[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
চসিক, ইউএনডিপি পিপিআরসি এর যৌথ উদ্যোগে দরিদ্র-বান্ধব নগর উন্নয়ন অংশীজন কর্মশালা অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন বলেছেন উন্নত শহরের আদলে এই নগরকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য গড়ে তোলার জন্য যা যা করা দরকার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তার সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়েও কাজ করছে চসিক।
এ লক্ষে চসিক নগর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। যা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষামান আছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বিশ্বমানের পুরোপরি নগর বলা না গেলেও , চট্টগ্রামকে মন্দের ভালো শহর বলা যাবে বলে মন্তব্য করলেন সিটি মেয়র। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে পাওয়ার অব পাটিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি),আইপিই গ্লোবাল এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে দরিদ্র-বান্ধব নগর উন্নয়ন অংশীজন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পিপিআরসি নিবার্হী চেয়ারম্যান,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড.হোসেন জিল্লুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবদুল ওয়াজেদ, ভারতস্থ আই পি ই গ্লোবাল প্রজেক্ট ম্যানেজার শ্রীপর্ণা সান্যাল আইয়ার, প্রান্তিক জনগোষ্টির জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের টাউন ম্যানেজার মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন খান,কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ছালেহ আহমদ চৌধুরী, মো. আজম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ইফতেখারুল ইসলাম, সমাজকর্মী সাহেলা আবেদীন, সিডিসি’র সভাপতি আনোয়ারা আলম, ফেডারেশনের সভাপতি রেখা আকতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় চসিক প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান, কাউন্সিলর ইসমাইল বালী, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিল জেসমিন পারভীন জেসী, জেসমিনা খানম, লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী, আঞ্জুমান আরা বেগম, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাসেম সহ সাংবাদিক ও প্রকল্পের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সিটি মেয়র বলেন পাঁচ বছর অন্তর অন্তর পৌরকর মূল্যায়ন আইন আছে। বাস্তবায়ন নেই। বাস্তবায়ন করতে গেলেই সমস্যা আর অভিযোগের পাহাড়। এই সময়ে পাশে একটা লোকও পাওয়া যাবে না। তাই প্রয়োজন গতানুগতিক আইন পরিবর্তন,পরিমাজন করে চসিক পৌর কর আইন প্রণয়ন করতে হবে বলে মত দেন সিটি মেয়র।
এই প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আরো বলেন, পান, সিগরেট খেতে হাজার টাকা ব্যয় করতে পারে। অথচ পৌর ট্যাক্স দিতে পারে না কতিপয় নগরবাসী। নগরবাসির মধ্যে এই প্রবণতা পরিবর্তন না হলে এই কর্পোরেশনের সক্ষমতা কখনো বৃদ্ধি পাবে না। তাই নগরবাসির মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্ঠিতে মিডিয়া কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিটি মেয়র। জনাব হোসেন জিল্লুর এক প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন,কর্পোরেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে নগরবাসির সহযোগিতার পাশাপাশি বন্দর,ভুমি হস্তান্তর ফি বর্ধিত করা গেলে চসিকের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। সিটি মেয়র বলেন এ নগরে জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বৃদ্ধির মূল কারণ হলো মানুষ গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছে। ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার মিরেসরাই ও আনোয়ারায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছে।
এ শিল্পাঞ্চলের কর্মরত কর্মকর্তা -কর্মচারীদের চাপ এই নগরের উপর পড়বে। তখন ৬০ বর্গমাইল এলাকার এ নগরে অতিরিক্ত আরো ১৫লক্ষ মানুষ বসবাস করবে। ফলে চট্টগ্রাম শহরে এত লোকের বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই নগরের চারিপার্শ্বে বর্ধিত করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন বর্তমানে এ শহরে ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার দরিদ্র মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫ হাজার হত-দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছে চসিক। এই বিপুল হত- দরিদ্র মানুষকে বিভিন্ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত করা চসিকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। দরিদ্র বান্ধব নগর গড়তে হলে তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সময়মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে এ নগরকে দারিদ্রমুক্ত, নিরাপদ ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা দূরুহ হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের ভিশন থাকা দরকার। কোন কিছুর ভিশন থাকলে তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন নগরবাসীর বদ্ধমুল ধারণা যে এ নগরের সকল দায়-দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কর্পোরেশনের মূল দায়িত্ব হলো নগরীর সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, আলোকায়ন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এছাড়াও কর্পোরেশন নগরবাসির সন্তানদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নগরবাসীর পৌরকরের উপর ভিত্তি করে। এই প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন ২০১৫ সালে কর্পোরেশনের প্রশাসনিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি টাকা যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। নগরবাসীর যদি ঠিকমত পৌরকর পরিশোধ করে তাহলে চসিকের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারি সহায়তা বাড়ানো ও পৌরকর আদায়ের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে সিটি মেয়র বলেন নাগরিকসেবা তরান্বিত করতে যথাসময়ে পৌরকর পরিশোধে নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫% বিনা ফিতে পড়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে অনেকের ভর্তি ফিও মওকুফ করা হয়ে থাকে। নগরবাসীর চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে ৩০ টাকা নামিয়ে ১০ টাকা রেজিস্টেশন ফি করা হয়েছে এবং ফ্রিতে বিভিন্ন টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সিটি মেয়র আরো বলেন, বর্তমানে ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১ হাজার দরিদ্র পরিবারকে মেয়র হেলথ কার্ড প্রদান করা হচেছ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে নগরী আয়তন বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন সিটি মেয়র। পিপিআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড.হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন,নগরবাসির হ্যোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়া চসিকের সক্ষমতা আসবে না। তাই তিনি নগরবাসির মধ্যে হ্যোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের বিষয়ে গণ-সচেতনতা সৃষ্ঠিতে উদ্যোগ নেয়ার কথা কর্মশালায় উল্লেখ করেন। নগরীতে বস্তিবাসির সংখ্য ক্রমাগত বৃদ্ধিতে তিনি উদে¦গ প্রকাশ করেন বলেন,নগরীর লাগোয়া স্থান সলিমপুর। এখানে হাজার হাজার একর সরকারী জায়গা রয়েছে। এখানে বস্তিবাসিদের জন্য পরিকল্পিত উপায়ে বাসস্থান করা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবদুল ওয়াজেদ বলেন, জাতি সংঘ উন্নয়ন তহবিল (ইউএনডিপি) এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এলআইইউপিসি কর্মসূচী সরকারের দারিদ্র হ্রাসকরণ ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণ সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে। এই গবেষনা প্রতিবেদনে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বৃহত্তর পরিবেশে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে সন্দেহ নাই। কেননা এলইউপিসি কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ে শহরে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্টির বিভিন্নমূখি সমস্যা সার্বিকভাবে অনুধাবন করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ ইত্যাদি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সক্ষমতা বিষয়ক গবেষণাধর্মী এই প্রতিবেদন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে দারিদ্র নিরসন মূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।