[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
সিয়াম, সাধনা ও নাজাতের মহিমায় ভরা মাহে রমজানের উছিলায় বিশ্ব মানবতার করোনামুক্তি কামনা করে নগরবাসীকে মাহে রমাদানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়মী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিশ্ব আজ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নতুন এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকছে। এ ভাইরাসকে প্রতিহত করার মত প্রতিষেধক ঔষধ মানব সভ্যতা আবিস্কার করতে পারেনি। এ ভাইরাস থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারা ও দেহকোষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ ক্ষমতাই আপাতত আমাদের একমাত্র ভরসা। মাহে রমাদানের শিক্ষার আলোকে আমরা যদি মানসিক ও দৈহিকভাবে সংযমী জীবন ধারা আয়ত্ব করতে পারি মহান করুনাময় আল্লাহত আয়ালা নিশ্চয়ই আমাদের সাহায্য করবে। নাজাতের মাস রমজানে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময়ের দোয়া সরাসরি আল্লাহত আয়ালার দরবারে পৌঁছায় এবং তিনি তাঁ কবুল করেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দুরদর্শী নেতৃত্বে নানা দুর্যোগ, প্রতিকুলতা ও ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে এগিয়ে চলা অদম্য বাংলাদেশকে বিশ্ব দেখেছে। করোনা বিরুদ্ধেও তাঁর গৃহিত পদক্ষেপসমূহও তাঁর সাহসীকতা, সময়ের আগে চলা তথা দুরদর্শী নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ। মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতেই একদিন করোনার প্রভাব মুক্ত হবে বিশ্ব। কিন্তু সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে এবং তাতে মন্দা তৈরী হতে যাচ্ছে তার প্রভাব মোকাবেলায়ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছেন। শিল্প, কৃষি ও নানা প্রয়োজনীয় খাতে প্রনোদনার ব্যবস্থা রেখেছেন। বিশ্ব মহামারী করোনা হতে মুক্ত থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সুপারিশ করে যাচ্ছে তার মধ্যে প্রধানতম হল সংস্পর্শ এড়িয়ে যথাসম্ভব নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করা, নিজেকে ও অন্যদের জীবানুমুক্ত রাখতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বার বার করে সাবান পানি দিয়ে ভালমত হাত ধুয়ে নেয়া।
আমরা অনেকেই আছি, শুধুমাত্র কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে কিংবা পুরোনো অভ্যাস বশত অযথাই আড্ডায় মাতছি, জটলা তৈরী করে ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছি। অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি লক্ষন বোঝার পরও তথ্য গোপন করে নিজের পরিজন, প্রতিবেশীসহ আমাদের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ধর্মীয় বিধান মেনেই সব ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ নাগরিকদের জানমালের সমূহ ক্ষতি ঠেকাতে ভীর এড়ানোর জন্য মসজিদে সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে ঘরে থেকে নামাজ আদায় করতে বলছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জায় জড়ো না হয়ে এ দুঃসময়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে যার যার মত করে নামাজ আদায়, প্রার্থনা, আরাধনা করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। হাদিসেও উল্লেখ আছে, যখন কোন দেশ বা অঞ্চলে মহামারী বা সংক্রামক ব্যাধি দেখা দেয়, সেখানে অন্য এলাকার লোকজন যেন না যায় এবং ঐ সংক্রমিত এলাকার কেউ যেন বাইরের এলাকায় না যান। তবু ব্যাপক সংক্রমিত নারায়নগঞ্জ থেকে অসংখ্য লোকজন দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে, সারাদেশের সংক্রমন ঝুঁকি বাড়িয়েছে। দেশবাসীর দুর্ভোগকে দীর্ঘায়িত করেছে। ধন্যবাদের সাথে বলতে হয়, করোনার সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন, অনেকেই দায়িত্ব শেষে বাসায় যাবার সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছেন না। কর্মস্থলের কাছেই কোথাও সামান্য বিশ্রাম সেরে নিচ্ছেন। নিজের পরিজন ছেড়ে মাথার উপর করোনার ঝুঁকি নিয়ে জনগনের কল্যানে জনগনকে সচেতন করতে দিনরাত এক করে কাজ করছেন তারাসহ নেতৃবৃন্দ। ঘরে