[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান স্থগিত করেছেন, চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ। হাইকোর্টের দেওয়া মোট ১১ দফা নির্দেশনা ও অভিমতের মধ্যে ৭টি নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের আদেশ দেওয়ার একদিন পরই তা স্থগিত হয়ে গেল। আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ৫টি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ১৫ জুন এক আদেশে অবহেলায় মৃত্যু, আইসিইউ বণ্টন, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা লকডাউন নিয়ে ১১ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দেন। এর মধ্যে ৭টি স্থগিত করা হয়েছে। ৩টি নির্দেশনা বহাল রাখা হয়েছে। আর ঢাকা সিটি লকডাউন নিয়ে দেওয়া অভিমত উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়েছে।
আপিল বিভাগ যে সাত দফা নির্দেশনা স্থগিত করেছেন সেগুলো হলো-
১. সরকারি নির্দেশনাসমূহ পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি-না তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
২. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৪ মে জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে ১৫ জুন পর্যন্ত কতজন কভিড এবং নন-কভিড রোগীর চিকিৎসার প্রদান করা হয়েছে তা উল্লেখিত তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। তৎসঙ্গে ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের একটি তালিকা প্রেরণ করতে হবে।
৩. বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি-না সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। ওই সকল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
৪. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের বিশেষত ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ যাতে কভিড ও নন-কভিড সকল রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
৫. কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনিহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলা জনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
৬. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন হাসপাতালে আইসিইউতে কত জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে, তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নম্বর গুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিশেষত টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগ’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০১২ এর ধারা-১৪ অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অরডিনেশন গ্রুপ’র কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। ওই কমিটি কার্যকর হলে কমিটির সুপারিশের আলোকে উপরোক্ত আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক রিকুইজিশান করা যেতে পারে।
যে সকল নির্দেশনা ও অভিমত বহাল রাখা হয়েছে সেগুলো হলো-
১. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি-না এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অত্র আদালতে দাখিলের জন্য স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
২. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কভিড-১৯ রোগীর কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রি-ফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বানিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া যে অভিমত উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়েছে তা হলো- ‘সরকার এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সংগত হবে না বলে অত্র আদালত মনে করে।’