[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
বিশেষ প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত হতে ছাত্র- ছাত্রীসহ স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দকে রক্ষার জন্য সুদীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশের সকল স্কুল-কলেজগুলো খুলে দেয়া হয়।
সারাদেশের স্কুলগুলোর ন্যায় ১৮৫৩ সালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জিলা স্কুলও সেদিন থেকে খুলে দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসরুমে প্রবেশ, শিক্ষা দান এবং ক্লাস শেষে আবার সাবান পানিতে হাত ধুয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারে, এ জন্য ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহসিনা খাতুনের নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এবং কর্মচারীদেরকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে পরিশ্রম করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলটিকে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের উপযোগী করে তোলেন।
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের শিক্ষক- কর্মচারীদের এই মহতী কার্যক্রমে আরেকটু সহযোগিতা প্রদান করে মানবিকতার আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ” ময়মনসিংহ জিলা স্কুল -১৯৭৪ (এমজেডএস-৭৪) ” ব্যাচের কিছু প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ।তাদের মাঝে অনেকেই বর্তমানে সফল চাকুরী জীবন শেষ করে অবসর জীবন যাপন করছেন। অনেকেই দেশে-বিদেশে থেকে দেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছেন।
তাঁরা সকলে মিলে ” এমজেডএস-৭৪” নামক সংগঠনের ব্যানারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুদান প্রদানের মাধ্যমে একটি তহবিল গঠন করেন এবং ব্যাংকে জমাকৃত এই তহবিলের ত্রৈমাসিক/ ষান্মাসিক / বাৎসরিক লাভ্যাংশ দিয়ে তাঁদের প্রিয় স্কুল ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের জন্য কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদেরকে বৃত্তি প্রদান, বৃদ্ধ বয়সে কোন সদস্য বা মৃত্যু জনিত কারণে কোন সদস্যের পরিবার আর্থিক সংকটে পতিত হলে সেক্ষেত্রে উক্ত সদস্যের পরিবারকে এককালীন বা দীর্ঘ মেয়াদি আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ধরণের মানবিক কর্মকান্ডসমুহ প্রতিনিয়তই নীরবে – নিভৃতে করে যাচ্ছে ” এম.জেড.এস-৭৪ ব্যাচ”-এর প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ।
সম্প্রতি এমনি আর একটি মহতী উদ্যোগ হচ্ছে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্রদের জন্য হাত ধোয়ার স্ট্যান্ড নির্মাণ করে দেয়া। স্কুলের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকে হাতের বাম দিকেই স্কুলের ক্লাস রুমে উঠার পূর্ব মুহূর্তে দক্ষিণ -পূর্ব কোনায় খালি জায়গায় অর্ধ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ০৪ টি বেসিনে ৪টি এসএস এর কল লাগিয়ে লাল রঙের টাইলসে মোজাইককৃত একটি সুন্দর ও আধুনিক হাত ধোয়ার স্থান নির্মান করে দেয়া হয়েছে। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলের ক্লাসরুমে ঢোকার পূর্ব মুহূর্তে এবং স্কুল ছুটি শেষে পুনরায় সাবানপানি দিয়ে হাত ধুয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারবে।
এতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত হতে ছাত্রদেরকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অনেকাংশেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। স্কুল খোলার আগের দিন ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সকাল ১১. ০০ ঘটি শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার স্থানটি উদ্বোধন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আবু নূর মোঃ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী এবং জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রাজীব কুমার সরকার, সচিব, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মোহছিনা খাতুন, সহকারী প্রধান শিক্ষক মাজেদা হোসেন, সহকারী ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষকবৃন্দ। আর সেই সাথে ‘এমজেডএস-৭৪’ ফোরামের সদস্য ডাঃ মোঃ মোতাহার হোসেন, মাহবুবুল হক ভুলু, আব্দুল্লাহ আল মনসুর ফারুক, আব্দুল্লাহেল বাকী, লুৎফর রহমান ফরহাদ, জসীমউদ্দিন সরকার রঞ্জু, এডভোকেট মাহবুবুল আলম ফরিদ, মেজবাহ উদ্দিন সরকার, দন্ত চিকিৎসক মোঃ গোলাম কিবরিয়া, ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক’ প্রাপ্ত কৃষিবিদ শেখ মোঃ মুজাহিদ নোমানী রুবেল, বিশিষ্ট আইসিটি ব্যবসায়ী মোঃ মোখলেছুর রহমান মামুনসহ ময়মনসিংহের স্থানীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ।
উদ্বোধন শেষে প্রধান শিক্ষিকার দপ্তরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাকালে রাজীব কুমার সরকার বলেন আমাদের প্রাক্তন ও বর্তমান সময়ের ছাত্রদেরকে নিয়ে ” ময়মনসিংহ জিলা স্কুল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন” করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে পুনর্মিলণীর পাশাপাশি দেশের ও সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন জনহিতকর এবং মানবিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ডাঃ মো.মোতাহার হোসেন ‘এমজেডএস-৭৪’-এর পক্ষ হতে জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলের সকল শিক্ষক- কর্মচারীবৃন্দকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এই মহতী কাজের অংশীদার হওয়ার সুযোগ দানের জন্য।
ডা. মোতাহার হোসেন সকল সদস্যবৃন্দের পক্ষে খুব শীঘ্রই জিলা স্কুলের সম্মুখের খেলার মাঠের পশ্চিম প্রান্তে একটি আকষর্ণীয় ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড নিমার্ণ করে দেয়ার জন্য একটি খসড়া ডিজাইন দেখার ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন। প্রধান শিক্ষক মহোদয় অত্যন্ত আনন্দের সাথে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এবং খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সাথে আলোচনা করে জানাবেন বলে মতামত প্রদান করেন।
অপর সম্মানিত প্রধান অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক আবু নূর মোঃ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী “এমজেডএস-৭৪ “-এর এই মহতী উদ্যোগের জন্য সকল সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে “এমজেডএস-৭৪” ব্যাচের অপর কৃতি সদস্য ” বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক”প্রাপ্ত কৃষি সাংবাদিক, লেখক, উদ্ভাবক এবং অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার কৃষিবিদ শেখ মোঃ মুজাহিদ নোমানী স্কুলের কোমলমতি ছাত্রদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বর্নাঢ্যময় জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমুহ নিয়ে লিখিত স্বরচিত কবিতা ‘এক মহানায়কের অমর কীর্তিগাঁথা’ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ইতিহাস নিয়ে লিখিত ‘অদম্য এক বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরেকটি মোট দুটি স্বরচিত কবিতার ফেষ্টুন উপহার হিসেবে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ও ‘এমজেডএস-৭৪’ সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষিকার হাতে তুলে দেন।
এজন্য প্রধান শিক্ষিকা মহোদয় জনাব মুজাহিদ নোমানীকে ধন্যবাদ জানান এবং সকলকে চা-চক্রে আপ্যায়ন করেন।