[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
সুজিৎ কুমার বড়ুয়া শিমুল : উন্নয়ন একটি গতিশীল ও বহুমূখি প্রক্রিয়া। কোন নির্দিষ্ট বিষয় ও সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এটি। সাধারণভাবে বলতে গেলে উত্তরণ ঘটানোর মধ্যদিয়ে ও বিকশিত করার মাধ্যমে উন্নয়ন সংঘটিত হয়। অন্যভাবে বলা যায়, এগিয়ে যাওয়াটাই হল উন্নয়ন। সে বিবেচনায় বলতে পারি, বিগত দশকে গোটা বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রামও এগিয়েছে বহুগুণে। পাহাড়, সমতল, নদী, সাগর মিলে অপরূপা চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ে গড়ে ওঠা বন্দর সমৃদ্ধ একটি সুপ্রাচীন ও বিশ্বজনীন শহর হওয়া সত্ত্বেও এর আগে চট্টগ্রামের উন্নয়নের চিত্র ছিল করুণ। ব্রিটিশের শাসনকালের উন্নয়ন বাদ দিলে চট্টগ্রামের তেমন কোন উন্নয়ন এর আগে হয়নি বললেই চলে। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতি অনেকটাই এ চট্টগ্রামকে ঘিরে আবর্তিত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য। আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক নুরুল ইসলাম তাঁর এক লেখায় তুলে ধরেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নাকি নেতাকর্মীদের বলেছিলেন ‘তোরা দেখিস-যেদিন আমার চট্টগ্রাম জাগবে সেদিনই আমার বাঙালি জাগবে, আমার স্বাধীনতা আসবে, আমার বিজয় আসবে।’
চট্টগ্রাম জেগেছিল, স্বাধীনতা এসেছে। চট্টগ্রামকে ঘিরে উন্নয়নের বহুমুখি পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। অভাগা বাঙালি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রামকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনা থেমে যায়। ১৯৯৬সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার গঠনের পূর্বের সকল সরকার চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ফলশ্রুতিতে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সকল শ্রেনী পেশার লোকের সমম্বয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী হন প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তাঁর হাত ধরে চট্টগ্রাম আস্তে আস্তে উন্নয়নের পথে হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু এ যাত্রাও দীর্ঘায়িত হয়নি। ২০০১সালে বিএনপি জামায়াত সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে উন্নয়নের গতি ও ধারাবাহিকতা আবারো হোঁচট খায়। মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় থেকেই উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ চালাতে হয়েছে। নিজের লবিং কাজে লাগিয়ে জাপানসহ বিদেশি সংস্থার সহযোগিতাও কিছুটা পেয়েছিলেন বটে।
২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা লালদিঘির মাঠের এক নির্বাচনী সমাবেশে বলেছিলেন, জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে নিবেন।
২০০৯সালে গঠিত সরকারে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। চট্টগ্রামবাসীকে দেয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে তিনি আমলানির্ভর না হয়ে জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বেছে নেন, যার আছে মেধা, সাহস, উদ্যম, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের অভ্যাস। তিনি হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। জহুরীর চোখ রত্ন চিনতে ভুল করেন না। ২০০৯ হতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের উন্নয়নকে পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হলেন বিজ্ঞ জহুরী আর এ সময়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রধান দায়িত্বে থাকা আবদুচ ছালাম একটি খাঁটি রত্ন। অনেকেই তাঁকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের মানসপুত্র হিসেবেই দেখে থাকেন। প্রথমে দুই বছরের জন্য আবদুচ ছালামকে সিডিএর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাঁর কর্মস্পৃহা ও দক্ষতা দেখে বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে তাঁকে ১০ বছর বছর পর্যন্ত চট্টগ্রামের উন্নয়নের কান্ডারি হিসেবে রেখে দেন।
