আমার ‘কোভিড’ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

বৃহস্পতিবার, জুলাই ৯, ২০২০,৬:৩৪ অপরাহ্ণ
0
190

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

ডা. সৈয়দ গোলাম মোগনি মাওলা

আমি ডাঃ সৈয়দ গোলাম মোগনি মাওলা। পেশাগত পরিচয় সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ। বংশগত পরিচয়, আমি চিশতীনগরের সুমহান প্রতিষ্ঠাতা হযরত শামপুরী ক্বেবলা (রাঃ)’র প্রপৌত্র, বর্তমান সাজ্জাদানশীন হযরতের দ্বিতীয় সন্তান। এই দুই প্রথাগত পরিচয়ের বাইরে আরেকটি পরিচয় বিধাতা আমাকে দান করেছেন যা শুধুমাত্র মানবকল্যাণমুখিতার অসাধারণ দীপ্তিতে প্রৌজ্জ্বল।

আমি চিশতীনগর জনকল্যাণ প্রকল্পের স্বাস্থ্য বিভাগের অবৈতনিক অনারেরি পরিচালক। এবং এই পরিচয়ের গণ্ডিতে আমার দায়িত্ব সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে দারিদ্রপীড়িত রোগাক্রান্ত মানুষের সেবায় আমার পেশাগত যোগ্যতাকে ব্যবহার করা। এই তিনটি পরিচয়ের সংমিশ্রিত শক্তি আমাকে জীবনের এক উত্তপ্ত ও বিক্ষুব্ধ সময়ের মুখোমুখি হয়ে সাফল্য নিয়ে ঘরে ফেরার যোগ্যতা দান করেছে। অবশ্যই এই সবকিছুর মহা নিয়ন্ত্রক মহানতম বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আমার পৃথিবীতে আগমন। এই বিক্ষুব্ধ সময়ের সাথে সংগ্রামে আমি পুরোপুরি একজন মুক্তিযোদ্ধার অকুতোভয় শক্তিকে আমার চেতনায় ধারণ করেছি। আমি সে যুদ্ধের কথা বলব।

যুদ্ধাক্রান্ত গোটা বিশ্ব। COVID-19 (কোভিড-১৯) নামের মরণব্যাধি গোটা বিশ্বের মানুষকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমার প্রিয় মাতৃভূমির সকল মানুষ সে মরণব্যাধির চরম আঘাতের সামনে দাঁড়িয়ে। পেশাগত ডাক এলো, রুখে দাঁড়াও! দাঁড়িয়ে পড়লাম মারণাঘাত প্রতিহত করার দায়িত্ব নিয়ে। আমার পেশাগত কর্মক্ষেত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগটি রূপান্তরিত হল মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ চিকিৎসার বিশেষ ইউনিট হিসেবে। ডাক এলো, যুদ্ধে নেমে পড়। আমি তথা আমরা মুক্তিযুদ্ধের ডাক শুনলাম এবং ঝাঁপিয়ে পড়লাম। মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দেশ স্বাধীন করতে। আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হলাম দেশের মানুষকে কোভিডের মারণাঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। প্রথম সারির অকুতোভয় অনুজ মেডিকেল অফিসার, চিকিৎসকবৃন্দ, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ, হাসপাতাল পরিচালক এবং মেডিসিন বিভাগের প্রধানের অভিভাবকত্বে রচিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের সাফল্যমণ্ডিত চিকিৎসার এই বীরত্বগাঁথা। নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়া এই যোদ্ধাদের একজন হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

সরাসরি চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশের করোনা রোগ চিকিৎসার জাতীয় গাইড লাইন প্রণয়নে আমি অংশ নিয়েছি। ‘ফেভিপিরাভির’-ঔষধটি আমাদের রোগীদের উপর কেমন কার্যকর তার বৈজ্ঞানিক গবেষণা দলের আমিও একজন সদস্য, যার ফলাফল গত ৮ই জুলাই, ২০২০ইং ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে সাংবাদিকদের সম্মুখে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আমি পরিবেশন করি।

পীরজাদা প্রকৌশলী সৈয়দ গোলাম মুরসালিনের অসাধারণ নেতৃত্বে চিশতী নগর জনকল্যাণ প্রকল্পের আয়োজনে এই মহামারীকালীন সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের চলমান কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণও আমার জীবন অভিজ্ঞতার এক উজ্জ্বল মাইলফলক হয়ে থাকবে। এমনিভাবে সকলস্তরের স্বাস্থ্যসেবাকর্মী আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নিজের সর্বোচ্চ সেবাটি বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করতে চাইছি।

পুলিশ, সাংবাদিক, প্রশাসন এমনি সকল সেবাখাতের কর্মীবৃন্দও এই ব্রতেই উজ্জীবিত। এ লেখনি যেন আত্মপ্রচার না হয়, বরং হয়ে ওঠে সকলের অনুপ্রেরণা। একজন মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা অবশ্যই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থানে অধিষ্ঠিত। তাঁদের তুলনা তাঁরাই। তাঁদের চেতনাকে ধারণ করেই কোভিড যুদ্ধে অংশগ্রহণে আমি সমর্থ হয়েছি এটাই আমার এই প্রতিবেদনের মর্মকথা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন
অনারেরি পরিচালক, চিশতীনগর জনকল্যাণ প্রকল্প (স্বাস্থ্য বিভাগ)

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে