[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তাঁর মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার।
গত ২৩ এপ্রিল তার মা মাহমুদ খানম (৭৫) মারা যান। এর আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ১৪ এপ্রিল তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর তাঁকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার কম্বোডিয়া থেকে টেলিফোনে গণমাধ্যমকে জানান, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবারে আমরা তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। পরিবারের সদস্যরা আমার মায়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলছেন। আম্মার মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি সিনিয়র ডাক্তার, মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছেন, এটা একটা হত্যাকাণ্ড।
ডা. জিয়া জানান, গত ৫ এপ্রিল তাঁর মায়ের মারাত্মক নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তবে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। সেই সনদসহ ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হয়। কারণ তার রক্তে তখন অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৫০ শতাংশেরও কম, যা একজনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। রক্তে অক্সিজেনের স্তর ৯০ শতাংশের নিচে নামলেই অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। মূলত উনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
তিনি বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ এপ্রিল আমার ভাইদের ডেকে বলে, আম্মার দ্বিতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষাটি পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবং তাকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানত যদি ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তবে আম্মা অপরিবর্তনীয় মস্তিষ্কের ক্ষতিতে ভুগবেন ও মৃত্যুবরণ করবেন। আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং কিছু বন্ধুবান্ধব অনুরোধ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আম্মাকে রিলিজ করে দেয়।
এরপর কোনো মোবাইল ভেন্টিলেটরের সুবিধা ছাড়াই আম্মাকে ওখান থেকে কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এতে তাঁর মস্তিষ্কের যে ড্যামেজ হয়েছে তা আর কাটিয়ে ওঠা ওনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। উনি গভীর কোমায় চলে যান। ২৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে চারটায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে ডা. জিয়া জানান, মৃত্যুর পর আম্মার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল জমাট বাঁধা রক্ত। আমার যেসব বোন আম্মার দাফন-কাফনের সাথে জড়িত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কাছে শুনেছি, দু-দুটো কাফনের কাপড় রক্তে ভিজে গেছে। মৃত্যু-সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা ছিল ‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া’। সাথে হয়তোবা আরেকটি কারণ থাকতে পারে- কোভিড-১৯ পজিটিভ।
‘হয়তো’- শব্দটা ব্যবহার করলাম, কারণ ২০ এপ্রিল সংগৃহীত নমুনা অনুযায়ী আম্মা কোভিড-১৯ নেগেটিভ ছিলেন। এখন আমার প্রশ্ন হলো- কোনো রোগী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলে ওনার শরীর থেকে এতোটা রক্তক্ষরণ কেন হলো? এত রক্ত কোথা থেকে এলো যে দু-দুটো কাফনের কাপড় ভিজে গেল?
ডা. জিয়া বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ভেন্টিলেটর খুলে দেওয়ার জন্য এবং যথাযথ অক্সিজেন ব্যবস্থায় আম্মাকে পরিবহন না করার জন্য ওনার মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ফলশ্রুতিতে উনি চলে যান গভীর কোমায়। এর সাথে যোগ হয়েছিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-আয়ার ভীতি, অমনোযোগিতা, অপ্রতুলতা আর অদক্ষতা এবং ঘায়ের মাধ্যমে (শুয়ে থাকতে থাকতে তার পিঠে ঘা হয়েছিল) সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়া ‘সেপসিস’, যা খুব দ্রুত আম্মার হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও ইউনাইটেড হাসপাতালের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।