মানুষ একসময় মনে করত, বিল্ডিং এর নকশা অনুমোদন দেয়া ছাড়া সিডিএ এর আর কোন কাজ নেই। সিডিএ ভবনে থাকত সুনসান নিরবতা। সিডিএ কর্মকর্তা কর্মচারীর বাইরে তেমন বেশি লোকজন সিডিএ ভবনে যেতেন না। জনাব আবদুচ ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে মুখরিত ও আলোকিত হয়ে ওঠে চউক ভবন ও এর আশপাশ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি একটি চ্যালেঞ্জিং মিশন শুরু করেন। তিনি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুইপাশে ড্রেন নির্মাণসহ রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ, সংস্কার ও বর্ধিতকরণ কাজে হাত দেন। যার মধ্যে-কালুরঘাট হতে বহরদার হাট রোড সম্প্রসারণ, কাপাসগোলা হতে চকবাজার রোড সম্প্রসারণ, চকবাজার হতে আন্দরকিল্লা রোড সম্প্রসারণ, আন্দরকিল্লা হতে লালদিঘি রোড সম্প্রসারণ, কোতোয়ালী মোড় হতে ফিরিঙ্গী বাজার রোড সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণ, সদরঘাট রোড সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণ, পাঠানটুলী রোড সম্প্রসারণ, কর্ণফুলি মার্কেট হতে এক্সেজ রোড পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ড্রেন নির্মাণ, কমার্স কলেজ রোড সম্প্রসারণ, ঢাকা ট্রান্ক রোড, সাগরিকা রোড, অক্সিজেন হতে প্রবর্তক মোড়, অলি খাঁ মসজিদ হতে মুরাদপুর, মুরাদপুর হতে অক্সিজেন, অক্সিজেন হতে কুয়াইশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, মোহরা নক্সাশ শিল্প এলাকা রোড, কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকা রোড, ডিসি রোডসহ মোহরা এলাকার ২০কিলোমিটার রাস্তার সম্প্রসারণ কাজ তিনি সফলতার সাথে সম্পাদন করেন।
অনেক সময়েই তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কেন তাঁকে বেছে নিলেন এই প্রশ্নটা তাঁর চউক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার দিন থেকেই নিজের কাছে বিরাট প্রশ্ন হয়ে তাড়া করছিল। চট্টগ্রামের বাসিন্দা হিসেবে তিনি প্রতিনিয়ত যে সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতেন তার মধ্যে যানজট ও জলজটকেই প্রথমে দেখলেন। ভাবলেন এসমস্যাগুলো সব মানুষকেই সরাসরি কষ্টে ফেলে দেয়। তাই, তিনি রাস্তা সম্প্রসারণ ও নালা নির্মাণকে জরুরিভাবে নিলেন। একাজ মোটেই সহজ ছিলনা। অনেক বসতবাড়ি, স্থাপনা, মসজিদ, মাদ্রাসা, দোকানপাট, মন্দির প্যাগোডা, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে ছিল। রাজনৈতিক কারণে তৃণমূলের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি বারবার বৈঠক-আলোচনায় সমঝোতার মাধ্যমে এ দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করেছেন। মানুষের ক্ষতিপূরণের টাকা ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আবদুচ ছালাম এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন এবং মানুষের অকুন্ঠ আস্থা অর্জন করেন।
পূর্ব থেকে যেভাবে রাস্তাঘাট, স্থাপনা নিয়ে শহর গড়ে ওঠেছে তাতে নতুন করে রাস্তা করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত দেখে তিনি ফ্লাইওভার, ওভার পাস, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। একাজ করতে গিয়ে তিনি নানামূখি প্রতিবন্ধকতার শিকার হন, অনেক মহল থেকে তীব্র সমালোচনা আসতে থাকে। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আনুকুল্য, উন্নত-সমৃদ্ধ মালয়েশিয়ার পথিকৃৎ মহাথির মোহাম্মদকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তিনি এগিয়ে যান। তাঁকে অনেকবারই বলতে শুনেছি, মহাথির মোহাম্মদও সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন না। কিন্তু দিনশেষে বিশ্ববাসী তাঁকেই মালয়েশিয়ার উন্নয়নের পথিকৃৎ হিসেবেই মেনেছে। মহাথির মোহাম্মদ এর উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করতে ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করতে তিনি মালয়েশিয়া ছুটে গিয়েছিলেন।
