[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইন প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে গত২০ জুন শনিবার ২০২০ বিকাল ৪:০০টায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সংকটে- দুর্যোগে নারীর চ্যালেঞ্জঃ উত্তরণের পথ ও কবি সুফিয়া কামাল’- বিষয়ক প্যানেল আলোচনা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতে প্রয়াত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং ভাষাসৈনিক জনাব কামাল লোহানীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এরপর সুফিয়া কামালকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত ও সংগীত শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন এই উপমহাদেশের বিশিষ্ট নারীবাদী, চিন্তক, দার্শনিক ও নারী মুক্তির আন্দোলনের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের যোগ্য উত্তরসূরি কবি সুফিয়া কামাল সবসময়ই একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন যেকোনো দূর্যোগে সংকটে আগামী দিনের পথ চলার জন্য আমরা তার দেখানো পথই অনুসরণ করি। করোনা সংকট মোকাবিলায় তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ও জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের এই জন্মদিনটি কেবল একটি অনুষ্ঠান পালন নয় বরং শতাব্দীব্যাপী তাঁর ব্যাপৃত জীবনের বিভিন্ন দিক আলোচনা করে সেটি থেকে আমরা নতুন পাঠ গ্রহণ করি এবং সংগঠনের জন্য আগামী দিনের কর্মসূচী গ্রহণ করি। আজকের আলোচনার মাধ্যমে করোনাকালে ও পরবর্তী সময়ে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে, সাহস নিয়ে আগামীতে পথ চলার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল নারী আন্দোলন সহ সকল অধিকার আদায়ের আন্দোলনে , অসাম্প্রদায়িক ও সমতা পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। যেকোনো সংকটে তিনি পথ প্রদর্শক হয়ে আমাদের সাহস যুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের আলোর পথ দেখাবেন তিনি আজীবন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সমাজে নারীর অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত/চিহ্নিত হয় সেই সমাজ সভ্যতা কতটুকু সভ্য। সেই নিরিখে বর্তমান সংকটে নারীর অবস্থান বা ভূামকা বিশ্লেষন করে তিনি বলেন কোভিড সংকট এই বৈষম্যকে আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। নারীরা যেহেতু সবসময় সংকটে থাকেন এবং একটি নাজুক অবস্থায় থাকেন সেটি আরো প্রকট হয়ে ওঠে আর তার প্রায়শ্চিত্ত নারীকেই করতে হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে, চাকুরীহারানোয় নারীর উপার্জন বন্ধ হওয়ার ফলে একটি বিরাট অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়বেন নারী ও তার পরিবার। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রকে সকলের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল মৌলিক অধিকার আইন বলবৎ করে নিশ্চিত করার দাবি জানান। দাবি আদায়ে কবি সুফিয়া কামালের অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথ দেখিয়েছেন তিনি, যা আজকের মানবাধিকার আন্দোলনের পথ প্রদর্শক হয়ে থাকবে।
উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, কোভিড-১৯ এর কারনে বিভিন্ন েশ্রণীর নারীর উপর সৃষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক, স্বাস্থ্যগত দিক, পারিবারিক সহিংসতা ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা দিকসমূহ তুলে ধরে তিনি বলেন উন্নয়নের কিছু জায়গায় নারীরা যে কিছুটা শক্ত হয়ে দাড়িয়েছিল তা আজ ভঙ্গুর। একবিংশ শতাব্দীর নারীর সংকট ও চ্যালেঞ্জগুলো বহুমুখী রূপ ধারন করেছে। সংকটময় সময়ে জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানবিক সমাজ ও সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, নারীদের কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে, নিজ অস্তিত্বের ডাক শোনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যা নারীদের বর্তমান সংকট দূরীকরণে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়। সুফিয়া কামালের নারীবাদী দর্শনকে কাজে লাগিয়েই আমাদের সামনের পথ পাড়ি দিতে হবে।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাত সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন।


























