[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় হাজার ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) এ বাজেট ঘোষণা করা হয় নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটরিয়ামে।
গত ২৬ জুলাই সর্বসম্মতভাবে এ বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয় নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটরিয়ামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের পঞ্চদশ করপোরেশন সভায়। পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেওয়া হয় সেই সভায়।
দক্ষিণ সিটির ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ছিল এক হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। মেয়র পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এটি তার তৃতীয় বাজেট ঘোষণা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আয় অংশের প্রারম্ভিক স্থিতি ধরা হয়েছে ৫৯৩.৬৯ কোটি টাকা, রাজস্ব আয় ১২০৮.৭০ কোটি, অন্যান্য আয় ৫৭.৮০ কোটি, সরকারি থোক ও বিশেষ বরাদ্দ ৬৫ কোটি এবং মোট সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪৮১৬.০৯ কোটি টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত করপোরেশন সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এক হাজার ৯২৩ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল ছয় হাজার ৭৩১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ছয় হাজার ১১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় হাজার ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করল সংস্থাটি।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের সাতাশ মাস অতিক্রম করে চলেছি। করোনা মহামারির প্রথম ঢেউয়ের চূড়ান্ত প্রকোপকালে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি এবং সারা বিশ্বের মতো বিগত দুই বছরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশও করোনা মহামারির চরম ভীতিকর পরিস্থিতিতে নিপতিত ছিল। ঢাকাবাসীর কল্যাণে এই করোনা মহামারির মাঝেই আমরা নতুন কর্মস্পৃহা ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমাদের বিস্তৃত কর্মযজ্ঞ শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত দিনে আমরা উন্নত ঢাকা গড়ার ভিত অনেকটাই সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে নতুন আরেকটি ধাপে উন্নীত হয়েছি।
তিনি বলেন, যেকোনো কার্যক্রম শুরু করার আগে যেমন একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পরিকল্পনা দরকার হয়, আগামীদিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাজেট ঠিক তেমনই পথনির্দেশনা প্রদান করে থাকে। সুযোগ দেয় বিগত দিনগুলোতে সংস্থার দুর্বলতা ও শক্তিমত্তা পর্যালোচনা করার। তাই এ কথা নিশ্চয়ই বলা যায়, জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধন ঘটাতে এবং ক্রমাগতভাবে সংস্থার ভিত মজবুত করার মাধ্যমে এগিয়ে চলার পথে সবচেয়ে অর্থবহ দাপ্তরিক দলিলের নামই বাজেট। সে জন্য ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘উন্নত ঢাকা গড়ার ভিত’ রচনা মজবুত করতে সক্ষম হয়েছি এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা নতুন আরেকটি ধাপে পদার্পণ করতে যাচ্ছি।
মেয়র বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ৭০৩.৩১ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে। বিগত অর্থবছরে আমরা রাজস্ব আদায়ে পূর্বেকার সেই মাইলফলক অতিক্রম করে নতুন ইতিহাস গড়তে সমর্থ হয়েছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৭৯.৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছি। আমরা সমস্যা ধরে ধরে কাজ করছি। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এ রকম ১৩৫টি স্থান চিহ্নিত করে সেসব স্থানে আমরা অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯১টি স্থানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ১০টি স্থানে কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং বাকি স্থানগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
শেখ তাপস বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্য অনুমতি বাবদ ১৫০ কোটি, বাজার ভাড়া বাবদ ৩৫ কোটি, বিজ্ঞাপন কর বাবদ ১৫ কোটি, বাস-ট্রাক প্রান্ত টার্মিনাল থেকে ১৬ কোটি, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ২২ কোটি, ইজারা (টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার, ভাগাড় ইত্যাদি) বাবদ ৩০ কোটি, রাস্তা খনন ফি বাবদ ৪০ কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ১৫০ কোটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে আয় বাবদ ৮ কোটি, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসেতু থেকে ১০ কোটি, সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ ৭ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ৪.৫০ কোটি টাকা আয় করা যাবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া সরকারি মঞ্জুরি (থোক) থেকে ৪০ কোটি ও সরকারি বিশেষ মঞ্জুরি বাবদ ২৫ কোটি এবং ঢাদসিক, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প খাতে ৪৮৮১.০৯ কোটি টাকা বরাদ্দপ্রাপ্তির প্রত্যাশা করছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এগিয়ে চলার পথে সরকারের যথাযথ আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদসহ কাউন্সিলর, বিভাগীয় প্রধান এবং আঞ্চলিক কর্মকর্তারা।