[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন:
“কমিউনিটি ক্লিনিকের ২১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহীতাসহ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের তৃনমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণার প্রবর্তন করেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরেই দেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে তদানীন্তন মহকুমা ও থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্নকে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াসে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শুরুতেই আমরা প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে দেশব্যাপী মোট ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সেই আলোকে ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নে আমি দেশের সর্বপ্রথম ‘গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রতিষ্ঠা করে এর শুভ সূচনা করি এবং ২০০১ সালের মধ্যেই আমরা ১০ হাজার ৭ শত ২৩টি অবকাঠামো স্থাপনপূর্বক প্রায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করতে সমর্থ হই।
জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার মতো অন্যতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আমরা আবার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করি। নতুন নতুন ভবন নির্মাণের মাধ্যমে গত বারো বছরে মোট ১৩ হাজার ৮ শত ৮১টি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করেছি। আমরা ২০২২ সালের মধ্যে বাকি প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
কমিউনিটি ক্লিনিক সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বমূলক একটি কার্যক্রম। আমরা গত ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন’ প্রণয়ন করেছি। এসকল ক্লিনিক থেকে সারা দেশের প্রান্তিক জনপদ স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ে প্রাথমিক সেবাসমূহ পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসকল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ঔষধ ও স্বাস্থ্য-সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। পূর্বে ৫ শতাংশ জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো, দিন দিন সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৮ শতাংশ জমিতে চার-কক্ষ বিশিষ্ট নতুন নকশা’র কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য-তথ্য সংগ্রহের জন্য ১০৬টি উপজেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকসংলগ্ন এলাকার জন্য ৫/৭ জন করে মোট ২৪ হাজার মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার (এমএইচভি) নির্বাচন করা হয়েছে। ৯টি উপজেলার থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্যতথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি নাগরিকের জন্য হেলথ আইডি প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সারা দেশে হেলথ আইডি প্রদান করব। আমাদের সরকারের এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা দেশের সীমানা
পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা এমডিজি পুরস্কার, সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও গ্যাভি পুরস্কার এবং ভ্যাক্সিন হিরো পুরস্কারের মত অনেক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি।
কমিউনিটি কিøনিক একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। আমি এই প্রতিষ্ঠানটির টেকসই অগ্রযাত্রায় সকলের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গতবছরের ন্যায় এবছরও বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জনসমাগম না করে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাসহ কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় নিয়ম-কানুন মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে যাতে করে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে পারি এবং ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি। আমি বিশ্বাস করি এ ব্যাপারে কমিউনিটি ক্লিনিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
আমি কমিউনিটি ক্লিনিকের ২১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সকল কার্যক্রমের সাফল্য প্রত্যাশা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”