থাকা আয়হীন শ্রমজীবি মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সরকারী কর্মসূচীর পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেকেসহ সামর্থবানদের অনেকেই প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। আমাদের চট্টগ্রামের একজন হৃদয়বান ডাক্তারের মহতী উদ্যোগের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সম্পূর্ণ জনগনের সহায়তায় ডাঃ বিদ্যুৎ বড়ুয়া চট্টগ্রামে জরুরী ভিত্তিতে করোনা চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন। নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে বিভিন্ন উৎস হতে দেয়া খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে ছাত্র যুবকদের অনেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শ্রমিকের অভাবে মাঠে থাকা ফসল কৃষকের ঘরে তুলতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগের দেশপ্রেমিক ভাইয়েরা। হাওড় অঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থায় ধানকাটা শ্রমিক পাঠিয়েছে সিএমপি, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জাতি করোনা যুদ্ধের এসব সাহসী ও ত্যাগী যোদ্ধাদের শ্রদ্ধায় স্মরন রাখবে।
অপরদিকে আমরা দেখছি, কতিপয় লোভাতুর মানুষ গরীবের জন্য সরকারী ত্রান চুরি করেছে। সরকার তাদেরকে ছাড় দিচ্ছেনা, কঠোর মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য না দিয়েই। তুলনামূলক বিচারে ত্রান চুরির ঘটনা নগন্য হলেও দলীয় স্টাম্প লাগিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরীর অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। এ মূহূর্তে আমাদের উচিৎ করোনাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকা। পন্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে পন্যবাহি পরিবহনকে লকডাউনের আওতামুক্ত রেখে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যপন্যের দাম বাড়িয়ে রাখছেন, যা মোটেও কাম্য নয়। অসাধু সিন্ডিকেট যাতে রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য আরো বাড়িয়ে রাখতে না পারে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা অধিকতর কঠোর করা দরকার। পাশাপাশি মানুষ যদি সত্যিকারের সংযমী জীবন ধারা অনুসরন করে, বাজারে খাদ্যপন্যের চাহিদা না বেড়ে বরং কমার কথা এবং পন্যের দামও কম থাকবে। বিশ্বে পবিত্র গ্রন্থ কুরান এ কারিম নাজিল হওয়ার ঘটনায় মহিমাম্বিত মাস হল মাহে রমাদান।আর আল কুরআন হল একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। রমাদানের একমাস যদি আমরা যথাযথভাবে সংযমী জীবন যাপন করি, অহেতুক বাইরে ঘোরা ফেরা না করি, লোভ-দ্বেষ-মোহ নামক রিপুকে সংযমের মধ্য দিয়ে দমনে রাখতে পারি। অর্জিত সম্পদের অংশ অসচ্ছলদের জন্য করে যাকাত ও ফিতরা প্রদানে ব্রতী হই, সকল রোজাদারেরা নিজেদের ইফতার ভাগ করে গ্রহন করি তাহলে নাজাতের এ মাসে নিশ্চয়ই আমাদের দোয়া কবুল করবেন এবং সুন্দর একটি ঈদ উদযাপনে সক্ষম হব আমরা।অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মধ্যেও আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সংযমের শিক্ষা দেখতে পাই। হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই নির্দিষ্ট দিনে উপবাস ব্রত পালন করে সামান্য ফলাহার গ্রহন করেন। বৌদ্ধরাও অনেকেই সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিকালভোজন থেকে বিরতি গ্রহনসহ অষ্টপ্রকার বিরতির শিক্ষা পালন করেন। ইসলামে যেমন মহামারীতে কোয়ারেন্টাইন, লক ডাউনের সিস্টেম ছিল তেমনি অন্য ধর্মও তা স্বীকার করে। বর্ষার সময় মাটির অভ্যন্তরে বাস করা ক্ষুদ্র প্রানীকুল, বিষাক্ত সাপ-পোকা-মাকড় মাটির উপর চলে আসা এবং নতুন তৃণ জন্মানোর ফলে চলাচলে বিপদসংকুলতা ও পারস্পরিক ক্ষতি এড়াতে বৌদ্ধ সন্যাসীদের জন্য তিনমাস নিজ নিজ বিহারে অবস্থান করে ধর্ম অনুশীলনের প্রথা রয়েছে। বর্তমান বিপদসংকুল অবস্থা কাটিয়ে তুলতে আমরা স্ব স্ব ধর্মের এ নিয়মগুলোকে সঠিক চর্চায় কাজে লাগাতে পারি। এতে করে আমাদের গোটা বিশ্ব সমাজের কল্যান হবে। সকলের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় সংযত জীবন ধারায় গড়ে উঠবে নিরাতংক একটি সুন্দর পৃথিবী।