গাজীপুরের শ্রীপুরে সম্পত্তির জন্য মায়ের মরদেহ দাফনে সন্তানের বাধা

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১,১১:৩৪ অপরাহ্ণ
0
43

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

আজহারুল ইসলান জনি (গাজীপুর) : বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গাজীপুরের শ্রীপুরের খন্ড গ্রামে মৃত মান্নানের স্ত্রী মালেকা বেগম (৬৫) এক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি মারা যান।
তিল তিল করে মানুষ করে গড়ে তুলেছেন ছেলেকে। পড়াশুনা করিয়ে বানিয়েছেন শিক্ষকও। “বর্তমানে তিনি একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক”।  সন্তানের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছেন নিজের আরাম আয়েশের কথা। অথচ সেই গর্ভধারিণী মায়ের মৃত্যুর পর প্রধান শিক্ষক এই সন্তানই দিয়েছেন  মরদেহ দাফনে বাধা।

মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বড় ছেলে স্থানীয় একটি বেসরকারি  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দাফনে বাধা দেয় পুলিশ। তবে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপ এবং মৃত্যু সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখিয়ে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এ বিষয়ে মৃতের ছেলে অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন বলেন, আমার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই মাকে আমার ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারনায় আমি থানায় অভিযোগ করেছিলাম। তবে পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্ত না করেই চলে গেছে। আমি এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবো।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৪ সালে আব্দুল মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরে জমির বণ্টন নিয়ে তাদের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়।  ইকবাল হোসেন তার মায়ের পাওয়া সম্পত্তির মালিকানা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাকে জমি লিখে না দেওয়ায় তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে  মা চলে যান ছোট ছেলের বাসায় । মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছোট ছেলেই তার দেখভাল করে এসেছেন।

ইকবালের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আমিই মায়ের দেখভাল করে আসছি। মা করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার রাতে তিনি মারা যান। বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসার পর বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে দাফনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সবাই যখন দাফন কাফনের কাজে ব্যস্ত, তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে বসে রইলেন।  যে মা খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে মানুষ করলো, সে সন্তান শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলো না, এমন কি মায়ের কবরে একমুঠো মাটিও দিলো না। । মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ভাইকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তিনি সারা দেননি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ  বলেন, সম্পদের জন্য এভাবে একটি সন্তান তার মায়ের মরদেহ দাফনে বাধা তৈরি করবে এটা সত্যিই ঘৃণার কাজ। আমরা এলাকাবাসী হিসেবেও  লজ্জিত। সবচেয়ে বড় কথা সে একজন শিক্ষিত ছেলে, একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এখানে তার শিক্ষাটা অন্তত পরাজিত হয়েছে।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া মৃত নারী করোনা পজিটিভ ছিল। তবে তিনি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন সেহেতু অভিযোগ থাকলে সেখানে মামলার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে