বিতরণের এক লাখ ৬০ হাজার টাকাও আত্মসাক করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ট্রেড লাইসেন্সের টাকা, জন্ম ও মৃত্যু সনদের টাকা, বিজিডি কার্ডের চাল পরিবহণের খরচের টাকা, হাট বাজার থেকে আদায় করা টাকা ব্যাংকে পুরোটা জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন।
এছাড়াও ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির লেবারদের টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে শালিস মিমাংসার নামে দুই পক্ষের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যর নাম ভাঙিয়ে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা।
সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মানছুর খান বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি, চেয়ারম্যান আমাদের নানা ভাবে হয়রানি করছে। তঁার বিরুদ্ধে কথা বললেই হুমকি আসে। এলাকায় কোন উন্নয়ন হয়নি। মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, কিছুই করতে পারিনি শুধু চেয়ারম্যানের দুনর্ীতির কারণে। নলছিটি উপজেলায় মন্নান চেয়ারম্যানের মতো দুর্ণীতিবাজ আর কোন চেয়ারম্যান নেই। তাই তার অপসারণ দাবি করছি। ইউপি সদস্য রেজাউল করিম সোহাগ খান, চেয়ারম্যান মাঝেমধ্যে ঢাকা যান, কিন্তু কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যান না। এমনকি ইউএনও স্যারকেও জানান না। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন মানুষ সেবা পাচ্ছে না।
অভিযোগ অস্বাীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান সিকদার বলেন, ইউপি সদস্যদের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা অনাস্থা দিয়েছে। আমি কোন অনৈতিক কাজ করি না। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউপি সদস্যদের অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।