বহরদার হাট এম, এ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর হতে লালখান বাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, কদমতলী ফ্লাইওভার, দেওয়ানহাট ওভার পাস নির্মাণ করে আবদুচ ছালাম চট্টগ্রামবাসীকে দেখিয়েছেন দ্বিতল রাস্তা কেবল বিদেশে নয় বাংলাদেশেও সম্ভব। অর্থাৎ চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার-ওভারপাস-এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের যুগের সূচনা করেন তিনি। অনেকগুলো বিভাগকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে প্রথম দিকে কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও পর্যায়ক্রমে তিনি তাঁর কর্মকা-কে অনেকটাই নিখুঁত করতে সমর্থ হন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জনাব আবদুচ ছালাম লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত বাংলাদেশের নগরীর অভ্যন্তরে সবচেয়ে দীর্ঘতম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেন যা বাস্তবায়নাধীন।
নগরীকে বাড়তি যানবাহনের চাপমুক্ত রাখতে ও জলোচ্ছ্বাস-জলাবদ্ধতা হতে রক্ষা করতে অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেন। এ প্রকল্প প্রনয়ণের ক্ষেত্রে বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলা, বান্দরবান, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িকে নিয়ে বিশাল অর্থনৈতিক ও পর্যটন সম্ভাবনার দিক মাথায় রেখেই করা হয় বলে তিনি জানান। তাঁর গৃহিত পদক্ষেপে বাস্তবায়িত পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট সিটি আউটার রিং রোডটি কর্ণফুলি ট্যানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, টেকনাফকে নগরীর উপর কোন চাপ ছাড়াই সারাদেশের সাথে এক সুতায় বাঁধতে সক্ষম হবে।
ফৌজদারহাট হতে বায়েজিদ রোড ৬ কিলোমিটার বাইপাস মূল শহরকে বাড়তি যানবাহনের চাপমুক্ত রেখে সারাদেশের সাথে উত্তর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির যোগাযোগকে সহজতর করেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ ও বিভিন্ন পর্যায়ের যানবাহন যাতে বিভিন্ন রুটে নগরে প্রবেশ করতে পারে সেই বিবেচনায় চন্দনপুরা হতে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। চাক্তাই খালের মুখ হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ১২টি খালের মুখে শক্তিশালী ওয়াটার পাম্পসহ টাইডাল রেগুলেটর গেট সম্বলিত ৮.৫ কিলোমিটার রিভার ড্রাইভ রোড নির্মানের কাজ তিনি শুরু করেছেন যা শহর রক্ষাবাঁধ হিসেবে কাজ করবে। সিডিএ প্রতিষ্ঠার পর ৫০বছরে মিলেও এত উন্নয়ন হয়নি, যা আবদুচ ছালাম সাহেবের তত্ত্বাবধানে ১০বছরের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে।
সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের সাথে চট্টগ্রাম মহানগরের অনন্য রোড কানেক্টিং নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে একটি মেগা প্রকল্প প্রণয়ন করেন। