[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা মাহালীপাড়া এলাকায় ‘সাধুজন মেরী ভিয়ান্নী গির্জায়’ ফাদার প্রদীপ গ্যাগরী কর্তৃক এক আদিবাসী কিশোরীকে তিন দিন আটকে ধর্ষণ ও বেআইনী সালিশের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকসহ বেআইনী সালিশকারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন, দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, অদ্য ৩০.০৯.২০২০ তারিখ বিভিন্ন দৈনিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় যে, রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা মাহালীপাড়া এলাকায় ‘সাধুজন মেরী ভিয়ান্নী গির্জায়’ ফাদার প্রদীপ গ্যাগরী কর্তৃক এক আদিবাসী কিশোরীকে তিন দিন আটকে ধর্ষণ ও বেআইনী সালিশের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ আদিবাসী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিশোরী গির্জার পাশে ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হলে ২৭ সেপ্টেম্বর কিশোরীরর ভাই থানায় সাধারন ডায়েরী করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ দুপুরে নিখোঁজ কিশোরী গির্জার ফাদার প্রদীপের রুমে বন্দি অবস্থায় আছে বলে জানা যায়। এ নিয়ে গ্রামের মোড়ল ও মুণ্ডুমালা সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্মেল মার্ডির নেতৃত্বে ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গির্জার ভেতরে সালিশি বৈঠক বসে ফাদার প্রদীপ গ্যাগরকে অপসারণ করে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। আর ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে গির্জার ভেতরে সিস্টারদের কাছে রাখা হয়। বলা হয়, ২৯ সেপ্টেম্বর যদি ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা থানা থেকে নিখোঁজের ঘটনায় করা জিডি প্রত্যাহার করে তবেই ওই কিশোরীকে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়াসহ তার সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত খরচ বহন করবে গির্জা কর্তৃপক্ষ। পরে থানা থেকে ওই কিশোরীর ভাই নিখোঁজের জিডি তুলে নিলেও ওই কিশোরীকে গির্জা থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। বরং উল্টো সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়ে গির্জার প্রধান ফাদার প্যাট্রিক গমেজ ও সালিশি বৈঠকের প্রধান কামেল মার্ডি ওই কিশোরীকে গির্জায় বন্দি রেখেছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। পরে পুলিশ গিয়ে নির্যাতনের শিকার কিশোরীকে উদ্ধার করে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রতিনিয়ত কিশোরী, তরুণী ও নারীরা যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, আত্মহত্যা ও হত্যাসহ নৃশংস নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীর প্রতি বর্বর, লোমহর্ষক নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় আদিবাসী কিশোরীকে অপহরণ করে তিনদিন আটকে রেখে গির্জার ফাদার প্রদীপ ধর্ষণ ও গির্জায় বেআইনী সালিশ করে কিশোরীকে আটকে রাখার ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সেইসাথে সামাজিক অবক্ষয়, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে এই ধরণের অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য নারীর প্রতি বর্বর ও নৃশংস সহিংসতা এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে শূন্য সষ্ণিতার নীতি গ্রহণ সাপেক্ষে আশু কার্যকর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার, প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গির্জার ফাদার প্রদীপ কর্তৃক আদিবাসী কিশোরীকে তিনদিন আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহনসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে। নির্য্তানের শিকার কিশোরীর সুচিকিৎসাসহ তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছে। সেইসাথে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌনহয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে সকল সামাজিক শক্তিকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।