[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
এজি লাভলু, স্টাফ রিপোর্টার: দৃষ্টিভঙ্গির বদল ও পড়াশোনার চাপে এখন গ্রামের শিশুরাও কৃষি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। উৎপাদনের সঙ্গে এ বিচ্ছিন্নতা দূর করতেই চমকপ্রদ উদ্যোগ নিয়েছেন কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয় ভবনের ছাদে তৈরি করেছেন সবজির বাগান।
স¤প্রতি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনের ছাদে বস্তায় জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরে চাষ করা হয়েছে স্কোয়াশ, মরিচ, শসা ও মিষ্টি কুমড়া। ৯০টি বস্তায় রয়েছে এসব সবজির চারা। এরই মধ্যে স্কোয়াশ খাওয়ার উপযোগী হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্যাহ আল মামুন একার উদ্যোগে কাজটি করেছেন। শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় ছাদে এসে সবজির পরিচর্যা করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য শিক্ষকরাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা বেশ আনন্দের সঙ্গেই ছাদবাগানে কাজ করছে। পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী পার্থ সারথি বলল, আমরা স্যারের সঙ্গে টিফিনের সময় খেলাধুলার পাশাপাশি ছাদের সবজিতে পানি দিই। এখান থেকে শিখতে পারছি কিভাবে সবজি চাষ করা হয়। এখান থেকে শিখে অনেকেই বাড়িতে সবজির চারা লাগিয়েছি। শিশুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে কাজ করেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসমিনা খানম বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্যারের উদ্যোগে গড়া এ বাগানে আমরাও সহযোগিতা করছি। স্যারের সঙ্গে আমরা প্রতিদিন অবসর সময়ে সবজি ক্ষেতের দেখাশোনা করি। ভালোই লাগছে। আমরা চাই, আমাদের বিদ্যালয়ের এ সবজি চাষ দেখে অন্য বিদ্যালয়গুলোতেও এরকম শুরু হোক। ঠিক এমনটিই চান এ ছাদবাগানের উদ্যোক্তা তৈয়বখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্যাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাদি জমি কমছে। বিকল্প চিন্তা করা ছাড়া আর উপায় নেই। আমি অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে বিকল্প পন্থায় সবজি বা ফলমূল চাষের মডেল হিসেবে প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ের ছাদে সবজি চাষ শুরু করেছি। দেশের যেসব বিদ্যালয়ে পাকা ভবন আছে, সেখানে এভাবে সবজি চাষ করা যেতে পারে।
ছাদবাগানে উৎপাদিত সবজি দিয়ে দরিদ্র শিশুদের জন্য তরকারির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে প্রাপ্ত আয় দিয়ে তাদের শিক্ষা উপকরণ কিনে দেয়ার পরিকল্পনা আছে আব্দুল্যাহ আল মামুনের।
তৈয়বখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগটিকে খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন রাজারহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান। এ সফলতা দেখে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে, সেখানে ছাদকৃষি করতে মাসিক সভায় উপজেলার অন্য শিক্ষকদেরও পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই নিজের ইচ্ছা ও অর্থ ব্যয়ে এ ছোট উদ্যোগ অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা করেন শিক্ষক আব্দুল্যাহ আল মামুন। তিনি মনে করেন, বিদ্যালয়ের অব্যবহূত ছাদগুলো ব্যবহার করে সবজি চাষের আওতায় আনা গেলে শিক্ষার্থীরা ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হবে, পাশাপাশি দেশের প্রধান পেশা কৃষির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়বে।