[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ধর্ষক! শব্দটা শুনলেই কেমন যেন গাঁ গুলিয়ে ওঠে।
তারা যেমন নোংরা তেমনি তাদের বিচরণে এ সমাজটা দিন দিন নোংরামিতে ভরে যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো ধর্ষক আসলে কারা? যেসব নোংরা মানুষের মাথা বিকৃতভাবে কাজ করে তারাই
ধর্ষক। যারা নিজের চাহিদা মেটাতে একটি কুকুরের সাথে সহবাস করতে দ্বিধা করে না তারাই
ধর্ষক। যাদের মনের ভিতরে শয়তানের ঘুরাঘুরি সর্বদা বিদ্যমান তারাই ধর্ষক।
একজন ধর্ষক কেন ধর্ষক হয়ে উঠে? আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নিশ্চয়ই এমন কোনো ফাঁক রয়েছে যা ধর্ষককে উস্কানি দিয়ে ধর্ষক করে তুলে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থা কি এতটাই দুর্বল যে নারীরা পদে পদে এই সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে? অবশ্যই আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থা চলমান প্রক্রিয়ার দুর্বলতাগুলো এই সব নোংরা মানুষের জন্ম দিচ্ছে। টাই-কোর্ট পরা ভদ্রতার মুখোশের মানুষ অথবা কুৎসিত চেহারার সন্ত্রাসী এই দুই অথবা দুইয়ের মাঝেই লুকিয়ে আছে ওই ভয়ংকর চেহারাগুলো।
অশ্লীলতা এমন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ফলে এবং আমাদের অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থার কারণেই এই সমাজটা দিনদিন হয়ে উঠছে ধর্ষকদের বিচরন ক্ষেত্র। সহজলভ্য পর্ণ সাইট কিংবা উত্তেজনামূলক বিনোদন- ই হোক না কেন, এটি যেমন আমাদের সমাজে ধর্ষক নামক পশুদের মস্তিষ্ককে আরো বিকৃত করছে, ঠিক তেমনি দুর্বল ও ভঙ্গুর আইন ব্যবস্থা তাদের কাজকে আরও উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।
যার ফলে এখন শালীন পোশাকধারী মেয়ে কিংবা অশালীন পোশাকধারী মেয়ে যেই হোক না কেন ধর্ষকের চোখের এখন আর কোনো তফাৎ নেই। তাই দুজনের একজনও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষক, সেতো পশু হওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। তার পক্ষে সাফাই করার কোন প্রশ্নই আসে না কিন্তু তাদেরকে এই সমাজটা তৈরি করে দেওয়াতে কোনো না কোনোভাবে আমরা সমাজের প্রত্যেকটা মানুষই দায়ী। হোক সে অশালীন পোশাকধারী নারী পুরুষ কিংবা আমাদের অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থা।
এখন প্রশ্ন হলো আমাদের সমাজে কি সভ্য পুরুষ সমাজের কোনো অস্তিত্ব নেই? নাকি সবাই এখন ধর্ষকের কাতারে। অবশ্যই আছে। বরং অধিকাংশই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। যারা প্রতিনিয়ত আমাদের অধিকার আদায়ে চেষ্টা করছে। একটি মেয়ের উপর নিশংসভাবে হওয়া এই অত্যাচারে যাদের অন্তরাত্মা ও কেঁপে উঠে। দিন শেষে সেই পিতাও একজন পুরুষ ,যার কষ্টে উপার্জিত অর্থে আমাদের আহারের ব্যবস্থা হয়।
কিন্তু পীড়াদায়ক হলো সত্য এটাই, ধর্ষক নামক সমাজের সেই কীটগুলোর জন্যই আজ পুরো পুরুষ সমাজ কলঙ্কের কালিতে কলঙ্কিত। যারা কিনা চাইলেও এখন মুখ ফুটে তার ধর্ষিতা বোনের জন্য কিছু বলতে পারছে না। কারণ আর যাই হোক ধর্ষক তো সেই পুরুষ সমাজ থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে।
যার জন্য ধর্ষণের এর প্রক্রিয়া চলছে অনবরত আর পুরুষরা তাদের সম্মান হারাচ্ছে নারীজাতি তথা পুরো সমাজের কাছে।
তাই এখনই সময়উপযোগী জাতীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে , যা শুধু সংবাদ আর লেকচারে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে কাজে আসবে। সমাজ থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে সকল অশ্লীল কর্মকাণ্ড যা ধর্ষকদের তাদের কাজে অনুপ্রেরণা দেয়। আর ঠিক করতে হবে আইনের ভাঙ্গা পা গুলো।
তাদের জন্য প্রয়োগ করতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে পরবর্তীতে ধর্ষণের চিন্তা করতে তাদের অন্তর আত্মা আতংকিত হয়।
পাশাপাশি দরকার সামাজিকতা ও বিনোদন নামের সকল ধরনের অশ্লীল কর্মকাণ্ড বাদ দেওয়া এবং একটি সুন্দর ও শালীন সমাজ গঠনে প্রত্যয়ী হওয়া। আর দরকার আমাদের অনুভূতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঠিক তদারকির ব্যবস্থা।
যে প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে আমাদের মঙ্গলের জন্য তা যেন আমাদের সমাজে ত্রাসের কারণ না হয় তার প্রতি খেয়াল রাখা।
কারণ, এখনও যদি আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকি তাহলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না কখনো। সমাজের এই কীটগুলো আস্তে আস্তে ভঙ্গুর করে দিবে এর ভিত, যেমনটি পোঁকামাকড় করে গাছের গুড়িকে। আর এভাবেই নষ্ট করে দেবে পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে।
অন্যদিকে দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্তই পারবে আমাদের নারীদেরকে একটা নিরাপদ সমাজ দিতে। পাশাপাশি পুরুষদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনতে। তাদের সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার দিবে আর উভয়কে বাঁচাবে সম্মান ও সম্ভ্রম হারানোর ভয় থেকে।
নিরাশা গ্রস্থ মানুষ কখনো আশার কিরণ দেখতে পারে না। তাই আমরা আশা করি, এ সমাজ একদিন ঠিক হবে। পচনের মাত্রাটা যেহেতু গভীর, একে পূর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে আনাটা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তবুও, যদি সঠিক সিদ্ধান্তনেওয়া হয় তবে তৎক্ষণাৎ ফল না পেলেও ক্রমান্বয়ে এই জীর্ণ অবস্থার উন্নতির আশা আমরা করতেই পারি।
লেখক: সাজিয়া সুলতানা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।






