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। নগরীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনের উন্নয়নেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হতে আবদুচ ছালাম অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠা করেন, সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। সিডিএর সহায়তায় অনন্যা আবাসিকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৫০০শয্যার অত্যাধুনিক এভার কেয়ার হাসপাতাল। এছাড়া চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে সিডিএ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেন আবদুচ সালাম সাহেব। আবাসন ব্যবস্থার তিনি উন্নয়নে গড়ে তোলেন কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিকের মত বৃহৎ আবাসিক এলাকা। নারী শ্রমিকদের জন্য সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় গড়ে তোলেন ডরমেটরী, সিডিএ স্কয়ার ফ্ল্যাট, কাজীর দেউরী ফ্ল্যাট, দেওয়ান হাট ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ ছালাম সাহেবের অনন্য কীর্তি। এছাড়াও বাণিজ্যিক উন্নয়নেও তিনি অনেক কাজ করেছেন। যার মধ্যে বিপনি বিতানের দশতলা বিশিষ্ট বি ব্লক শপিং মল, কাজীর দেউরী কাঁচা বাজার, সল্টগোলা আধুনিক শপিং মল, বিপনি বিতানের এ ব্লকের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন অন্যতম।
পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানে উন্নিত করার কাজ করেন আবদুচ ছালাম। চট্টগ্রামের ইতিহাস, আন্দোলন সংগ্রামের স্মৃতি সংরক্ষণে তিনি কোর্ট হিলে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন, কুয়াইশ এলাকায় নির্মাণ করেন বঙ্গবন্ধুর সুউচ্চ ম্যুরাল। ধর্মীয় উন্নয়নে কল্পলোক আবাসিকে মডেল মসজিদ নির্মানের উদ্যোগ নেন তিনি। এভাবে তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রায় ২০হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করে অধিকাংশই নিজ তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রকল্পের কাজ শুরু করে এগিয়ে দিয়ে গেছেন। এসব তিনি সম্ভব করেছেন তাঁর সততা, মেধা, পরিশ্রম এবং ক্যারিশম্যাটিক ও মোহনীয় নেতৃত্বগুণের সমাহারে। এক বন্ধু সেদিন লুইস ক্যারলের এ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড গল্পের কথা বলছিলেন। এই গল্পে এ্যালিস নামে একটি ছোট্ট বালিকা খরগোশ তাড়া করতে গিয়ে এক রহস্যময় গর্তে পড়ে যায়। সে গর্তে অনেকগুলো অদ্ভুত ঔষধের ছোট ছোট বোতল দেখে এ্যালিস কৌতুহল বশত একটি বোতলের ঔষধ খেয়ে নেয়। সে ঔষধের ছিলো যাদুকরী ক্ষমতা, মুহূর্তেই সে ছোট্ট এলিস বিরাট আকৃতি পায়।
এতে হতবিহ্বল এ্যালিস কাঁদতে শুরু করল আর তার চোখের জলের বড় বড় ফোটায় নিচে অনেক পানি জমে যায়। এলিস তখন মাথা খাটিয়ে অন্য একটি বোতল হতে আরেকটি ঔষুধ খেয়ে এ্যালিস আগের মত ছোট আকার ধারন করে। এতে নতুন এক বিপত্তি তৈরি হয়। এলিস এবার নিজের চোখের ফোটায় জমা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। অর্থাৎ সময়ের ব্যবধানে এ্যালিস নিজের চোখের জলে নিজেই সাঁতার কাটছে। সিডিএ’কে এলিস হিসেবে ধরলে এবং ১৯৫৯-২০২১ সালের ৬২ বছর পর্যালোচনায় ২০০৯ সাল হতে ২০১৯ সালকে মনে হবে জাদুকরী ঔষধে বিশালাকৃতি প্রাপ্ত এলিসের সময়। জনাব আবদুচ ছালাম হলেন সেই জাদুকরী ঔষুধ যার কারণে সিডিএ তার কার্যপরিধি ও ব্যাপকতায় প্রকা- আকার ধারণ করেছিল। আর এখানে লুইস ক্যারল অবশ্যই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের জাদুকর, বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
আবদুচ ছালাম সিডিএর দশ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রামের উন্নয়ন-সিডিএ-আবদুচ ছালাম তিনটি শব্দকে সমার্থক করে তুলেছিলেন। উন্নয়নের জন্য মুখের কথা নয় আন্তরিকতা, সাহস, উদ্যম, মেধা ও নিষ্ঠার রসায়নে গড়া যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। জনাব আবদুচ ছালামের মধ্যে সে রসায়ন ছিল। তাই তিনি এত এত উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন। জনাব আবদুচ ছালাম দীর্ঘজীবী হোন, আরো বড় পরিসরে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হোন-এ শুভ প্রত্যাশা রইল।
লেখক : সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা